দেশজুড়ে

বিল চাষাবাদের উপযোগী করায় আজিজুরকে সংবর্ধনা

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার শত বছরের অনাবাদি মানুষমারি বিলে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। ঘন কলমিকচা আর বন জঙ্গল সাফ করে সেখানে ফসল ফলিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন কৃষক। আর এ কাজের জন্য কৃষক আজিজুরকে সংবর্ধনা প্রদান করেছে উলাসী সৃজনী সংঘ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।সূত্র জানায়, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার মানুষমারি বিলের মধ্যভাগে প্রায় সাড়ে ৭শ’ বিঘা জমি কয়েকশ’ বছর ধরে অনাবাদি পড়েছিল। ঘন কলমি কচা ও কচুরিপানার কারণে সাপ ও ইঁদুরের আবাসভূমি ছিল সেটি। সাপের ভয়ে মানুষ ওই বিলে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল। এ বিল আবাদের উপযোগী করার জন্য বাংলাদেশের বিল বাঁচাও আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির প্রধান সংগঠন উলাসী সৃজনী সংঘ এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। যশোরের জেলা প্রশাসক, বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংস্থার সরকারি কর্মকর্তারা কয়েকবার বিল পরিদর্শনও করেন। কিন্তু তারপরও বিলে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।এরই মধ্যে উপজেলার দাদপুর গ্রামের কৃষক আজিজুরের নেতৃত্বে তার ভাই মনিরুল ও একই এলাকার কৃষক মিনহাজ, আলতাফ মানুষমারি বিলের কলমি কচা ভেঙে জমি আবাদী করার প্রচেষ্টা শুরু করেন। প্রায় এক বছর চেষ্টা করে শত শত সাপ, ইঁদুরসহ ক্ষতিকর প্রাণী মেরে ও তাড়িয়ে জমির উপর পাঁচ থেকে ১০ হাত পুরু কলমিকচার স্তুপ পরিষ্কার করেন। পরিত্যক্ত মানুষমারি বিলের সাড়ে ৭শ বিঘার মধ্যে ৪০ বিঘার মত জমি আবাদি হয়।কৃষক আজিজুর জানান, কলমিকচা ভেঙে পরিস্কার করা ৪০ বিঘার মধ্যে ১৬ বিঘা জমিতে ধান ও ২২ বিঘা জমিতে শাক সবজি চাষ করেন। এর মধ্যে ১৬ বিঘা জমিতে তিনি প্রায় ৪শ মণ ধান উৎপাদন করেছেন। শাক-সবজিও হয়েছে কয়েকশ মণ।কৃষক আজিজুর ও তার ছোট ভাই মনিরুল জানান, দেশের কল্যাণে স্বেচ্ছায় তারা অনাবাদি বিলকে আবাদের উপযোগী করেছেন। এখন তাদের প্রত্যাশা গ্রামের আরও মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গোটা বিলকেই চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসবেন।এদিকে, অনাবাদি মানুষমারি বিলে আবাদের সূচনা করায় কৃষক আজিজুরকে সংবর্ধনা প্রদান করেছে উলাসী সৃজনী সংঘ। সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভদ্রডাঙ্গা বাজারে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন উলাসী সৃজনী সংঘের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আজিজুল হক মনি, দৈনিক সমাজের কথার বার্তা সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, অধ্যাপক আবু সাঈদ, উলাসী সৃজনী সংঘের সমন্বয়কারী রাজিয়া সুলতানা, গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের কর্মকর্তা শাহজাহান সাজু, স্কুল শিক্ষক ইসহাক আলী, জামশেদ মোল্লা, ইকবাল হোসেন, নাজমুস সাকিব আপন প্রমুখ।উলাসী সৃজনী সংঘের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আজিজুল হক মনি জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে মানুষমারি বিলকে চাষাবাদের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের প্রচারণা ও কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কৃষক আজিজুরের নেতৃত্বে এই অসাধ্য সাধিত হয়েছে। এজন্য তাকে তারা সংবর্ধনা প্রদান করছেন।মিলন রহমান/এসএস

Advertisement