জাতীয়

লকডাউনে সহকারী সচিবের বিনামূল্যের বৃক্ষচাষ, দৃষ্টি কেড়েছে সবার

ভয়াবহ করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটির মধ্যে বেশিরভাগ লোকজন কার্যত ঘরবন্দি জীবনযাপন করলেও কেউ কেউ বসে নেই। তেমনি একজন সংসদ সচিবালয়ের সহকারী সচিব এবিএম বিল্লাল হোসেন। বিনামূল্যে নানা জাতের ফল, ফুল, সবজি ও ভেষজ গাছের চারা বিলি করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

এজন্য তিনি বেছে নিয়েছেন ঢাকার অদূরে আশুলিয়া এলাকাকে। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে রাজধানীর সরকারি বাসা ছেড়ে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। সেখানে ৬০ প্রজাতির ফলমূলের গাছ ও ১০ প্রজাতির ভেষজসহ শত শত গাছ লাগানো, কলম করা থেকে শুরু করে পরিচর্যা করে যাচ্ছেন সংসদ সচিবালয়ের এই সহকারী সচিব। তার উদ্দেশ্য বিনামূল্যে ছাদ বাগানিদের এসব গাছের চারা উপহার দেবেন তিনি। তার এ বৃক্ষপ্রীতির জন্য একজন বিনামূল্যে তাকে সেখানে চারা তৈরির সুযোগ দিয়েছেন। সেখানে অন্যান্য ফলদ ও ঔষধি গাছের সঙ্গে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত গুরমার বটি, কিডনিপ্ল্যান্ট, সবচেয়ে দামি মরিচ চারাপিটা এসব ভেষজ গাছ তৈরি করছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে. গ্রীন বাংলাদেশ (Green Bangladesh) নামের ফেসবুকভিক্তিক গ্রুপের মাধ্যমে এসব গাছ বিতরণ করা হয়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গাছ বিনিময়ের আসর বসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কামাল উদ্দিন আহমদও এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত। সেখানে ‘এক ঘণ্টার স্কুলিং’ নামে এক ঘণ্টার একটি সেশন হয়। এর বর্তমান নাম ‘উন্মুক্ত কৃষি পাঠশালা’। সেখানে শহরে সবুজায়ন, বায়ুদূষণ রোধ, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প উৎস তৈরি, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, গাছের রোগ ও এর প্রতিকার এসব নিয়ে আলোচনা হয়। ঢাকার বাইরে থেকেও বৃক্ষপ্রেমীরা যোগ দেন সেখানে।

সহকারী সচিব এবিএম বিল্লাল হোসেন টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, এক ইঞ্চি জায়গাও যেন খালি না থাকে। আমরা শুরু থেকেই শহরের খালি জায়গা, ছাদ, বেলকনি এসবকে টার্গেট করে কাজ করছি।’

Advertisement

তিনি বলেন, শহুরে সমাজের সচেতন অংশের অনেকেই ছাদবাগান করেন। তাদের অর্গানিক চাষ পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যের সরবরাহ এ ছাদকৃষি থেকেই সম্ভব। এজন্য আমরা বিনামূল্যে বৃক্ষ বিতরণ করি। লকডাউনের সময়টাকে এ কাজে লাগাচ্ছি। আমার জানামতে, এই প্রথম কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের কোনো গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে যুক্ত হয়ে উন্মুক্ত কৃষি পাঠশালা পরিচালনা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীতে পাখি, প্রজাপতি, মৌমাছি নেই। সজীবতা নেই। দেশের সব শহরে যদি শতভাগ ছাদকৃষি করা যায়, তাহলে জীববৈচিত্র্যের জন্য তা হবে আর্শীবাদ।’

গাছের চারা তৈরির জন্য সহকারী সচিব এবিএম বিল্লাল হোসেনকে আশুলিয়ায় জায়গাটা দিয়েছেন ধানমন্ডির অধিবাসী সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া ডা. ফেরদৌস আরা চৌধুরী। তিনিও নিয়মিত এই বৃক্ষবিনিময়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

তিনি জাগো নিউজে বলেন, ‘এটা থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের উপকার পাই। এটি আমাদের জন্য নির্মল চিত্তবিনোদনের জায়গাও। সেখানে বয়স্ক থেকে টিনেজাররা যান। এতে সবার মধ্যে একটা যোগাযোগ গড়ে ওঠে। আগে আমরা বাড়তি সব কিছু ফেলে দিতাম। এখন সেটা অন্যকে দিচ্ছি। এ সময়ের যুব সম্প্রদায় ভার্চ্যুয়ালের দিকে ঝুঁকে গেছে তারাও আগ্রহ দেখাচ্ছে। গাছকে ভালোবেসে আনন্দ পাচ্ছে।’

Advertisement

নরসিংদীর জামান শিকদার বলেন, এমন উদ্যোগের মাধ্যমে আমি এখন বিষমুক্ত শাকসবজি খেতে পারছি। এর মাধ্যমে বিনামূল্যে ব্ল্যাকবেরি ও সাচিপানের চারাসহ অনেক দুর্লভ গাছ তিনি পেয়েছেন বলে জানান।

পুরান ঢাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লায়ন সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে ছাদকৃষির স্বীকৃতি নেই। এর বস্তু সম্পদ স্বীকৃত নয়। এ নিয়ে সরকারের নীতিমালা প্রয়োজন। এটি কার অধীনে থাকবে, তাও ঠিক করা দরকার। যৌথ মালিকানার ছাদে কীভাবে ছাদকৃষি হবে, তার জন্য নির্দেশনা থাকলে ভালো হয়।’

এইচএস/এসআর/এমএস