বিচার বঞ্চিত হলো ধর্ষণের শিকার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সেই ছাত্রী। চাপের মুখে ওই ছাত্রী অভিযোগ তুলে নেয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজ আল হাসানকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। তবে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে ওই শিক্ষক-ছাত্রীর অন্তরঙ্গ ও আপত্তিকর ছবি। এ কারণে আদালত মামলার নিস্পত্তি করলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যবিপ্রবির পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি মেহেরপুর জেলায়। তিনি যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। আর ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আল হাসান থাকেন শহরের পুরাতন কসবা ঘোষপাড়া জামে মসজিদের পেছনে। শিক্ষক-ছাত্রীর সম্পর্কের সূত্র ধরে ওই ছাত্রীর বাড়িতে যাতায়াত করতেন তিনি। ওই ছাত্রীর দায়েরকৃত মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শিক্ষক মাহফুজ ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে যান। তাকে প্রশ্নপত্র দেয়া এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে তিনি ওই বাড়িতে যেতেন এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন।মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাহফুজ তার বাড়িতে যান এবং সে সময় ওই শিক্ষার্থী তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। গত ১৫ জুন ফের ওই বাড়িতে গেলে ওই শিক্ষার্থী আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু বিয়েতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ওই ছাত্রীকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনার পর ১৯ জুন মামলা করেন ওই শিক্ষার্থী। মামলার পর ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, মামলা করার পর অব্যাহত চাপ ও হুমকির মুখে বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হন। আর পুলিশও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর গত ১১ অক্টোবর আদালত ধর্ষণের অভিযোগ থেকে ওই শিক্ষককে অব্যাহতি দেন। অব্যাহতি পেয়ে শিক্ষক মাহফুজ আল হাসান ১৯ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ তুলে নেয়ার জন্য যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছেন। তবে মামলার নিস্পত্তি হলেও ওই শিক্ষক-ছাত্রীর আপত্তিকর ও অন্তরঙ্গ মুহূর্তের অসংখ্য ছবি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। এ কারণে ওই শিক্ষক নিয়েও নানা মন্তব্য ও সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, ওই শিক্ষার্থী মামলার আগে গত এপ্রিল মাসে শিক্ষক মাহফুজের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনা তদন্তে সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটিতে আছেন, প্রফেসর ড. ইকবাল কবির জাহিদ, প্রফেসর ড. সেলিনা বেগম এবং প্রফেসর ড. মীর মোশারফ হোসেন। তবে প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এই কমিটি এখনও কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. ইকবাল কবির জাহিদ জানান, তাদের তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যদিও ওই ছাত্রীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত আদালতের মামলাটি নিস্পত্তি হয়েছে। তবে ওই ছাত্রী-শিক্ষকের কথোপকথন এবং ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তারা পেয়েছেন। এগুলোর সত্যতা যাচাই বাছাই করতে তাদের সময় লাগছে। আবার তদন্তের স্বার্থে অনেক তথ্য উপাত্ত হাতে পেতে অনেক সময় লেগেছে এ সকল কারণেই তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হয়েছে। তবে তারা চেষ্টা করছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে। মিলন রহমান/এসএস/আরআইপি
Advertisement