মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে জীবন ও জীবিকা নিয়ে সবাই আতঙ্কিত ও চিন্তিত। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছন্দপতন ঘটেছে অনেকের সংসারের। এমন এক পরিস্থিতিতে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। খুশির ঈদ দেখা দিয়েছে নিরানন্দভাবে।
Advertisement
মহামারির এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কষ্টে থাকা দরিদ্র মানুষগুলোর কষ্ট আরও বেড়েছে। ঈদে আনন্দ করাতো দূরে থাক, জীবন বাঁচানোর জন্য খাবার জোগাড় করতে ব্যস্ত তারা। তাইতো ঈদের দিনও দরিদ্র মানুষগুলো সাহায্যের আশায় ছুটছেন মসজিদে মসজিদে।
মলিন পোশাকে অনেকেই ধুলাময় রাস্তায় বসে সাহায্যের আশায় হাত পাতছেন। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাস তাদের সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নিম্ন-মধ্যবিত্তের আয় কমে যাওয়ায় তাদের সাহায্যের পরিমাণও কমেছে।
রামপুরা সালামবাগ মসজিদের পাশের রাস্তায় বসে সাহায্যের জন্য হাত পাতা প্রতিবন্ধী শরিফ বলেন, ঈদের আনন্দ আমাদের জন্য না। প্রতিদিন মুখে দুমুঠো ভাত তুলতে পারলেই আমরা খুশি। তাইতো ঈদের দিন সাহায্যের আশায় হাত পেতে বসে আছি।
Advertisement
তিনি বলেন, পা না থাকায় আমি কাজ করে খেতে পারি না। মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে যা পাই তা দিয়েই জীবন চালাই। করোনাভাইরাস আমাদের মুখের ভাতও কেড়ে নিচ্ছে। আগে প্রতি শুক্রবার ভালো সাহায্য পেতাম। কিন্তু এখন শুক্রবারের মসজিদে মানুষ কম আসে। আমাদেরও সাহায্য পাওয়ার পরিমাণ কমে গেছে। আজ ঈদের দিন ভেবেছিলাম ভালো সাহায্য পাব। কিন্তু সাধারণত শুক্রবার যে সাহায্য পেতাম আজ তাও হয়নি।
অসুস্থ ছোট বাচ্চা নিয়ে সাহায্যের আশায় থাকা আমেনা বলেন, ওর বাবা নেই। ছেলেটাও অসুস্থ। ছেলের চিকিৎসা করাব সে সামর্থ্য আমার নেই। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই তা দিয়েই মা-ছেলে কোনোরকমে বেঁচে আছি। তিনি বললেন, থাকার জন্য আমাদের কোনো ঘর নেই। রাতে রাস্তায় ঘুমাই।
শরীফ নামের আরেকজন বলেন, ‘আল্লাহ যেন আমাদের মতো কারো জীবন না দেয়। অনেকে ভাবে ভিক্ষা করা আমাদের স্বভাব এবং অনেক টাকা আয় করি। কিন্তু মানুষের কাছে হাত পাতা যে কী কষ্টের তা কাউকে বোঝানো যাবে না। ঈদের দিন রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়ে সাহায্যের জন্য হাত পাতছি। সামর্থ্যবানরা সাহায্য করলে তবেই আমাদের মুখে ভাত উঠবে।’
তিনি বলেন, ‘ভিক্ষা করে আগে ভালোই আয় হতো। না খেয়ে থাকা লাগত না। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের আয় কমে গেছে। আগে যারা সাহায্য করতেন, এখন তাদের অনেকেরই আয় নেই। তাহলে সাহায্য করবেন কী করে? সরকার থেকেও আমরা কোনো সাহায্য পাই না। আমরা পথের মানুষ, আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না। রাস্তা দিয়ে মানুষ যাওয়ার সময় যা দেয় তা দিয়েই আমাদের জীবন চলে।’
Advertisement
এমএএস/এসআর/এমএস