করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় কেটেছে রমজান মাস। এই ক্রান্তিলগ্নেও আকাশে উঠেছে ঈদের চাঁদ। কিন্তু যারা দিন এনে দিন খান তাদের জন্য আকাশের চাঁদ নতুন কিছু নয়। সেটা ঈদের হোক আর স্বাভাবিকই হোক। করোনার দাপটে সব ম্লান হয়ে গেছে।
Advertisement
এমন মানুষগুলোর দুঃখকে তুলে ধরতে লক্ষ্মীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর-রামগঞ্জ সার্কেল) স্পীনা রানী প্রামাণিক তার ফেসবুকে লিখেছেন, ওদের জীবনে চাঁদ উঠুক, না উঠুক, কাল ঈদ। ওরা ভাইরাস বোঝে না, সামাজিক দূরত্ব বোঝে না। ওরা শুধু স্রষ্টা প্রদত্ত সব থেকে কঠিনতম জৈবিক সংকেত বোঝে। যার নাম ক্ষুধা।
শনিবার (২৪ মে) বিকেলে অসহায় মানুষগুলোর সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির প্রয়াসে রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ-হাজিমারা বেড়িবাঁধ এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে উপহার পৌঁছে দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সারাদিনের ক্লান্তি আর কর্মব্যস্ততা শেষে সমাজের অবহেলিত মানুষগুলোর দুঃখকে হাসিতে রূপান্তর করার চেষ্টায় তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সাহিত্যিকের মত তুলে ধরেছেন স্পীনা রাণী প্রামাণিক। তার লেখাটি জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
Advertisement
‘হায়দরগঞ্জ-হাজীমারা বেড়িবাঁধ। সিঁথিকাটা সরু পথ। দু’ধারে সারি বেঁধে খোকসা- সুপারি-নারকেলের অবারিত বসবাস। আর সেই আদিগন্ত সবুজকে অপূর্ব মায়ায় জড়িয়ে ধরে যেন অলংকার পরিয়েছে হেমাবরণ ‘স্বর্ণলতা’! সৌন্দর্যের দ্যূতি ছড়ায় বলে অনেকে একে ডাকে ‘আলোক-লতা’ নামে।
পথ পেরোলেই নিস্তরঙ্গ খাল। ঘাটে বাঁধা বেশ কটি নৌকা, কী সব বাহারি নাম ওদের- গয়না, কোষা, পানসি, বাচারি, পাতাম, এমনকি দেখা মিললো একখানা ঘাসিও। এই যান্ত্রিক যুগে আমরা অবশ্য সবগুলোকেই ‘শ্যালো নৌকা’ নামে চালিয়ে দেই। কী নয়নাভিরাম দৃশ্য! আ হা, আ'মরি বাংলাদেশ।
কিন্তু একটু খুঁটিয়ে দেখলেই এই আপদমস্তক, শ্যামলে শ্যামল তুমি নীলিমায় নীল' নামক সৌন্দর্যের মোড়ক ছিঁড়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, কঠোর দারিদ্র্য আর রাক্ষুসে ক্ষুধার এক কঠিন দৃশ্যপট। পথের ধারে টিনের চালের ঘরে শতশত অসহায় মানুষের বসতি।
কারও স্বামী নেই, কারও আবার স্বামী-সন্তান কেউই নেই। কেউ ভ্যান চালাতো, কেউ ছিলো বাসের কন্ডাক্টর। কিন্তু কাজ হারিয়েছে করোনায়। যাদের জীবন ছিল নদীকেন্দ্রিক, স্থবিরতা এসেছে তাদের জীবনেও। তাই নৌকার খোল, পাটা, ছইয়ে ধুলো জমেছে। অব্যবহৃত পড়ে আছে দাঁড়, বৈঠা, লগি। ওদের কেউ আধপেটা, তো কেউবা নির্ভেজাল উপোস। ওরা ভাইরাস বোঝে না, সামাজিক দূরত্ব বোঝে না। ওরা শুধু স্রষ্টা প্রদত্ত সব থেকে কঠিনতম জৈবিক সংকেত বোঝে। যার নাম ক্ষুধা।’
Advertisement
এদিকে এ ফেসবুকে স্ট্যাটাসে মন্তব্য লিখেছেন অনেকেই। তার মধ্যে এ বি এম রিপন লিখেছেন, অপূর্ব। অসাধারণ লেখনী। আবারও মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেল। পড়তে পড়তে মনে হলো হুমায়ুন আহমেদের কোনো গল্প পড়ছি। লেখাটি মুগ্ধতা দিয়ে শুরু - বিস্ময়ে শেষ। মনে অনেকদিন রবে এ মানবিক লেখার রেশ, অভিনন্দন।
লক্ষ্মীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর-রামগঞ্জ সার্কেল) স্পীনা রানী প্রামাণিক জানান, সাধ্য এবং সাধের সমন্বয় ঘটিয়ে একেবারে ব্যক্তিগতভাবে তিনি অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। এটি ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার তার একটি ক্ষুদ্রতম প্রয়াস।
কাজল কায়েস/আরএআর/এমএস