ভ্রমণ

মনে বাজছে পাহাড়ের কাব্য

হঠাৎ করেই ভুটান যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর আমার বন্ধু নিয়ন। কয়েক জায়গায় ব্যর্থ হয়ে কোনভাবে ড্রুক এয়ারের দুটি টিকেট ম্যানেজ হলো। শুধুমাত্র ভারতের ট্রানজিট ভিসার বিড়ম্বনা এড়াতেই বিমানে যাবার সিদ্ধান্ত। ৫ মে সকাল আটটায় ফ্লাইট। সকাল সাতটার আগেই বিমান বন্দরে পৌঁছলাম। যথারীতি বোর্ডিং পাস, ইমিগ্রেশন পেরিয়ে বিমানের জন্যে অপেক্ষা। এখানে এক মজার ঘটনা ঘটেছে। আমি খুব দ্রুত ইমিগ্রেশন পার হলেও, নিয়নের কেন জানি বেশি সময় লাগছে, দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ কর্মকর্তার ডেস্কের সামনে। আর রাত জাগা দুটি চোখ নিয়ে মহাবিরক্তির সঙ্গে কর্মকর্তা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছেন। একসময় দেখলাম নিয়নও তার সঙ্গে কোনো এক কর্মকর্তার কাছে গিয়ে কথা বলছে। তারপর তার প্রবেশাধিকার অর্জন হলো। স্বাভাবিক কারণে আমি নিয়নকে জিজ্ঞেস করি যে, কী হয়েছিল ওখানে? ও যা বললো তা রীতিমতো হাস্যকর! টিকিট ও বোর্ডিং পাসে লেখা ছিল ঢাকা থেকে পারো (ভুটানের একমাত্র বিমানবন্দর শহর)। ইমিগ্রেশনের ওই পুলিশ কর্মকর্তা পারো কে বারবার `পেরু` পড়েছেন এবং তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করছিলেন না যে, এয়ারপোর্টেই পোর্ট এন্ট্রি করে দেবে। তিনি ভেবেই বসে আছেন পেরুতে যেতে হলে এখান থেকেই ভিসা নিতে হবে। পরে বড়কর্তা নিশি জাগা কর্মকর্তাকে ভুল শুধরে দেন ওটা পেরু নয়, ভুটানের পারো  (PARO) । তবেই ছাড় দেয়া। ঠিক সকাল আটটায় প্লেন উড়াল দিল পাহাড়ি তন্বীকন্যা ভুটানের উদ্দেশ্যে পৌঁছলাম ৯টায়। ভুটান সীমান্তে বিমান প্রবেশ করতেই ভুটানের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের মূর্চ্ছনা বয়ে যেতে লাগলো সারা বিমান জুড়ে। বিমানের জানালায় উঁকি দিয়ে পাশের অপরুপ পাহাড়ি দৃশ্য দেখছি আর মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। বিমানটি হেলেদুলে বিভিন্ন পাহাড়ের বাঁক পেরিয়ে পেরিয়ে ভুটানের মাটি স্পর্শ করলো। উত্তেজনা আমাদের আরো বেড়ে গেল। বিমান থেকে নেমেই চোখ জুড়িয়ে গেল বিচিত্র সব পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে। শত বছরের পুরানো নির্মাণ শৈলীতে গড়া পারো বিমানবন্দরের মূল ভবন। আর চারদিকে যেন সজীব পাহাড়গুলো সন্তানের মতো আগলে রেখেছে ছোট এই বন্দরটিকে। কঠিন গরমের তিক্ততা নিয়ে যখন পারোতে নামলাম, সেখানে গ্রীষ্মকালেও শীতল হাওয়ায় মন-প্রাণ জুড়িয়ে গেল। পুরো দেশটাই যেন `শীতাতপ` নিয়ন্ত্রিত! কোনোরকম তল্লাশি ও হয়রানি ছাড়াই বিমানবন্দর পেরিয়ে সামনে দাঁড়ানো জিপ ও ট্যাক্সির দিকে এগুলাম। কয়েকজন বলে উঠল `স্যার ট্যাক্সি লাগবে?` আমরা হ্যাঁ বললাম। একজন এসে কথা বলতেই বাকিরা আর দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা করলো না। ট্যাক্সি ড্রাইভার তাশি আমাদের অভয় দিয়ে ডলার ভাঙানোর কথা মনে করিয়ে দিল। তাশির সঙ্গে সব কথা হয়ে যাবার পর আমরা গাড়িতে উঠে চললাম প্রথমে টাইগার নেস্ট ও চেলালা তারপর থিম্পু যাবার জন্য। আমাদের রোমাঞ্চকর যাত্রা শুরু হলো। তাশি আমাদের সঙ্গে কথা বলছে কখনো হিন্দি কখনো ইংরেজিতে একটু পরই ভুটানি শিল্পীদের সিডি ছেড়ে দিল। বললো, স্যার, এটা আমাদের দেশের গান। গানের মানেও সুন্দর করে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। দুপাশে পাহাড়ের সারি আমরা চলেছি আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে। পাহাড় কেটে কেটে অসম্ভব সুন্দর করে রাস্তাগুলো তৈরি করা। মাঝে মাঝে পাহাড়ের বুক চিরে জল ঝরছে। সেটাকে ট্যাপের মাধ্যমে পাহাড়ের গায়ে গায়ে পান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটাতেই পূজো করার জন্যে ছোট ছোট মন্দিরের মতো ঘর। তারা বলছে, `হলি ওয়াটার`। আমরাও খাবার জন্য বোতলে ভরিয়ে নিলাম `পবিত্র জল`। ঘণ্টাখানেক পরেই পৌঁছলাম পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ টাইগার নেস্ট (বাঘের ঘর) পাহাড়ের পাদদেশে। পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে মন্দির। প্রায় ২২ হাজার ফুট উপরে এত সুন্দর করে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে কবে, কে এই মন্দির বানিয়েছে, অবাক হয়ে যাই। লক্ষ্য থাকলেও ১৫ হাজার ফুটের মতো উঠে আর উঠতে পারলাম না। অনেকে ঘোড়ায় চড়েও উঠছে। রাত জাগা ও ভ্রমণ করা শরীর যেন আর পারছিল না। একটু বিশ্রাম নিয়েই সাক্ষী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ডিজিটাল ক্যামেরাটা নিয়ে। একের পর এক সুন্দর দৃশ্যগুলো ধরে রাখার চেষ্টা। কয়টা আর ধরে রাখা যাবে! অবরোহন শুরু করলাম। পথে দেখা হলো অনেক পশ্চিমা পর্যটকদের সঙ্গে। যাদের অনেকের বয়স ৭০ এর নিচে নয়। তাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা ও কথা। তারা আমাদেরকে বলছিলেন, তোমরা যুবক, তোমরা দৌঁড়ে দৌঁড়ে উঠো। তারা দিব্যি টাইগার নেস্ট ছুঁয়ে এসেছেন। টাইগার নেস্টের প্রধান মন্দিরে যেতে দুই পাহাড়ের মাঝে এতো উঁচুতে একটি সাঁকোর মতো পার হতে হয়, যা খুবই রোমাঞ্চকর। পাহাড়ের একটু পর পরই ভুটানি মেয়েরা তাদের ঐতিহ্যবাহী ব্যবহার্য জিনিসের পসরা সাজিয়ে রেখেছনি। উদ্দেশ্য পরদেশি পর্যটকদের কাছে বিক্রি করা। স্মরণিকা হিসেবে সবাই কিছুৃ কিছু না কিনছেন। নিয়নও বাদ যায়নি। আবার গা এলিয়ে দিলাম ট্যাক্সিতে। এবার তাশি দুপুরের খাবারের কথা মনে করেয়ে দিলেন। আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে চলছি, কখনো বামে কখনো ডানে তাকালে সতেজ সবুজে চোখ জুড়ে যায়। পাহাড়ের গা ঘেঁষে লিকলিকে ঝাউ গাছগুলো যেন পাহাড়ের উচ্চতাকে ডিঙিয়ে আরো উপরে উঠতে চাচ্ছে। অপরদিকে হাজার হাজার ফুট নিচে পাহাড়ি উপত্যকা। ছোট ছোট ছিমছাম ঝকঝকে ঘর, গ্রাম। এখানে একটি ঘরতো আরেকটি অনেক দূরে। এভাবে উপত্যকাগুলো সাজিয়েছে ভুটানিরা। যেন শিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা মূর্ত ছবি। ভুটানি সুরে সুরে পৌঁছলাম আবারো পারোতে। সেখানে তিনজন দুপুরের খাবার সেরে যাত্রা শুরু করলাম হাইয়েস্ট পয়েন্ট চেলালার উদ্দেশ্যে। চালকই বলে দিচ্ছিল কোথায় কোথায় আমাদের যাওয়া উচিৎ। পাহাড়ের গায়ে হাতির মুখাবয়ব দেখিয়ে দিয়ে তার ইতিহাস ও ধর্মীয় পুরাণের কথা বলছেন। যেন একজন ইতিহাস জানা গাইড। পারো থেকে চেলালা ৩৭-৪০ কিলোমিটার দূরে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই নিচে হাজার হাজার ফুট রেখে পৌঁছলাম সর্বোচ্চ পয়েন্ট চেলালাতে। সমুদ্র পীঠ থেকে এর উচ্চতা ৩,৯৮৮ মিটার। এখানে উঠে আমরা ১৫ মিনিটের মতোও থাকতে পারিনি ঠাণ্ডায়। সোজা দক্ষিণ থেকে আসছে হিমালয়ের শরীর মোড়ানো বরফ শীতল হাওয়া। তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি নয়। তাড়াতাড়ি কোনোমতে কান টুপি বের করে কয়েকটা ছবি তুলে হিমালয়ের আবছাকে পেছনে রেখে থিম্পুর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পাশে দুলছে হাজার হাজার প্রেয়ার ফ্লাগ। ছবির মতো পথ ধরে আমরা চলছি, আমাদের দেশ ও তাশিদের ভুটানের অভিজ্ঞতা বিনিময় করছি। মৃদু চলছে ভুটানি গান। পাশেই খরস্রোতা পাহাড়ি নদী বয়ে চলেছে। পাথুরে নদী। স্বচ্ছ পানি। পা না ভিজিয়ে যাওয়া যায়! নেমে পড়লাম হাঁটু জলে। মনে হলো বরফ গলা নদী সেখানেও বেশিক্ষণ টেকা গেল না। সন্ধ্যা নাগাদ থিম্পুতে পৌঁছলাম। আগে থেকেই বাংলাদেশের  প্রবাসী কনক ভাই আমাদের অপেক্ষায় ছিলেন। তিনিই বাঙালি মালিকানাধীন হোটেল চেওপেল নরকিতে থাকার ব্যবস্থা করলেন। টু-ইন বেড ৪৫০ ভারতীয় রূপি বা ভুটানি মুদ্রা নিউলট্রাম। ভুটানে তাদের মুদ্রার সঙ্গে ভারতীয় রূপিও চলে, মুদ্রা মানও সমান। পরদিন রিটার্ন টিকেট কনফার্ম করার চিন্তা নিয়ে শুয়ে পড়লাম। থিম্পুর প্রাণকেন্দ্র ক্লক টাওয়ারের পাশেই আমাদের থাকার হোটেল। মূল সড়কের সঙ্গে লাগোয়া। আমাদের দেশের মতো অযথা বিনা প্রয়োজনে ভুটানিরা হর্ন ব্যবহার করেন না। ফলে ঘুমও হলো তৃপ্তিপূর্ণ। সকালে উঠেই প্রথমে ড্রুক এয়ার অফিস, সেখান থেকে জ্যুয়োলজিক্যাল পার্ক ও পরে রাজার প্রাসাদ এবং পরে ওয়াচ টাওয়ারে উঠে রাতের থিম্পু দেখার পরিকল্পনা। ড্রুক এয়ারে গিয়ে মাথা ঘুরে গেল। সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল প্রায়। `এয়ার ড্রিম` নামের যে ট্রাভেল এজেন্সি আমাদের টিকিটের ব্যবস্থা করেছিল, তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছি। ১১ তারিখ টিকিট কনফার্ম আছে বলে টিকিটে উল্লেখ থাকলেও আসলে ওরা ১৮ তারিখ কনফার্ম করে রেখেছিল। অতিরিক্ত নয় দিন থাকার কথা ভেবে আমরা রীতিমতো মুষড়ে পড়লাম। কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। ভুটান থেকে এয়ার ড্রিমে ফোন করলাম কিন্তু তারা কোনো কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিল। হায় বাংলাদেশের মানুষ! মাথায় দেশে ফেরার চিন্তুা নিয়েই গেলাম ভুটানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখানে `পুনাখা` যাওয়ার অনুমতির জন্য। আধা ঘণ্টার মধ্যে তারা যাবার অনুমতির ব্যবস্থা করে দিল। কোনপ্রকার অর্থ ব্যয় ছাড়াই, ভাবতেই অবাক হচ্ছিলাম। পরের দিন সকালে ১৮শ রূপিতে একটি ট্যাক্সি ঠিক করে রওনা হলাম পুনাখার উদ্দেশ্যে। পুনাখা হচ্ছে ভুটানের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান। পুনাখা বা পূণ্যভূমিকে অনেকে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। থিম্পু থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরের এই জনপদ শীত মৌসুমে বরফ আচ্ছাদিত হয়ে থাকে। আর বরফের বুকে ফুটে থাকে বেগুনি রঙের তাশি বা মঙ্গল ফুল। পাহাড়ের গায়ে গায়ে ক্রিসমাস ট্রি সেজে থাকে শুভ্র পোষাকে। পুনাখা ভুটানের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক জেলাও। এখানে আছে নয়নাভিরাম ডিজং বা জেলা পরিষদ। পুরানো এক বিশাল ডিজং ঐতিহ্যমণ্ডিত কারুকাজে সজ্জিত। অপরূপ এই ডিজং সভাকেন্দ্র দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। বছরে দুই একবার সরকারের বিশেষ সভা হয় এই ডিজংয়ে। ডিজংয়ের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নীল জলের মুছো নদী। নদীর ওপারে পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট বসতি। আর এর সঙ্গে পুনাখাকে যুক্ত করেছে প্রায় ৭শ মিটার লম্বা এক ঝুলন্ত সেতু। পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও বাতাসে বাতাসে তা সারাক্ষণই নেচে চলে। একটু পর পর দুই-চারজন মানুষ হেঁটে পার হন। বলে নেয়া দরকার ভুটানের জনসংখ্যা সারাদেশে মাত্র ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখের মতো। এখানে অফিস আদালতে এমনকি রাস্তাঘাটেও ঐতিহ্যবাহী পুরুষেরা `ঘো` আরা নারীরা `কিরা` পোষাক পরেন। শান্ত স্বভাবের এদেশের মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ ও আইন মানার প্রবণতা প্রখর। যতটুকু জানলাম, ভুটান বছরে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। ভুটান ব্যবহার করে মাত্র ২শ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট। বাকিটা ভারতের কাছে রফতানি করে। বিদ্যুৎ ভুটানের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস। হাজার হাজার ফুট উপরে পাহাড়ের যেখানেই যাবেন সেখানেই বিদ্যুতের পোল চোখে পড়বে। এক পাহাড় থেকে আরেক দুর্গম পাহাড় হাজার হাজার কিলোমিটার বিদ্যুতায়ন অবাক করবে যে কাউকেই। দৃষ্টিনন্দন ডিজং থেকে ফেরার পথেই পাওয়া গেল পাথুরে নদী খুছো ও মুছো। বাংলা মানে দাঁড়ায় তুমি আছো আমি আছি। এই পাহাড়ি দুই নদী একই সঙ্গে দুদিক থেকে এসে একটি সাদা ও একটি নীল রঙয়ের স্রোতধারা নিয়ে বয়ে চলেছে। পুনাখা থেকে ছুটে চললাম দোচুলার উদ্দেশ্যে। এখানে দুটি চুলাকে কেন্দ্র করে বিশাল এলাকা জুড়ে প্রাচীন ছোট ছোট মন্দিরের মেলা। অসংখ্য এই মন্দিরগুলোর ভেতর সারাক্ষণ প্রদীপ জ্বলছে। এখান থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া হিমালয় ভালোভাবেই দৃষ্টিগোচর হয়। কিন্তু আকাশে মেঘ থাকায় আমাদের ভাগ্যে তা আর জোটেনি। ফেরার পথেই পেলাম হলুদ রঙয়ের হ্নিলা পাহাড়। বেশির ভাগ পাহাড়ই পাথুরে হলেও কখনো ভাবিনি হলুদ রংয়ের পাহাড়ের দেখা পাবো। একি! সঙ্গে এখানে দেখা পাওয়া গেল ইয়ক বা চামড়ি গাই এর দল। তারা দল বেঁধে ঘাষ খাচ্ছে। যে কেউ ভেবে বিস্মিত হয়ে যাবেন যে, এতটুকু একটি দেশে প্রাকৃতিক ও আবহাওয়াগত এত বৈচিত্র্য! মের ৮ তারিখে গেলাম বাংলাদেশ দূতাবাসে। তারা সড়ক পথে দেশে ফেরার কোনো সাহায্য করতে পারে কি না। বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোর অনেক নেতিবাচক গল্প শুনেছি। ভুটানের দূতাবাসে প্রবেশ করেই বোঝা গেল এটা বাংলাদেশি অফিস এবং যথারীতি অসহযোগীতাপূর্ণ আচরণ! তারা কোনো সাহায্য করতে পারবেন না। `কোন পরামর্শ আছে কি?`  আমার এ প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে দিলেন `না`। ভগ্ন হৃদয় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। এবার শেষ ভরসা ভারতীয় দূতাবাস। ট্যাক্সিতে চেপে রওনা দিলাম ইন্ডিয়া হাউসে। সেখানে গিয়ে এক কর্মকর্তাকে আমাদের সমস্যার কথা খুলে বললাম। তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে আমাদের কথা শুনে বললেন `তোমরা চিন্তা করো না, দেখছি তোমাদের বিপদে কী করা যায়। তিনি চলে গেলেন কনসুলার ইনচার্জের কাছে। ফিরে এসে ভিসা ফরম পূরণ করে নিলেন, পাঠালেন কনসুলার ইনচার্জের কাছে। তিনি সব কথা শুনে জানালেন আমাদের ট্রানজিট ভিসার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আমাদের পিলায় যেন জলের বন্যা বয়ে গেল। আনন্দ-উৎফুল্লতা আর সাত দিনের ট্রানজিট ভিসা নিয়ে এলাম হোটেলে। পরদিন সকালেই দেশে ফেরার পালা। ১৮০ রূপির টিকিটে ভোরে সীমান্ত শহর ফুন্সটলিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, শিলিগুড়ি হয়ে দেশে ফিরবো। ছয় ঘণ্টার পথ। পাহাড় কেটে সরু সরু রাস্তা বানিয়েছে পাশে হাজার হাজার ফুট খাঁদ আর আমরা তারই উপর দিয়ে ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলেছি। একটু দূরের পাহাড়ের গায়ে মেঘেদের দল এসে লুটোপুটি খাচ্ছে। যেন মেঘ আর পাহাড়ের বন্ধুতার নিবিড় বন্ধন। পাহাড়ি ঝর্ণাগুলোও এ খেলায় যেন আরো উচ্ছলতা ছড়াচ্ছে সশব্দে। ধীরে ধীরে আমরা দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছি। পেছনে ফেলে আসছি আপরূপ সুন্দরের মায়াময় প্রকৃতির হাতছানি। পাহাড়, মেঘ, নদী, মানুষ সবই যেন একই সুতোয় গাঁথা। চোখে ভাসে শিল্পীর আঁকা ছবি আর মনে বাজছে পাহাড়ের কাব্য।এমজেড/পিআর

Advertisement