দেশজুড়ে

পাইকারের দেখা নেই, লিচু নিয়ে বিপাকে চাষিরা

দিনাজপুরের বাজারে মাদ্রাজি জাতের অপরিপক্ব লিচু উঠতে শুরু করেছে। আগামী ৩১ মে (রোববার) থেকে কমবেশি সকল জাতের লিচু নামানোর কথা রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখনও দেখা মিলছে না পাইকারদের। এ কারণে লিচু বাগান বিক্রি করতে পারছেন না চাষি ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তবে লাভের আশায় অনেকে মাদ্রাজি জাতের অপরিপক্ব লিচু পেড়ে বাজারে নিয়ে আসছেন। তাও হাতে গোনা। আর এই মাদ্রাজি জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে পানির দরে। কোথাও ১৫০ টাকা শ, কোথাও ২০০ টাকা।

Advertisement

অন্য সময়ে আরও এক-দুই মাস আগেই বাগান ধরে লিচু কিনে নিতেন পাইকারি ক্রেতারা। কিন্তু এবার দিনাজপুরে পাইকারদের দেখা মিলছে না। এভাবে চলতে থাকলে সামনে ভালো জাতের লিচু ( বেদানা, চায়না থ্রি, বোম্বাই) নামতে শুরু করলেও তেমন দাম পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এতে দিনাজপুরের লিচু চাষিদের মধ্যে লোকসানের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শুক্রবার (২২ মে) দিনাজপুরের বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাতে গোনা কয়েকজন লিচু নিউ মার্কেটে লিচু নিয়ে আসেন। কিন্তু এই অপরিপক্ব লিচু কেনাই তেমন ক্রেতা ছিল না। হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতা এসে লিচুগুলো কিনে নিয়ে যান।

তবে লিচু চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। তাদের দাবি, অন্যান্য বছর মাদ্রাজি জাতের লিচু এই সময় বিক্রি হতো ৩৫০ টাকা শ থেকে ৪০০ টাকা শ পর্যন্ত। কিন্তু এবার ক্রেতা না থাকায় সেই লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে অনেকটা পানির দরে।

Advertisement

কিছু ক্রেতা আসছেন, যারা কোম্পানির কাছে লিচু বিক্রি করবেন। কিন্তু মাদ্রাজি জাতের আম কেনার বড় পাইকার প্রাণ গ্রুপ এখনও লিচু কিনতে বাজারে নামেনি। ফলে এবার লিচুর দাম শুরুতেই হচট খাবে বলে দাবি করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে করোনার কারণে বসা অস্থায়ী কাঁচা বাজারে মাসিমপুর পানুয়া পাড়া গ্রামের মো. হায়দার আলী লিচু নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, এবার লিচুর ক্রেতা নেই। অথচ গত ২/৩ দিন থেকে বিচ্ছিন্নভাবে চাষিরা লিচু নামাতে শুরু করেছেন। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় বিক্রি করার লোক পাচ্ছি না। বাজারে নিয়ে এসেও দাম পাচ্ছি না। এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আর দাম এভাবে কম পেতে থাকলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বো।

আরেক লিচুচাষি মাসিমপুরের নজরুল ইসলাম গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে লিচুর বাজার কোথায় লাগবে দেখতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ক্রেতা নেই। যদিও দুই একজন আসছেন তারা গত বছরের চেয়ে এবার অর্ধেক দাম বলছেন। তাই বাধ্য হয়ে নিজেই লিচুর বাজারের খোঁজখবর নিতে এখানে এসেছি। করোনার কারণে ক্রেতারা আসছে না এখনও। বাগানের লিচুও বিক্রি হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ব।

বিরল উপজেলার লিচুচাষি মতিউর রহমান বলেন, অন্যবার এ সময় বাগান বিক্রি হয়ে যেত। বাগান বিক্রির টাকা দিয়ে ধারদেনা পরিশোধ করার পরও বিভিন্ন কাজে লাগানো যেত। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেননি। ফলে অধিকাংশ বাগান মালিকই বাগান নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

Advertisement

এদিকে গত ১৯ মে দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে লিচু ও আম নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলমের সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে লিচু মার্কেট কালিতলা নিউ মার্কেট থেকে সরিয়ে দিনাজপুর বড় ময়দানের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে একমুখী লিচু বাজার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্রেতা- বিক্রেতারা এক দিক দিয়ে ঠুকবেন এবং অন্য দিক দিয়ে বের হবেন।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল জানান, মার্কেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তা ছাড়াও লিচু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য পরিবহন ও পাইকারদের সঙ্গে সমন্বয় এবং তাদের থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সকল সেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। যাতে করে লিচু নিয়ে চাষিরা বিপাকে না পড়েন।

উল্লেখ্য, দিনাজপুরে এবার সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সোয়া ২ কোটি গাছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হবে। যার আনুমানিক মূল্য হাজার কোটি টাকা।

এমদাদুল হক মিলন/আরএআর/এমএস