আন্তর্জাতিক

বেকার ভাতা কমিয়ে লোকজনকে কাজে ফেরানোর ফন্দি ট্রাম্পের

মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের দিয়ে সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্রে। করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনে দেশটির অর্থনৈতিক কাঠামো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ।

Advertisement

সঙ্কট থেকে উত্তোরণের জন্য গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টিটিভে আইন প্রণেতাদের ভোটে ৩ লাখ কোটি ডলারের (তিন ট্রিলিয়ন) করোনা রিলিফ বিল পাস হয়।

বিলে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রত্যেক বেকারকে সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে দেয়া হচ্ছে। বেকারদের প্রায় ৪০ শতাংশ বর্তমানে কর্মস্থলের চেয়ে বেশি উপার্জন করছেন। এর ফলে বিলটি পাসের পর কাজে ফেরা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে অনীহা দেখা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে পরবর্তী করোনাভাইরাস সহায়তা প্যাকেজে বেকারদের ভাতা প্রদানের বিষয়টি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কর্মীদের কাজে ফেরাতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকান নেতা সিনেটর মিচ ম্যাককনেল।

Advertisement

নতুন মহামারি প্রস্তাবনাগুলোতে একটা ‘বিরতি’ নেয়ার সিদ্ধান্তের পর সিনেটররা চাপের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ছোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের ঋণ দিতে দ্রুত কাজ শুরু করেছিল সিনেট।

এক সম্মেলনে রিপাবলিকান পার্টির নেতা কেভিন প্যাট্রিক ব্র্যাডি বলেন, বেকারদের সুবিধার বিষয়টি নিয়ে নতুন পরিকল্পনা নিতে রিপাবলিকান পার্টি ও হোয়াইট হাউস একটা ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সুতরাং কর্মীদের কাজে ফিরতে তারা কোনো বাধা নন।

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা বিল পাসের পর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে স্পিকার ও ডেমোক্র্যাটদের শীর্ষ নেতা ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘আমি আমার সদস্যদের নিয়ে খুবই গর্বিত। কেননা তারা যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রা ও গণতন্ত্রের জন্য স্মরণীয় কিছু করেছে। আর এটা একটা সাহসী বিল।’

তিনি আরও বলেন, খ্যাতনামা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঋণখেলাপি হয়েছে। মার্চ থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৩ কোটি ৬০ লাখ আমেরিকান বেকার ভাতার জন্যে আবেদন করেছেন। এসব থেকেই বোঝা যায়, মরা কোথায় অবস্থান করছি আমরা। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে করোনা রিলিফসহ বিভিন্ন খাতে প্রণোদনার বিকল্প নেই।

Advertisement

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে এই বিলটি ২০৮-১৯৯ ভোটে পাস হয়। এর মধ্যে একজন রিপাবলিকান এই বিলের পক্ষে রায় দিয়েছেন, বিপরীতে ১৪ ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি বিলটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

তবে বিলটি পাসের পর থেকে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। রিপাবলিকান নেতা সিনেটর মিচ ম্যাককনেল বলেন, এ ধরনের কোনো আইনের প্রয়োজন নেই। সিনেটররা আশা করেছিলেন, আসছে জুনে সহায়তার বিষয়ে আরও বিবেচনা করা হবে।

বিলের আওতায় একজন মানুষকে কমপক্ষে ১২০০ ডলার করে দেয়া হবে। এছাড়া বেকার ভাতাসহ এতে আরও রয়েছে স্থানীয় সরকারের জন্য প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের সহায়তা। করোনা পরীক্ষা ও সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ পদ্ধতি আরও সম্প্রসারিত করা। ভাড়াটিয়াদের বাড়িভাড়া প্রদানে সহায়তা, বাড়ির মালিকদের ঋণ ও ইউটিলিটি বিল প্রদানে সহায়তা। পুষ্টি সহায়তার জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া। ফেডারেল অফিসের নির্বাচনের জন্য জরুরি পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির জন্য রাজ্যগুলোকে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়া।

তবে করোনা রিলিফ প্যাকেজ হিসাবে গত মার্চে ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের বিল পাসে রিপাবলিকানরাও ভোট দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ বিল অনুমোদন করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে ৯৬ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে ১৬ লাখ ২১ হাজার মানুষ। করোনার সংক্রমণে প্রভাবে ৩৮ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারিয়েছে।

এমএসএইচ/এমকেএইচ