ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবের পর ঈদকে সামনে রেখে একদিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে সব ধরনর সবজির দাম বেড়েছে।তবে সব থেকে বেশি বেড়েছে গাজরের দাম। এক লাফে গাজরের কেজি ১০০ টাকায় উঠেছে।অন্যান্য সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। আর কয়েকদিন ধরে বাড়তে থাকা পোল্ট্রি মুরগির দাম আরও বেড়ে ১৯০ টাকায় ছুঁয়েছে।
Advertisement
শুক্রবার(২২ মে) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে চাষিরা ঠিক মতো সবজি তুলতে পারছেন না। এছাড়া দুইদিন পরেই ঈদ। এ কারণে আড়তে ঠিক মতো সবজির গাড়ি আসেনি। ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ কম। তাই একদিনেই আড়তে সব ধরনের সবজির দাম কজিতে ১০ টাকার ওপরে বেড়েছে। তারপরও অনেক খুচরা ব্যবসায়ী আড়ত থেকে চাহিদা অনুযায়ী সবজি কিনতে পারেননি।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গতকাল ছিল ৪০-৫০ টাকা। অর্থাৎ একদিনে গাজরের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
Advertisement
গাজরের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে রামপুরা মোল্লাবাড়ির ব্যবসায়ী খলিল বলেন, এখন গাজারের মৌসুম নয়। যে কারণে কয়কদিন ধরেই গাজরের দাম বাড়ছে। তবে গতকালও গাজরের কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্ত আজ আড়তে যে দাম তাতে ১০০ টাকার নিচে বিক্রির উপায় নেই।
গাজরের সঙ্গে শসা, পটল, ঝিঙে, পাকা টমেটো, বরবটি, করলাসহ সব ধরনের সবজির দাম একদিনের মধ্যে বেড়ে গেছে। গতকাল ১৫-২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসার দাম এক লাফে বেড়ে ৪০-৫০ টাকা হয়েছে। পাকা টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ৪০-৬০ টাকা।
পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি, যা গতকাল ছিল ২০-৩০ টাকা। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। বরবটি কেজি ৭০ টাকা ছুঁয়েছে, যা গতকাল ছিল ৪০-৫০ টাকার মধ্যে। ঝিঙার কেজি বেড়ে হয়েছে ৫০-৬০ টাকা, যা গতকাল ছিল ৪০-৫০ টাকা।
এছাড়া চিচিংগার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা, যা গতকাল ছিল ৩০-৪০ টাকা। কচুর লতির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা, যা গতকাল ছিল ৪০-৫০ টাকা। তবে বেগুনের কেজি গতকালের মতো ৬০-৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
সবজির দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী জহির বলেন, ঈদের আগের সাধারণত সবজির গাড়ি কম আসে। এ কারণে কিছু সবজির দাম বাড়ে। তবে এবার দাম বাড়ার হার একটু বেশি। এর কারণ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। সবজি খেতের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে বাজারে সবজি আসছে কম।
রামপুরায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করা রহিম বলেন, আজ আড়তে সব সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। তারপরও অনেক সবজি আড়তে কিনতে পাওয়া যায়নি। অনেক ঘোরাঘুরি করেও এক কেজি বরবটি কিনতে পারিনি। গাজরও পাওয়া যায়নি। আড়তের লোক বলে ঈদ পর্যন্ত এভাবে চলবে। ঈদের পর সবজির সরবরাহ বাড়বে, তখন আবার দাম কিছুটা কমতে পারে।
এদিকে কয়েকদিন ধরে বাড়তে থাকা পোল্ট্রি মুরগির দাম আরও এক দফা বেড়েছে। এতে বাজার ভেদে পোল্ট্রি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকা, যা গতকাল ছিল ১৭০-১৮০ টাকা। পোল্ট্রি মুরগির দাম বাড়লেও লাল লেয়ার ও পাকিস্তানি কক মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লাল লেয়ার মুরগি আগের মতো ২১০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজিপাড়ার ব্যবসায়ী মিলন বলেন, কয়েক দিন ধরে পোল্ট্রি মুরগির দাম দফায় দফায় বাড়ছে। রোজার আগে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পোল্ট্রি মুরগির এখন ১৮০ টাকার নিচে বিক্রি করার উপায় নেই। পোল্ট্রি মুরগির এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরও অন্য মুরগির দাম বাড়েনি। এ কারণে এখন লাল লেয়ার মুরগি বেশি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মুরগি কিনতে আসা ফাতেমা বলন, বাজারে সবকিছুর দামে আগুন। গতকালের তুলনায় আজ সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গরু ও খাসির মাংস তো আনেক আগেই আমাদের কপাল থেকে উঠে গেছে। পোল্ট্রি মুরগি কিনে খাবো তারও উপায় নেই। কেজি ১৮০ টাকার নিচে কোথাও মুরগি পাওয়া যাচ্ছে না। অবস্থা যা এবার হয়তো অনেককেই মাংস না খেয়েই ঈদের দিন কাটাতে হবে।
সবজির দাম বাড়লেও স্থির রয়েছে মাছের দাম। আগের মতোই রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-৫০০ টাকা। নলা (ছোট রুই) মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া ১৩০-১৭০ টাকা, পাঙাশ ১৪০-১৮০ টাকা কেজি, শিং ৩০০-৪৫০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৭৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৮০০ টাকা, টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মিনিকেট ও নাজিরশাল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৬ টাকা কেজি, মাঝারি মানের পইজাম ও লতা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৬ টাকা, গরিবের মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৪০ টাকা। পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা।
লুজ সয়াবিন তেল ৯০-৯৫ টাকা, ভালো মানের পাম অয়েল ৭৫-৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বড় দানার মশুরের ডাল ৮০-৯০ টাকা, ছোট দানার মশুরের ডাল ১২০-১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ৮০-১০০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ১৩০-১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এমএএস/এএইচ/এমএস