ইসমত আরা কবির। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা। খুলনায় বেড়ে ওঠা মানুষটির অধীনে এখন কাজ করেন শত শত মানুষ। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের পাথেয়’। জাগো নিউজের সাথে আলাপে নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—
Advertisement
ছোটবেলা আর পড়াশোনা সম্পর্কে কিছু বলুন— ইসমত আরা কবির: আমার বেড়ে ওঠা খুলনা শহরে। সেখানেই পড়াশোনা। ছোটবেলা থেকে আমি শান্ত প্রকৃতির ছিলাম। আমার বাবা ছিলেন খুলনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ। পরবর্তীতে ন্যাশনাল একাডেমি ফর এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্টের (নায়েম) মহাপরিচালক ছিলেন। আমরা দুই বোন, আমিই বড়। বড় হিসেবে পরিবারে আমার অগ্রাধিকার একটু বেশিই ছিল। সব ডিগ্রির পাশাপাশি আমেরিকার প্রফেশনাল হিউম্যান রিসোর্সেস সার্টিফিকেশন ইনস্টিটিউশন থেকে অর্জন করেছি সার্টিফাইড পিএইচআরআই।
ক্যারিয়ার শুরু হয় কীভাবে?ইসমত আরা কবির: ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০৭ সালে, মাল্টিন্যাশনাল ওষুধ কোম্পানি রোশ বাংলাদেশ লিমিটেডে ফাইন্যান্স বিভাগে কাজ করার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগে স্থানান্তর হই। বর্তমানে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছি।
এইচআর পেশায় কেন এলেন?ইসমত আরা কবির: মানবসম্পদ বিভাগ যেকোনো কোম্পানির কেন্দ্রবিন্দু। একজন এইচআরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিভাবান কর্মী খুঁজে পায়। কোম্পানির প্রতিটি কর্মী নিয়োগ থেকে শুরু করে তাদের সুযোগ-সুবিধা, প্রশিক্ষণ, দক্ষতার উন্নয়ন—এসব কিছুর দায়িত্ব মানবসম্পদ বিভাগের। মূলত এ আসক্তি থেকেই এইচআর পেশায় আসা।
Advertisement
জীবনে যা হতে চেয়েছিলেন— ইসমত আরা কবির: আমি জীবনে চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করতাম। ইচ্ছে ছিল চ্যার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হবো। রোশে বাংলাদেশ লিমিটেডে কর্মরত থাকা অবস্থা লক্ষ্য করতাম, পৃথিবীর অন্যতম বড় বড় কোম্পানি কেন, কিভাবে এত ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করছে। তা আমাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করতো। তারপর থেকে মানবসম্পদ সম্পর্কিত বিষয়ক পড়াশোনা শুরু করি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কাজ করছি মানবসম্পদ কর্মী হিসেবে।
যারা এইচআর সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান, করোনা তাদের কেমন বার্তা দিলো?ইসমত আরা কবির: নিঃসন্দেহে কোভিড-১৯ কোনো ভালো বার্তা বয়ে আনছে না বর্তমান প্রেক্ষাপটে। কারণ বিশ্ব অর্থনীতি এখন হুমকির মুখে। সব কোম্পানি চাইবে বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। সাথে সাথে খরচ কমাতেও চাইবে। তাই এইচআর সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে খুবই দক্ষ হতে হবে। দক্ষতা বলতে দ্রুত চিন্তাশক্তি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাস্তববাদী এবং সাথে নতুন নতুন পলিসি ও ধারণা তৈরি করা, অবশ্যই কোম্পানির পক্ষে। কোম্পানি তাকেই পছন্দ করবে, তার উপর নির্ভর করবে; যে কোম্পানিকে যোগ্য জনবল দিতে পারবে এবং লাভবান করতে পারবে। ধারাবাহিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি এ ক্যারিয়ার শুরু করার আগে কিছু ওয়ার্কশপ বা ট্রেনিং থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যেতে পারে। কোভিড-১৯ সব কোম্পানির এইচআরকে কঠিন চ্যালেঞ্জ জানালো—এ বছর নিজেদের বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ করার। কোম্পানির সাফল্য অবশ্যই তাদের দূরদৃষ্টির উপর নির্ভর করছে।
তরুণরা অবসর সময়ে কোন কোন দক্ষতা অর্জন করবে?ইসমত আরা কবির: সবার আগে টিমওয়ার্কের ব্যাপারটা জোর দিতে হবে। আপনি যে সেক্টরেই কাজ করেন না কেন, যেকোনো প্রজেক্টে কাজ করতে গেলে টিমে কাজ করতে হয়। টিমে জুনিয়র-সিনিয়র, অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ অনেকেই থাকতে পারে। সবার সাথে মিলে কাজ করার মনোবল থাকতে হবে। ইউডেমি, কোর্সেরা, অ্যালিসন, এডেক্স—এতে অনেক ফ্রি কোর্স পাওয়া যায়। এমনকি কোভিড ১৯-এর জন্য এসব সাইটগুলো অনেক কোর্সের উপর বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। বর্তমানে সবকিছু অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে। ইনফরমেশন টেকনোলজি, ডাটা প্রসেসিং সফটওয়্যারের প্রতি গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। এসব স্কিল ডেভেলপ করার সুযোগ এখনই। চাকরিক্ষেত্রে এখন এসব কর্মী অগ্রাধিকার পাবে; যারা কম সময়ে দ্রুত কাজ করতে এবং শিখতে পারবে।
তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য পরামর্শ—ইসমত আরা কবির: বর্তমানটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। তাই তরুণদের বলবো, চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মনোভাব থাকতে হবে। সেই সাথে বলবো, প্রত্যেকেরই একটি সাহসী স্বপ্ন থাকতে হবে। স্বপ্নের পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। লক্ষ্য পূরণের জন্য থাকতে হবে অদম্য ইচ্ছাশক্তি। এ জন্য সব সময় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমি আরও বলবো, পুথিগত বিদ্যার পেছনে না ছুটে নিজেকে সৃজনশীল করে তুলতে হবে, যা জব মার্কেটে খুব গুরুত্বপূর্ণ। শেষে বলবো, ‘Lead your dream with your reality’.
Advertisement
এসইউ/এমকেএইচ