চাঁদপুর সদর উপজেলার উত্তর ইচলীতে ত্রিমুখী সরকারি খাল অবৈধভাবে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। যার ফলে ওই এলাকার তিনটি গ্রামের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে জলাবদ্ধতার কারণে এবার আলু, বোরোসহ শীতকালীন ফসল চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯৮নং ইচলী মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের সরকারি ত্রিমুখী খাল জনৈক আমিন বেপারী অবৈধভাবে দীর্ঘ এক বছর আগে ভরাট করে ফেলেন। পরে এলাকাবাসী প্রশাসনের দৃষ্টি আনলে বিষয়টি সদর উপজেলার টিএনও ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চাঁদপুরকে তদন্তপূর্বক রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে খাল ভরাটের বিষয়টি সঠিক হয়নি এবং সরকারি খাস জমিতে মাটি ভরাট করা হয়েছে তা উল্লেখ করে এবং শত শত হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার কারণে অনাবাদি থাকবে বলে রিপোর্টে বলা হয়। এছাড়া খালের ভরাটকৃত মাটি অপসারণ করে চাষাবাদের জন্যও বলা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের পর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন বেপারীকে সাত দিনের মধ্যে খাল থেকে মাটি অপসারণের জন্য নোটিশ দেন। কিন্তু আমিন বেপারী মাটি অপসারণ না করে এ নোটিশের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কোর্টে টিএনও, তহশীলদার, কৃষক আবু মিজি ও কৃষক বাচ্চু মোলা বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার পর একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আমিন বেপারী উকিলের মাধ্যমে আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন করে নেয়ার জন্য প্রস্তাব দেন। এদিকে খাল থেকে মাটি অপসারণ না করায় কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসক খাল দখলকারী আমিন বেপারীকে এক সপ্তাহের মধ্যে খাল থেকে মাটি অপসারণের জন্য আরেকটি নোটিশ প্রদান করেন। এতে আমিন বেপারী এবারও এডিসি, টিএনও ও তহশীলদারকে আসামি করে কোর্টে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এদিকে কৃষকরা তাদের জমি থেকে পানি অপসারণে উত্তেজিত হয়ে উঠলে আমিন বেপারী পানি অপসারণে তার বাড়ির উপর দিয়ে একটি নালা তৈরি করে দেন। এ নালা দিয়ে খুবই মন্থরগতিতে পানি অপসারিত হচ্ছে। এতে আসন্ন শীতকালীন মৌসুমের পূর্বে পানি সম্পূর্ণভাবে সরার সম্ভাবনা নেই। এক কথায় চাষাবাদ করার উপযোগী হয়ে উঠবে না জমিগুলো বলে অভিযোগ কৃষকদের। এলাকার কৃষক আবু মিজি ও বাচ্চু মোলা জাগো নিউজকে জানান, সরকারি খাল আমিন বেপারী অবৈধভাবে দখলের পর মাটি ভরাট করেছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ভরাটের কারণে ইচলীর তিন গ্রামের শত শত হেক্টর জমির আখ নষ্ট হয়ে এবার শীতকালীন আলু, বোরোসহ বিভিন্ন ফসল কৃষকরা জলাবদ্ধতার কারণে জমি তৈরি করতে পারছেন না। এবার এ বিলে কোনো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। এতে আমাদের কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি। প্রশাসন ব্যবস্থা জোরদার করবে বলে জানিয়েছেন। আমিন বেপারী আমাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। কিন্তু এতে আমাদের কোনো ভয় নেই। কারণ আমরা সত্যের পথে ও কৃষকের দুর্ভোগের সঙ্গে আছি। বাগাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে খালটির ভরাটকৃত স্থান অপসারণ করা হবে এবং কৃষকদের চাষাবাদের জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সহায়তা থাকবে। কিন্তু কেন খালের মাটি অপসারিত হচ্ছে না, তা বুঝে উঠতে পারছি না। তিনি খালের মাটি অপসারণে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান। তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম জাগো নিউজকে জানান, সরকারি খালটি ভরাটের ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে এবং তিনটি গ্রামের শত শত হেক্টর জমিতে আলু, বোরোসহ শীতকালীন ফসল চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীসহ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলে আমাদের সর্বাত্মক সহায়তা থাকবে। চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি আমাদের জানা আছে। কৃষকদের বৃহৎ স্বার্থের কথা ভেবে আমরা গত ১৫ সেপ্টেম্বর একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছিলাম খালটির মাটি অপসারণের। কিন্তু ওই ম্যাজিস্ট্রেট বদলি হয়ে যাওয়ায় তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। আমরা সহসাই খালের মাটি অপসারণে পুনরায় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।খাল দখলকারী আমিন বেপারী জাগো নিউজকে জানান, সিএস ও আর, এস খতিয়ানে এখানে কোনো খাল নেই। তৎকালীন প্রায় ৪০ বছর পূর্বে অত্র এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য এখান দিয়ে এলাকাবাসী একটি ক্যানেল তৈরি করেন। পরবর্তীতে আশপাশের সকল খালের মুখ বন্ধ করে দেয়ায় এ স্থান দিয়ে পুরো পানির প্রবাহ সৃষ্টি হয়ে খালের রূপ নেয়। ইকরাম চৌধুরী/এমজেড/পিআর
Advertisement