দেশজুড়ে

নওগাঁয় ওল চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা

ওল একটি কোন্দ (কচু) জাতীয় ফসল। ওলকে রান্না করে তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। আগে বাড়ির আনাচে কানাচে সামান্য পরিমাণে লাগানো হতো ওল। কিছুদিন আগেও ওল চাষের বিস্তর চাষ হতো না। দিনকে দিন কৃষকরা ওল চাষ বাড়িয়েছেন। আগামী দিনে যেন ওল চাষ আরও বাড়ে তার চেষ্টাও করছেন কৃষকরা। স্বল্প পরিশ্রমে ওলের আবাদ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের কৃষি বিষয়ে পরামর্শ না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।স্থানীয়, মাদ্রাজি এবং যশোহর এই তিন প্রকার ওলের চাষ করছেন নওগাঁর কৃষকরা। তবে মাদ্রাজি এবং যশোহর ওলের চাহিদাটা একটু বেশি। এ দুই জাতের ওলে খাওয়ার সময় গলা চুলকায় না।জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, নওগাঁয় প্রায় ১শ হেক্টর জমিতে ওলের আবাদ করা হয়েছে। জেলার চারটি উপজেলা নওগাঁ সদর, বদলগাছী, মহাদেবপুর এবং মান্দায় ওলের আবাদ করা হয়। অন্যান্য উপজেলায়ও কম বেশি ওলের আবাদ হয়। বদলগাছী উপজেলা সবজি এলাকা হিসেবে খ্যাত হওয়ায় সেখানে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে ওলের আবাদ করা হয়েছে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে ওল জমিতে রোপণ করা হয়। ওল বড় হতে প্রায় ৯ মাসের মতো সময় লাগে। গাছ যখন মরে যায় তখন জমি থেকে উত্তোলন করা হয়। ওলের আবাদ হেক্টর প্রতি প্রায় ৩০ টনের মতো হয়ে থাকে। বেলে দো-আঁশ মাটি, ছায়া না থাকা ও পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু জমি ওল চাষের জন্য উপযোগী। মাটির জো থাকা অবস্থায় ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর ভালো করে মই দিয়ে মাটি সমান করে চেপে দিতে হবে। লাঙ্গল দিয়ে লাইন তৈরি করে নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত তৈরি করে বীজ বসিয়ে দিতে হবে। সাধারণত দুই-তিন বছর আবাদ করার পর যে বিভিন্ন আকারের মুখীকচু তৈরি হয় তাই বীজ হিসেবে জমিতে রোপণ করা হয়। খরার সময় একমাস অন্তর সেচ দিতে হয়। বর্ষায় সেচ দেয়ার দরকার হয় না। জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বদলগাছী উপজেলার কৃষকরা জমিতে ডিএপি, পটাশ, জিংক, বোরন ও জৈব সার (গোবর) ব্যবহার করে থাকেন। প্রতি বিঘায় ৫০ কেজি ডিএপি, ৪০ কেজি এমওপি, জিংক ২ কেজি, বোরন ১ কেজি, থিয়োভিট ১ কেজি সেচ চাষের সময় জমিতে ব্যবহার করে বলে জানা গেছে।পাহাড়পুর ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামের মাসুদ জানান, এক বিঘা জমিতে সার এবং ওলের বীজে প্রায় ১২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আগামী বছর বীজের জন্য রেখে প্রায় ৫০ মণ বিক্রি করেছেন হাইব্রিড জাতীয় ওল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কৃষি কর্মকর্তা পরামর্শ দিলে আরো বেশি ফলন হতো। কৃষি কর্মকর্তা পাহাড়পুর বাজারে নেতাদের সঙ্গে বসে থাকেন। জমিতে কৃষকের কাছে আসেন না। কৃষক হাসান জাগো নিউজকে জানান, জমিতে বেশি পরিমাণ জৈব সার দিলে ফলনও বেশি হয়। ভালো ফলন হলে পাঁচ কাঠা জমিতে হাইব্রিড জাতীয় প্রায় ২৫ মণ ওল হবে। কম হলে ১৬ মণের মতো হবে। এবার ১০ কাঠা জমিতে ওলের আবাদ করেছেন। ফলন হয়েছে প্রায় ৩৫ মণ। এছাড়া কৃষক ফুলমিয়া, আজাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রতিটি ওলের ওজন প্রায় ১৫-২০ কেজির বেশিও হয়ে থাকে। বাজারে দামও ভালো। পাইকারি বিক্রি হয় ২৫-২৮ টাকা কেজি দরে। পরিশ্রম কম হওয়ায় লাভও ভালো হয়। তারা জানান, কৃষি কর্মকর্তা সঠিক পরামর্শ দিলে আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে আবাদ করবেন।বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুক্তার হোসেন জাগো নিউজকে জানান, পাহাড়পুরে প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক আছেন। কৃষকদের মধ্যে পজেটিভ নেগেটিভ থাকবেই। যারা আমার পরামর্শ গ্রহণ করে তাদেরই পরামর্শ দেই। আর যারা নেগেটিভ তাদের পরামর্শ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। পরামর্শ দিলে বাস্তবায়ন করেন না। তখন আর পরামর্শ দেয়ার দরকার মনে করি না।বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাহেলা পারভীন জাগো নিউজকে জানান, কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়। ওলের ক্ষেত্রে কীটপতঙ্গ ও রোগবালাইয়ের তেমন কোনো সমস্যা নে

Advertisement

ই। তবে মাঝে মাঝে লিফ বস্নাইট (পাতা ও ডগা পঁচা রোগ), ছত্রাক, গোড়া পঁচা রোগ, মোজাইক রোগ ও কলার রট দেখা দেয়। অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কেউ যদি আমাকে লিখিত অভিযোগ করে তার পর দেখা যাবে।নওগাঁ জেল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জাগো নিউজকে জানান, ওল চাষে পরিশ্রম কম হওয়ায় লাভ বেশি পাওয়া যায়। এবার জেলায় স্বল্প পরিমাণে ওলের আবাদ করা হচ্ছে। আগামী বছরে ওল চাষের আবাদ আরো বাড়বে বলেও জানা গেছে।আব্বাস আলী/এমজেড/পিআর