দেশজুড়ে

আম্ফানে ভেসে গেছে বাগেরহাটের সাড়ে ৪ হাজার চিংড়ি ঘের

সুপার সাইক্লোন আম্ফানের প্রভাবে বাগেরহাটে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেয়া প্রায় তিন লাখ মানুষ বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। বুধবার রাতে ৭-৮ ফুটের জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার শরণখোলা গ্রামের ৩৫/৩ পোল্ডারের ২শ মিটার রিংবাধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। তবে বৃহস্পতিবার সকালে পানি নেমে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাধ নির্মাণে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ-উজ্জামান।

Advertisement

এছাড়া ঝড়ে ভেসে গেছে জেলার ৪ হাজার ৬৩৫টি চিংড়ি ঘের। ক্ষতি হয়েছে আউস ধানসহ গ্রীষ্মকালীন সবজির।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বৃহস্পতিবার সকালে জানান, বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট অতিক্রম করে। ঝড়ে কিছু কাঁচা বাড়ি ও গাছপালা ভেঙে গেছে। ঝড়ের আগে জেলার ১ হাজার ৩১টি সাইক্লোন শেল্টার ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৩ লাখ জনগণ বৃহস্পতিবার সকালে নিজ নিজ গৃহে ফিরতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদফতর কাজ শুরু করেছ।

বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রঘুনাথ করের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আগেই জেলার বোরো ধান ঘরে তুলে নিতে পেরেছিলেন কৃষকরা। তবে ঝড়ে আউস ও গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisement

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক জানান, ঝড়ে জেলার ৪ হাজার ৬৩৫টি মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। এতে জেলার মৎস্য চাষিরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারিভাবে ক্ষতি ধরা হয়েছে ৯০ লাখ টাকা। তবে বেসরকারি হিসাবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে জানান চিংড়ি চাষিরা। জেলার চিংড়ি উৎপাদনের প্রধান এলাকা মোংলা, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল ও সদর উপজেলায় এই ক্ষতি হয়েছে বলেন তিনি জানান।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বন তলিয়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের কটকা, দুবলা, চরাপুটিয়া ও কোকিলমুনি বন অফিসের কম্পাউন্ডে দল বেঁধে কয়েকশ হরিণ আশ্রয় নিয়েছিল। ঝড়ের অগ্রভাগ সুন্দরবনে প্রথমে আঘাত হানে। রাতভর চলে ঝড়ের তাণ্ডব। প্রাথমিকভাবে বনের ৮টি অফিসের টিনের চাল উড়ে গেছে। এছাড়া ৫টি অফিসের জেটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বনের গাছ পালার সামান্য ক্ষতি হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। বনের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেয়া কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিরাপদে রয়েছেন। ঝড়ে কোনো বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার খবর এখনও পাওয়া যায়নি।

এদিকে রাতভর ঝড়ের তাণ্ডবে বিদ্যুতবিছিন্ন হয়ে পড়ে গোটা জেলা। ঝড়ে গাছপালা পড়ে বিছিন্ন রয়েছে প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ। তবে সকাল থেকেই জেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎসংযোগ সচল করতে কাজ শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা। তবে অধিকাংশ এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা সম্ভব হয়নি বলে জানান ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর কুমার সরকার।

অপরদিকে পল্লি বিদ্যুতের জিএম জাকির হোসেন জানান, অনেক এলাকায় ঝড়ে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে যাওয়ায় জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে সময় লাগবে।

Advertisement

শওকত আলী বাবু/এফএ/জেআইএম