জাতীয়

কেবল ‘বিক্রি বন্ধ হচ্ছে’ খবর ছড়াতেই লাফিয়ে বাড়ল সিগারেটের দাম

রাজধানীর হাজারীবাগের বাসিন্দা আমিনুল । ৫২ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ধূমপানে অভ্যস্ত। এখন দিনে ২০ থেকে ২৫টি গোল্ডলিফ সিগারেট ফুঁকে থাকেন। গতকাল মঙ্গলবার (১৯ মে) রাতে টেলিভিশনের খবরে জানতে পারেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সিগারেটসহ তামাক জাতীয় সব পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ হচ্ছে।

Advertisement

রাত গড়িয়ে সকাল হতেই আমিনুল নিজের মজুদে কয়েক কার্টন গোল্ডলিফ সিগারেট রাখতে ছুটলেন দোকানে। কিন্তু দোকানে গিয়ে দেখলেন এরই মধ্যে সিগারেটের দামে এক প্রকার আগুন ধরে গেছে। প্রতি প্যাকেট গোল্ডলিফ সিগারেটের দাম ২১০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪০ টাকা হয়ে গেছে। তারপরও তিনি ২৪০ টাকা প্যাকেট দরেই ২০ প্যাকেটের একটি কার্টন কিনে নিয়ে আসেন।

আমিনুল জাগোনিউজকে বলেন, করোনাভাইরাস আসার আগে ২০ শলাকার প্রতি প্যাকেট গোল্ডলিফ সিগারেটের দাম ছিল ২০০ টাকা। এরপর করোনার জন্য এর দাম বেড়ে হয় ২১০ টাকা। আর উৎপাদন-বিক্রি বন্ধের খবর ছড়াতেই এর দাম এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪০ টাকা।

হাজারীবাগের সনাতন গড়ের পলাশ স্টোরের মালিক শাহজান আলী জাগোনিউজকে জানান, বেশ কিছু দিন থেকেই তিনি ২১০ টাকা দরে গোল্ডলিফ সিগারেটের প্যাকেট বিক্রি করছেন। কিন্তু গতকাল হঠাৎ তার কয়েকজন ক্রেতা রাতে বেশি করে সিগারেট কিনে নিয়ে যায়। এরপর সকালে পাইকারিভাবে সিগারেট কিনতে গেলে প্রতিটি সিগারেটের দাম গড়ে ১ থেকে ২ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখা হয়। তাই তিনিও প্রতি শলাকা গোল্ডলিফ সিগারেট ১২ টাকা এবং প্রতি প্যাকেট ২৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।

Advertisement

শাহজান আরও জানান, এতোদিন স্টার সিগারেট প্রতি শলাকা ৭ টাকা করে বিক্রি করলেও আজকে বিক্রি করছেন ৯ টাকা করে। এছাড়া সব ধরনের সিগারেটে প্রায় দুই থেকে তিন টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন।

সিগারেটের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানী বাড্ডা এলাকার বুলবুল আহমেদ জাগোনিউজকে জানান, তিনি নিয়মিত গোল্ডলিফ সিগারেট খান। গতকাল ২০টি সিগারেটের এক প্যাকেট কিনেন ২১০ টাকায়। কিন্তু আজকে সেই প্যাকেটের দাম বেড়ে হয়েছে ২৪০ টাকা। দোকানদারকে দাম বাড়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, পাইকারিতে দাম বেড়েছে তাই তারাও দাম বাড়িয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ে মূলত গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকেই। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের তামাকজাত পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন এবং তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলে খবর ছড়ায়, তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারপর ধূমপায়ীদের মধ্যে সিগারেট মজুদের হিড়িক লেগে যায়। এরই সুযোগ নিতে থাকেন বিক্রেতারা।

যদিও মঙ্গলবার রাতের সে খবর এরই মধ্যে বদলে গেছে। কারণ বুধবার (২০ মে) শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তামাকশিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে। এর মাধ্যমে কার্যত সিগারেটসহ তামাক পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না বলেই জানানো হয়।

Advertisement

তার আগে অবশ্য দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও বিতরণ সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কিছুক্ষণ পর শিল্প মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তামাক উৎপাদন এবং তামাকজাতীয় পণ্য সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ মর্মে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবেশিত সংবাদের প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।

“করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বৈশ্বিক অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে যথেষ্ট চাপ তৈরি হয়েছে এবং আগামী দিনে অনিবার্যভাবে এই চাপ বাড়বে। করোনা প্রাদুর্ভাবের ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিল্প-কারখানা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটা স্থবির হয়ে রয়েছে। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক লোকজন বেকার হয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করলেও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সরকারের জন্য দীর্ঘদিন এটি চালিয়ে নেয়া কষ্টকর হবে। এই অবস্থায় বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং শিল্প উৎপাদন বন্ধ করলে, তা হবে জাতীয় মারাত্মক ক্ষতি।”

শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ শিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে। পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাতীয় পণ্য সেবনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল সময়ের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মোটিভেশনাল কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করছে।

এমইউএইচ/এইচএ/এমকেএইচ