ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষা করতে লক্ষ্মীপুরে প্রশাসনের নির্দেশে উদ্ধার কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১৯ মে) সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জেলা সদর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়। কিন্তু বুধবার (২০ মে) ভোরের আলো ফুটতেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ির পথ ধরেছে মানুষ। বাড়ি ফিরে যাওয়া মানুষগুলোর অভিযোগ, তাদের খাবার দেয়া হয়নি। পেটে খুদা নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে বসে থাকতে রাজি নন তারা।
Advertisement
কমলনগর উপজেলায় কাজ করা একাধিক উদ্ধারকর্মীর তথ্য অনুযায়ী, পুরো উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ মানুষকে তারা উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। কিন্তু রাতে কাউকেই খাবার দেয়া হয়নি। যে কারণে সকাল হতেই সবাই চলে গেছেন।
কমলনগরে উদ্ধার কাজে ৬৩টি ইউনিটের অধীনে ৯৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছেন। প্রস্তুত রয়েছে ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র।
কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছয়েফ উল্যাহ জানান, মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়া তার ইউনিয়নে আর কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। তবুও প্রায় ১৫০ জন মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। তাদেরকে শুকনো খাবারও দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভোরে সবাই আবার বাড়ি ফিরে গেছে। তার ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ রয়েছে। তিনটি ওয়ার্ড নদীতে ভেঙে যাওয়ায় তারা আশপাশের ইউনিয়নে বসবাস করছেন।
Advertisement
সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়াল জানান, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে রাজি হচ্ছে না। তবুও গতকাল রাতে প্রায় ২০০ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। কিন্তু ভোর হতেই সবাই চলে গেছে। এই ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ রয়েছে। কিন্তু এর পরিবর্তে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ৮টি।
এদিকে জেলার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রামগতি উপজেলা। এ উপজেলার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন মেঘনা বেষ্টিত চর আবদুল্লাহ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রশাসনের তথ্যমতে এই ইউনিয়নে প্রায় ১৪ হাজার জনসংখ্যা রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২০০ মানুষকে মঙ্গলবার উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্নভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন।
ওই উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে। উপজেলায় ৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এখানে ১০১টি টিমের অধীনে ১ হাজার ৫১৫ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল মোমিন জানান, মঙ্গলবার রাতে তিনি চরআলগি, বড়খেরিসহ ৩-৪টি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। প্রত্যেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের জন্য খাবার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। মানুষকে খাবার দেয়া হয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন তিনি। ঝুঁকিপূর্ণ চর আবদুল্লাহতে পুলিশ, কোস্টগার্ড পাঠিয়ে কিছু মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকেই প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে গেছেন। তবে অধিকাংশই আত্মীয় স্বজনের বাড়িসহ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন বলেও জানান তিনি।
Advertisement
কাজল কায়েস /এফএ/পিআর