দেশজুড়ে

ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনীহা

ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। বরিশালসহ উপকূলীয় অঞ্চলে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও আমাবস্যার প্রভাবে চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-১০ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

Advertisement

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় এসব এলাকায় অতিভারী বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই জেলার চরগুলোর নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে মঙ্গলবার সকাল তৎপরতা চালাচ্ছে প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া মিলছে না। ঝুঁকির আশঙ্কা জেনেও ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না লোকজন।

বরিশাল জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সূত্রমতে, জেলায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনদের জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয়সহ ১০৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৫০ জন লোকের আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে রাত ১০টা পর্যন্ত কয়েকটি কেন্দ্রে ১ হাজার ৪০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দুর্গম চর শেফালী, মাঝের চর, বাগরঝা, চর মেঘা, শিন্নির চরে নারী, শিশুসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

Advertisement

উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন এবং ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকেরা সেখানকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হচ্ছে না।

তারা বলেন, স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট উচ্চতায় পানি উঠলে চরগুলোর নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়। এ অবস্থায় চরগুলোর অনেক বাসিন্দা বিপদে পড়তে পারে।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পিজুস চন্দ্র দে জানান, রাত ১০টা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে রাজি হচ্ছিল না। তবে রাত সোয়া ১০টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর থেকে লোকজন ঘরবাড়ি ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে আসতে শুরু করেছে।

ইউএনও পিজুস চন্দ্র দে আরও জানান, চরাঞ্চলে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে প্রশাসনের লোকজন এবং ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকেরা কাজ করে যাচ্ছেন। প্রয়োজনে সারারাত কাজ করবেন। চর থেকে তাদের নিয়ে আসার জন্য বেশ কয়েকটি ট্রলার পাঠানো হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে তাদের না নেয়া পর্যন্ত তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

Advertisement

ইউএনও পিজুস চন্দ্র দে আরও জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে খিচুড়ি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া করোনার কারণে প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজনদের সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে তদারকি করা হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের প্রস্তত থাকতে বলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তত রাখতে বলা হয়েছে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ মোকাবিলায় সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। লোকজনদের আশ্রয়ের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে বিভিন্ন বিদ্যালয়সহ ১০৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র। যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৫০ জন লোকের আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠক করা হয়েছে। সভায় তিনি ছাড়াও উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সওজ, এলজিইডিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিভাগ, এনজিও ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলার সকল উপজেলার ইউএনও এবং উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রস্তত থাকতে বলা হয়েছে। তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, তাৎক্ষণিক সাহায্যের জন্য ২০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ২ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ২ লাখ টাকা এবং দুই হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট তৈরি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।

এদিকে রাত সোয়া ১০টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। জেলার নদ-নদীর গতিপ্রকৃতি ছিল রাত ১০ পর্যন্ত স্বাভাবিক। ঢেউ ছিল কম। তবে রাত ১০টার পরে ঢেউ বাড়তে থাকে।

সাইফ আমীন/এমআরএম