প্রবাস

কাঁচাবাজারে বিদেশি নয়, চাকরি হবে মালয়েশিয়ানদের

 

মালয়েশিয়ার সবজি বাজারে বিদেশিকর্মী নয়, চাকরি দেয়া হবে স্থানীয়দের। এমন উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্থানীয় অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি বাজারে বহু বিদেশি কর্মীর উপস্থিতি সম্পর্কেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

Advertisement

আবার কেউ কেউ সরকারের এ সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে বলছেন, বিদেশি শ্রমিকদের বাদ দিয়ে স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগ করা হলে পুরো বাজার ব্যবস্থায় এক বিপর্যয় পরিবেশের সৃষ্টি হবে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে বৈধভাবে ২.২ মিলিয়ন-এর সাথে আরও আনুমানিক ৩ মিলিয়ন অবৈধকর্মী কাজ করছে। মহামারি করোনাভাইরাস রোধে গত দু’মাসে অনেকে চাকরি হারিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচাবাজারে কাজ করতে হলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হবে। যেমন দুর্গন্ধ, নোংরা পরিবেশে দীর্ঘ সময় কাজ করে যাওয়া। স্বল্প বেতনে মাসিক বা সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াই টানা কাজ করা। যা স্থানীয় মালয়েশিয়ান নাগরিকরা বেশিদিন এ কাজ করতে পারবে না। কারণ তারা নোংরা পরিবেশে কাজ করতে অভ্যস্ত নন।

ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, স্থানীয় কিছু কর্মচারী ভালো ও অনুগত থাকলেও কাজের প্রকৃতি এবং উচ্চ প্রত্যাশার কারণে তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ এক মাস স্থায়ী হয়নি। সম্প্রতি কুয়ালালামপুরের বৃহত্তম কাঁচাবাজার সেলায়াং ও এর আশপাশের ভবনগুলোতে অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বাজারে বিদেশি শ্রমিকদের কাজ করতে দেয়া হবে না। তার পরিবর্তে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থানীয়দের দ্বারা কাজের ব্যবস্থা করা হবে।

Advertisement

সরকারের পর্যবেক্ষণে বলছে, বাজারে বেশিরভাগ বিদেশিদের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়ে থাকে। স্থানীয় মালিকরা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে এসে ভাড়া সংগ্রহ এবং অন্যান্য তদারকি করতেন। এক্ষেত্রে স্থানীয়রা বলছেন, বাজার পরিচালনায় স্থানীয়রা উপযুক্ত। তবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য কিছু সংখ্যক স্থানীয় মায়েশিয়ান নাগরিকই দায়ী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রবাসী জানান, এই সবজি বাজারে যদি মালয়েশিয়ানদের কাজ দেয়া হয় তাহলে তারা খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না বা তারা এই কাজে বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। ওই প্রবাসী তার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, মালয়েশিয়ানদের জীবন আমাদের মতো সংগ্রামের নয়। তারা এই ধরনের পরিস্থিতিতে কাজে অভ্যস্ত নয়।

আমরা বছরে মাত্র ১০ দিনের মতো ছুটি পাই। আবার কোনো কোনো মাসে একদিনও ছুটি পাই না। আর যদি একদিন ছুটি পাই তবে ওইদিন আমাদের মালিক বলবে দোকান পরিষ্কার করে দিতে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায় দোকান পরিষ্কার করতে আমাদের ওই একদিন ছুটির অর্ধেক দিন কেটে যায়। কিন্তু এই পরিমাণ শ্রম যদি স্থানীয়রা দিতে আসে তাহলে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করবে। যা দোকান মালিকদের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয়ে উঠে না।

 

কুয়ালালামপুর ভেজিটেবল হোলসিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওং কেনং ফ্যাট বলেছেন, সবজিগুলি আনলোড এবং আনতে চার স্থানীয় লোকের ভাড়া নেওয়া দরকার। যেখানে মালয়েশিয়ানসহ প্রায় ১০,০০০ বিদেশীকর্মী, যারা বেশিরভাগ পাইকারি বাজারে কাজ করেছিলেন।

Advertisement

তিনি বলেন, বাজার যেহেতু কখনও কখনও জীবাণুমুক্ত করার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়, তাই আমরা মাসে প্রায় ১২ দিন কাজ করি। কিছু (স্থানীয়) শ্রমিক প্রতিদিন একশ রিঙ্গিত, যা মাসে ১২শ রিঙ্গিত পর্যন্ত আসে। এ বেতনে স্থানীয়রা কাজ করতে অনিচ্ছুক।

বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগবে, যখন প্রতিদিন বাজার আবার খোলা হবে। তবে এখন ফলমূল, শাকসবজি এবং সি-ফুড বিক্রির জন্য প্রায় ৩০ শতাংশ ব্যবসায়ী এখন ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।

কুয়ালালামপুর ফলমূল পাইকার সমিতির সভাপতি এনএম চিন বলেছেন, এমসিও বর্ধিত হওয়ার কারণে স্থানীয়রা সেখানে কাজ করতে ভয় পাচ্ছিল। তিনি বলেন, বাজারে ব্যবসা খুব ধীর এবং বেশিরভাগ সময় আমাদের গ্রাহকদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

কুয়ালালামপুর হোই সিওং ফিশ পাইকার সমিতি, বাজারে বিদেশিকর্মীদের বৈধতায় একটি উপযুক্ত চ্যানেল তৈরি করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছে।

সমিতির চেয়ারম্যান সিং কিয়ান হক বলেছেন, তার মতো ব্যবসায়ীরা বিদেশি শ্রমিকদের কাজের পারমিট পাওয়া মুশকিল। তবে, বিদেশিকর্মীদের উপর নির্ভরতা অনিবার্য কারণ তারা কাজ করতে আরও আগ্রহী। আমরা দু’বছর আগে বিভিন্ন বিভাগে এই সমস্যাগুলি তুলে ধরেছি।

সিং বলেছেন, বিদেশি শ্রমিকদের পরিচালনা করার একমাত্র উপায় ছিল বৈধ করার জন্য একটি সিস্টেম তৈরি করা এবং বাজারে তাদের সংখ্যার সীমা নির্ধারণ করা। তবে বাজারে দেশি এবং বিদেশিকর্মীদের একটি সহাবস্থান থাকা উচিত বলে মনে করছেন সিং।

এমআরএম/এমকেএইচ