গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর গ্রামের হতদরিদ্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী খায়রুল ইসলাম। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। সম্বল বলতে আছে শুধুই ভিটেমাটি। এর উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে টিনের একটি ছাপড়া ঘর।
Advertisement
জন্মের পর থেকে অভাব তার পিছু না ছাড়লেও আত্মপ্রত্যয়ী খায়রুল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও পিছুটান দেননি। জীবিকার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায় নেমেছিলেন। স্থানীয় গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আঙিনায় তিনি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা ও সততায় ভর করে একটি ক্ষুদ্র দোকান চালাতেন। তার দোকানের মালামাল বলতে ছিল নানা ধরনের শিক্ষাউপকরণ। দিন শেষে যা আয় হতো তা দিয়েই চলত আহারের জোগান। অনেকটা দিন এনে দিন খাওয়ার মতো অবস্থা।
করোনার প্রকোপ শুরুর প্রথম থেকে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় খায়রুলের একমাত্র উপার্জনের পথ বিদ্যালয়ের পাশের দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। এমন ক্রান্তিকালে এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম খাওয়া-দাওয়াও। কেননা ঘরের খাবার যে ফুরিয়ে আসছে। খোঁজও নিচ্ছে না কেউ। তাই চোখের অন্ধকারের সাথে তার ভেতরেও এখন অন্ধকার হয়ে আসছে। জাগছে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে মৃত্যুর ভয়।
খায়রুলের ভাষ্য, গ্লুকোমা নামক রোগে হঠাৎ তার দুই চোখের দৃষ্টি চলে গেলে অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে তাকে অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তির পরামর্শ দিয়েছিল। তিনি তা করেননি। তার মতে, এটা বেঁচে থাকার জন্য অনেক অপমানজনক। বিদ্যালয় আঙিনায় ক্ষুদ্র দোকান পরিচালনা করে তার দিনে ১০০ টাকা পর্যন্ত আয় হতো। কোনোমতে সম্মানজনক জীবন ও জীবিকা ছিল তার। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এখন তো দোকানও নেই ঘরের খাবারও নেই। প্রতিমাসে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে সরকারের সামাজিক সহায়তার আওতায় যে ৭০০ টাকা করে পান তা দিয়ে সংসার চলছে না। করোনার এই সময়ে কত মানুষ কত ত্রাণ সহায়তা দিলেও তার ঘরে পৌঁছেনি কোনো খাবার বা সহায়তা।
Advertisement
গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহিনুর রহমান বলেন, খায়রুলের অসহায়ত্ব ও মানবিকতার কথা বিবেচনা করে আমরা বিদ্যালয় আঙিনায় তাকে ক্ষুদ্র দোকান পরিচালনার অনুমতি দিয়েছি। বিদ্যালয়ে আমরা শিশুদের স্বাভাবিক পাঠদানের পাশাপাশি নীতি, নৈতিকতা, সততা ও আদর্শের শিক্ষা দিয়ে থাকি। এই শিক্ষায় আলোকিত হয়ে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দৃষ্টিহীন খায়রুলের দোকান চালাতে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন খায়রুল। এই পরিবারটির কষ্ট লাঘবে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।
শিহাব খান/বিএ/এমকেএইচ