কোভিড-১৯ এর কারণে সারাবিশ্ব এখন নিথর হয়ে পড়ে আছে। না থেকেও উপায় নেই। করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে লক্ষ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু, এভাবে আর কতদিন? বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষকগণ দিনরাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা বা উপায় বের করার জন্য।
Advertisement
করোনায় যারা আক্রান্ত হচ্ছেন শুধু তারাই নন করোনার নেতিবাচক প্রভাব সারাবিশ্বের বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার ও বয়সের মানুষের ওপর পড়ছে। স্কুলে যাওয়া শিশুরা ঘরে বসে বিষণ্ন হয়ে পড়ছে, সাথে বাবা-মাও তাদের সামলাতে গিয়ে মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। পেশার কারণে যাদের বাইরে যেতেই হচ্ছে তারাও সারাক্ষণ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
এরই মাঝে আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষ অসচেতন হয়ে অযথা বাইরে বের হচ্ছে। সরকার অসহায় মানুষের জন্য যে সাহায্যের ব্যবস্থা করেছে তার বণ্টন ঠিকমতো না হলে দরিদ্র অসহায় মানুষকে কারা খাওয়াবে? সাহায্যের একটা বড় অংশ বড় ব্যবসায়ী ও কর্তাদের হাতে যাচ্ছে। বিপদে পড়ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী। তারা এসব প্রণোদনার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
কয়েকদিন আগে অধ্যাপক, কবি, প্রাবন্ধিক ড. মাসুদুজ্জামানের সঞ্চালনায় ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন কথাসাহিত্যিক ও চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানী শাহাদুজ্জামান এবং স্নায়ুবিজ্ঞানী সাদ হান্নান। আলোচনার এক পর্যায়ে শাহাদুজ্জামান বলেন, 'জীবন ও জীবিকার সমন্বয় সাধন করা প্রয়োজন। এমন যাতে না হয় জীবন বাঁচাতে গিয়ে জীবিকা শেষ হয়ে যাচ্ছে অথবা জীবিকা বাঁচাতে গিয়ে জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কার হতে সাধারণত এক থেকে দেড় বছর লেগে যায়।' তার এ কথার সাথে গলা মেলালেন সাদ হান্নান। তিনি আরও বললেন, 'এই সময়টাতে যথাসম্ভব সচেতন থেকে আমাদের ভাইরাসের সাথে সহাবস্থান করতে হবে।'
Advertisement
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তিন দিন আগে ঘোষণা দিয়েছে যে করোনাভাইরাস একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয়, এই ভাইরাসকে সঙ্গী করেই আমাদেরকে বাঁচতে হবে।
আমার মতে, আমরা যদি সচেতন থেকে আতঙ্ক কাটিয়ে উঠে ঘরে এবং প্রয়োজনে বাইরে একটা স্বাভাবিক জীবন চিন্তা করি, তবে, করোনাপূর্ববর্তী পৃথিবীর চেয়ে একটি অধিক সচেতন, সভ্য ও সুন্দর পৃথিবী পাবো। আমাদের কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে আমরা কীভাবে যেকোনো রোগের মোকাবিলা করতে পারি তা কমবেশি শিখে গেছি, যেমন, ভালো খাদ্যাভ্যাস, শরীর চর্চা, স্পর্শবর্জিত সাধারণ যোগাযোগ।
মানুষের মানবিকতা ও হৃদ্যতাকেও নাড়া দিয়ে যাচ্ছে এই করোনাভাইরাস। আমরা একটা বিশাল ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এটা সত্য, কিন্তু, আশার কথা হলো, এর ফলে আগের চেয়ে মানুষ বেশি সচেতন, সভ্য, মানবিক ও হৃদায়ক হবে।
লেখক : শিক্ষক, গবেষক।
Advertisement
এইচআর/বিএ/জেআইএম