রাজনীতি

১০ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ক্ষেতমজুর সমিতির স্মারকলিপি

করোনা মহাসংকটে বিপন্ন ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরদের বাঁচাতে ১০ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি। সোমবার (১৮ মে) স্মারকলিপি প্রদানের আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একই দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

Advertisement

সমিতির সভাপতি ডা. ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা, সহ-সাধারণ সম্পাদক অর্ণব সরকার, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোতালেব হোসেন ও লিটন নন্দী।

এছাড়াও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সোহেল আহমেদ, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, এস এম শুভ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কল্লোল বণিক প্রমুখ।

মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের রুটি-রুজির পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই পরিবার নিয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় তাদের দিন পার করতে হচ্ছে। একদিকে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক, অন্যদিকে ক্ষুধার তাড়নায় ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুররা এখন দিশেহারা। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে দ্রুতই পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ হয়ে উঠবে এবং না খেতে পেয়ে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটবে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। মানুষ বাঁচাতে অবিলম্বে সরকারকে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

Advertisement

মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে আগামী ২০ মে সারাদেশের জেলা-উপজেলায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

মানববন্ধন শেষে ১০ দফা দাবিতে সমিতির নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন। তাদের দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দুই কোটি কর্মহীন দুস্থ পরিবারের তালিকা করে প্রয়োজনে সেনা-সহায়তায় ঘরে ঘরে আগামী তিন মাস বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা, তালিকা করার কমিটিতে ক্ষেতমজুর প্রতিনিধি রাখা, ইউনিয়ন পরিষদের অফিসগুলোতে সর্বসম্মুখে তালিকা টাঙিয়ে দেয়া; স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসলে, খসড়া তালিকাটিকে যাচাই করে দেখার জন্য অন্তত সাত দিন তা জনসম্মুখে রাখার পর সেই তালিকা চূড়ান্ত করে, তালিকাভুক্ত দুই কোটি পরিবারকে স্থায়ী রেশনিং ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং নিয়মিতভবে তাদেরকে ‘কন্ট্রোল দামে’ রেশন প্রদান; করোনা মোকাবিলা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য ক্ষেতমজুরদেরকে সাত দিনের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগপূর্বক ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা গণ-ব্রিগেড’ গঠন করা; এ সময়কালে করোনাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গ্রামের গরিব মেহনতি পরিবারের সদস্যদের জন্য বিনামূল্যে ঔষধ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাসহ কর্মক্ষেত্রে ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; করোনাকালীন ও বজ্রপাতে কারো মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তির পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা প্রদান; মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অথবা উপযুক্ত ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা; ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরদের দৈনিক মজুরি কমপক্ষে ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সম-কাজে সম-মজুরি নিশ্চিত করা; ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরদের কর্মসৃজন প্রকল্প, সামাজিক সুরক্ষা ভাতা, খাদ্য নিরাপত্তা (পল্লী রেশনিং) এবং নিখরচায় শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য আগামী বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা; গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে গরিব শ্রমজীবী মানুষের কাছ থেকে ‘তোলা’ আদায় বন্ধ করা, গ্রামে-গঞ্জে রিকশা, ভ্যান, ভটভটি, অটোচালকদের কাছ থেকে বেআইনি চাঁদা আদায় বন্ধ করা; গ্রামের প্রান্তিক কৃষক, কিংবা অল্প জমি লিজ বা ভাড়া নিয়ে যেসব কৃষক ধান উৎপাদন করেছেন, তাদের কাছ থেকে সরাসরি সরকার বেঁধে দেওয়া ২৬ টাকা কেজি দরে ধান ক্রয় করা, কৃষকদের জন্য ঘোষিত সরকারি প্রণোদনার টাকা সরাসরি খোদ কৃষককে প্রদান; ক্ষেতমজুরদের সব ঋণ/ কিস্তি (মহাজনি, এনজিও, ব্যাংক ঋণ) মওকুফ করাসহ করোনা পরবর্তী সময়ে তাদের জন্য বিনা মর্টগেজে সুদমুক্ত সরকারি ঋণ প্রদান।

এফএইচএস/এমএফ/পিআর

Advertisement