বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ধেয়ে আসায় মঙ্গলবার বিকেল থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া শুরু হবে। সোমবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়র সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।
Advertisement
শাহ কামাল বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি এখন যে গতিতে এগিয়ে আসছে তাতে এটি বুধবার সকাল নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তাই আগামীকাল বিকেল থেকে হয়তো উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া শুরু হবে।
তিনি বলেন, রোজার দিন এটা মাথায় রেখেই আমরা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেব। আজকে বিপদ সংকেত ঘোষণা দিলে মানুষ প্রস্তুতি নেবে। আজকে রাতে ঘরে থাকবে। আশ্রয় কেন্দ্রে আনার কিছু নিয়ম আছে। আগে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আসা, গর্ভবতী নারীদের নিয়ে আসা, নারী ও শিশুদেরকে নিয়ে আসা। পুরুষ লোক অনেকে হয়তো ইফতার করে রওয়ানা দেবে।
মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়াসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, এবার আবার সামাজিক দূরত্ব মেনে আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা দিতে হবে মানুষকে। এজন্য গাদাগাদি করে যাতে না থাকে এজন্য আমরা স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে নিয়েছি।
Advertisement
'উপকূলীয় এলাকায় আমাদের ৫ হাজার সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। এবার শুধু এই ৫ হাজারের মধ্যেই মানুষ আশ্রয় নেবে না। এ বছর আশ্রয় কেন্দ্র অনেক বেড়ে যাবে। আমরা ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করে ফেলেছি। আর আমাদের ৫ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রও প্রস্তুত।'
এদিকে এই ঘূর্ণিঝড় সরাসরি সরাসরি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
শাহ কামাল বলেন, 'আমাদের ৫ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে সাধারণভাবে ২০ থেকে ২১ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারে। এবার করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যবহার করছি। যাতে খুব বেশি গাদাগাদি না হয়, ফ্যামিলি ওয়াইজ যাতে থাকতে পারে।'
বাংলাদেশের মতো ঘূর্ণিঝড়ের আম্ফানের গতিপথের দিতে চোখ রাখছে ভারতও। দেশটির আবহাওয়া দফতরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তিশালী ঝড়ে পরিণত হবে।
Advertisement
সোমবার (১৮ মে) সকাল ৬টায় বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি আজ (১৮ মে) সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ১৯ মে (মঙ্গলবার) শেষরাত থেকে ২০ মে (বুধবার) বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেই সাথে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
আরএমএম/এনএফ/জেআইএম