মাশরাফির হাতের ব্রেসলেটটি ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তার হাতে শোভা পাচ্ছিল গত ১৮টি বছর। সেই প্রিয় জিনিসটিই তিনি করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য নিলামে তুললেন। সেটা বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের জন্য ব্যায় করা হবে।
Advertisement
অবশেষে সেই ব্রেসলেটটি নিলামে তোলা হলো আজ রাত সাড়ে ৯টায়। অকশন ফর অ্যাকশনের মাধ্যমে। ৫ লাখ টাকা থেকে শুরু হয় সেই নিলাম। এরপর থেকে ২ লাখ, ৫ লাখ করে বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত ব্রেসলেটটি বিক্রি হলো ৪২ লাখ টাকা।
অবিশ্বাস্য দামে ব্রেসলেটটি কিনে নিয়েছে বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ )। তাদের পক্ষে নিলামে অংশ নেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম।
কিভাবে ব্রেসলেটটি কেনা হলো, সে বর্ণনা যখন দিচ্ছিলেন মোমিনুল ইসলাম, তখনই ব্রেসলেটটি খুলে মাশরাফি বলেন, ‘আমি এটা অলরেডি আপনার জন্য খুলে ফেলেছি। এটা আপনার জন্যই, ইনশাআল্লাহ। এখানে রাখলাম (সামনে টেবিলের ওপর রেখে)। আপনিসহ আপনার সঙ্গে যারা ছিল তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
Advertisement
এরপরই সঞ্চালক আরিফ আর হোসাইন বলেন, ‘মোমিন ভাই, আপনাদের প্ল্যান কি? এই ব্রেসলেটটি কি বাধাই করে রাখবেন, না কি করবেন?’
জবাবে মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই যে ব্রেসলেটটা, আমার কাছে যেটা মনে হয়ে যে, এই একটা জিনিস আপনার খুব প্রিয়। ১৮ বছর ধরে আপনার হাতে আছে এবং এই ব্রেসলেটটা আপনার হাতেই মানায়। আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সংগঠন, আমরা চাই আপনাকে এই ব্রেসলেটটা উপহার দিতে। আমরা চাই আপনি আমাদের এই উপহারটা গ্রহণ করবেন।’
সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যান মাশরাফি। বিস্মায়াভিভূত হয়েই তিনি বলেন, ‘থ্যঙ্কইউ মোমিন ভাই, থ্যাঙ্কইউ ভেরি মাচ। তবে আপনারা নিলে আমার এক ফোটাও কষ্ট হবে না। আসলে এটা আমি আগেও বলেছি। আপনাদের উদ্দেশ্য এবং আমাদের উদ্দেশ্য একটি জায়গায়, মানুষদেরকে কিছুটা ভালো রাখা। একই সঙ্গে এটা একটা সম্মান। আপনারাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনাদের কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো জানি না। আপনার কাছে থাকলে আমি একটুও কষ্ট পাবো না।’
মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যেটা চাই, একটা বেলা আপনি আমাদের সঙ্গে কাটাবেন। আমরা একটা ছোট্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা চাই মাশরাফিকে ফিরিয়ে দিতে।’ আরিফ আর হোসাইন বলেন, ‘ছোট্ট অনুষ্ঠান নয়, আমরা চাই, সব কিছু ঠিক হোক, একটি বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটি মাশরাফি ভাইয়ের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হোক।’
Advertisement
মোমিনুল ইসলাম বললেন, ‘অবশ্যই। আমাদের ক্রান্তিকাল কেটে যাক। আমরা আবার সবাই বের হয়ে আসবো ঘর থেকে। সে সময় অবশ্যই একটা বড় করে অনুষ্ঠানই করা হবে। ম্যাশকে সম্মান দেয়ার জন্য আমাদের যা করার দরকার, সেটা করাটাই এ জাতির কর্তব্য।’ মাশরাফি বলেন, ‘মোমিন ভাই আপনি আগেও অনেক কিছু করেছেন। আজকে যেটা করলেন, অসম্ভব ভালো লাগছে। অসম্ভব ভালো লাগছে, সত্যি কথা। পরে যেটা বললেন, সেটাও অনেক ইমোশনাল আমার জন্য। আপনাদের সম্মানেই বলতে চাই, যেহেতু চেয়েছেন একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, তাহলে সেটা আপনাদের চাওয়া মতোই হবে। তবে তার আগে এটা আমি আর হাতে নেবো না। যেদিন আপনারা আমার হাতে পরিয়ে দেবেন, সেদিনেই হাতে নেবো।’
মোমিনুল ইসলাম বলেনম ‘না, না। এটা আপনার কাস্টোডিতে থাকলো। আপনি এটা ব্যবহার করেন। যেদিন আমাদের দেখা হবে, সেদিন আমাকে দেবেন। যেহেতু বিডে আমরা উইন করেছি। এরপর আমাদের যে কমিটমেন্ট, সেটা ভিন্ন। তবে, এখন থেকে যে পর্যন্ত না আমাদের দেখা না হয়, সে পর্যন্ত আপনার জিম্মায় আমি রাখলাম। আপনার হাতেই যেন সেটা দেখা যায়। আমরা চাই, সারাজীবনই এটা আপনার হাতে থাকুক।’
এরপরই ব্রেসলেটটা আবার মাশরাফি তার নিজের হাতে পরে নেন।
আইএইচএস/