যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকার পর করোনার সংক্রমণ এখন লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ব্রাজিল, মেক্সিকো ও পেরুর মতো দেশগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে গোটা লাতিন অঞ্চল।
Advertisement
করোনায় আক্রান্তের সংখ্যায় ইতালি ও স্পেনকে ছাড়িয়ে গেছে ব্রাজিল। দেশটিতে এখন মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৩ হাজার ১৪২ জন; যা গোটা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। গতকাল নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ১৪ হাজার ৯১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী।
শুধু আক্রান্ত নয় মৃত্যুতেও ব্রাজেলের অবস্থা বিপর্যস্ত। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, ব্রাজিলে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৮১৬ জনের মৃত্যুর পর করোনায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা এখন ১৫ হাজার ৬৩৩। যা ওই অঞ্চলে সর্বোচ্চ।
তবে ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের তুলনায় দেশটিতে করোনা পরীক্ষার হার অনেক কম। সরকারি অনিচ্ছার কারণেই কোভিড-১৯ পরীক্ষা কম হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ব্যাপকহারে পরীক্ষা করা যায় তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেকটা বাড়বে।
Advertisement
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই সতর্ক করে বলেছিল, করোনা প্রাদুর্ভাবের পরবর্তী ‘হটস্পট’ হবে ব্রাজিল। সংস্থাটির সেই সতর্কতা এখন সত্যি হতে চলেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাে বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকার পর লাতিন অঞ্চলের এই দেশটি নতুন মৃত্যুপুরী হয়ে উঠছে। ব্রাজিলের কট্টর ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো লকডাউন বিরোধী। আর এই মতবিরোধের কারণেই গত এপ্রিলে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী লুইজ হেনরিক মেন্ডেটা। তারপর নতুন যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন তাকেও গত পড়শু বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট।
ল্যাতিন আমেরিকার অপর দেশ মেক্সিকোতে গত বৃহস্পতিবার একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। কিন্তু গতকাল শুক্রবার সেই রেকর্ড ভেঙ্গে আবারও সর্বোচ্চ শনাক্ত হওয়ার পর দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৪৭ হাজার ১৪৪ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সীমান্ত লাগোয়া এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ৪৫ হাজার ৪৫ জন মারা গেছেন। তবে গোটা বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর হারের তুলনায় দেশটিতে তা কিছুটা বেশি। এছাড়া মেক্সিকোতে আগে থেকে অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাবও ছিল বেশি।
মেক্সিকোতে এমন সময় রোগী বাড়তে শুরু করল, যখন দেশটি লকডাউন শিথিল করে জনজীবন স্বাভাবিক করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির সরকার চাইছে, স্থবির হয়ে থাকা অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে। অনেক কারখানা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের কারখানাগুলো খুলতে মরিয়া তারা।
Advertisement
এছাড়া লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ পেরুতে এখন পর্যন্ত ৮৮ হাজার ৫৪১ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে প্রতিদিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩১ জন নিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা এখন ২ হাজার ৫২৩ জন।
এদিকি চিলিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ৪২ হাজার মানুষ। তবে আক্রান্তের তুলনায় দেশটিতে কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটা কম। এখন পর্যন্ত ৪২১ জন মারা গেছে। তবে আক্রান্ত বাড়ছেই। গতকালও প্রায় ২ হাজার জন করোনা পজিটিভি হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।
এসএ