হাওর অঞ্চল কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা থেকে হাইকোর্টের একটি মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল। রোববার দুপুরে বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি শুনানিতে অংশ নেন।
Advertisement
কোর্ট প্রাঙ্গণের বাইরে, গ্রামের বাড়িতে বসে হাইকোর্টে জামিন শুনানি করা যাবে এমনটি কখনও নিজেও ভাবেননি এই আইনজীবী। ভার্চুয়াল কোর্ট প্রতিষ্ঠার কারনেই এটি সম্ভব হয়েছে। গ্রামের বাড়িতে বসে মোবাইলের মাধ্যমে জামিন শুনানি করতে পেরে আপ্লুত তিনি। আর হাওর অঞ্চল থেকে শুনানিতে যুক্ত হওয়ায় হাইকোর্টের বিচারক ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলও অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সালের প্রশংসা করেছেন।
আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল বলেন, ‘এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ভার্চুয়াল কোর্ট একটি নবদিগন্তের সূচনা।এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।'
করোনায় লকডাউনে পড়ে দীর্ঘ দিন ধরে কিশোরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল। দীর্ঘ দিন আদালত বন্ধ থাকায় চাপও বাড়ছিল। এরমধ্যে ভার্চুয়াল কোর্ট খোলার সিদ্ধান্তে আলোর মুখ দেখেন জামিনের অপেক্ষায় থাকা বিচারপ্রার্থীরা।
Advertisement
ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় একজন চিকিৎসকের জামিন চেয়ে কিশোরগঞ্জে বসেই অনলাইনে আবেদন করেন আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল।
তার এই জামিন আবেদনের পর শুনানির জন্য পূর্বেই তারিখ ঠিক করে দেন বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চুয়াল আদালত।
আদালতের দেওয়া সময় অনুযায়ী আজ রোববার (১৭ মে) যথাসময়ে অনলাইনে সংযুক্ত হন আইনজীবী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
হাওর অঞ্চল থেকে ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি বিষয়ে আইনজীবী জামিউল হক জাগোনিউজকে বলেন, আইসিটি আইনের মামলায় একজন আসামির জামিন আবেদন ভার্চুয়াল কোর্টে গত সপ্তাহে করেছিলাম।
Advertisement
এর মধ্যে শুক্রবার (১৫ মে) আমাকে ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হল,১৭ মে ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে একটি অ্যাপসের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নিতে হবে। সেই অনুযায়ী আমি প্রস্তুতি নিলাম। ভার্চুয়াল বেঞ্চের পাঠানো লিঙ্কে কল করলাম। আমার মামলার আইটেম ছিল ৯ নম্বর। তখন থেকে আমি অ্যাটর্নি জেনারেলসহ অন্যদের শুনানি অডিওতে শুনছিলাম। তারপর পৌনে ১টার দিকে আমাকে কানেক্ট করা হলো। হাওর এলাকা হওয়ার কারণে হয়তো নেটওয়ার্ক আপ-ডাউন করছিল। এক পর্যায়ে আদালত আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনার কি নেটওয়ার্ক প্রবলেম ?
ঘটনার বিবরণে তিনি আরও বলেন, আমি বললাম, মাইলর্ড আমি তো গ্রামে আছি। আদালত বললেন, আপনার গ্রাম কোথায়? আমি বললাম, কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওর অঞ্চলে। আদালত বললেন, রাষ্ট্রপতির এলাকা।অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হাসি দিলেন। তারা বললেন, রাষ্ট্রপতির এলাকা এইজন্যই গ্রামে থেকেও ভার্চুয়াল আদালতে শুনানিতে অংশ নিতে পারছেন। আদালত ও অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাপ্রিশিয়েট করলেন। শুনানি হলো। মামলার নথিপত্র কম থাকায় আদালত আবারও শুনানির দিন ধার্য করেছেন। শুনানির দিন ইমেইলের মাধ্যমে আমাকে জানানো হবে।
আইনজীবী জামিউল হক ফয়সালের কাছে সুদূর কিশোরগঞ্জে বসে হাইকোর্টে শুনানি করার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এই প্রথম আমি ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি করলাম। সত্যি অন্যরকম একটা অনুভূতি। কখনোই ভাবিনি কোর্টে না গিয়ে বাড়িতে বসেই মামলার শুনানি করা যাবে। এ অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। খুবই ভালো লাগলো। লকডাউনে ঘরবন্দি থাকলেও মামলা চালিয়ে নেয়া যাবে।
এ আইনজীবী বলেন, প্রথমদিন একটু ভিন্ন অনুভূতি থাকলেও আমার মনে হয়, বাসায় বসে আরও ভালো করে সাবমিশন রাখা যাবে। সকল আইনজীবীকে প্রযুক্তিগত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে এর আওতায় আনতে পারলে সবাই উপকৃত হবে বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে হাইকোর্টের ভার্চুয়াল কোর্টে প্রথম জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, ভার্চুয়াল কোর্ট চালু এদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভার্চুয়াল কোর্টে প্রথমে আবেদন করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। সর্বোপরি এটি একটি নতুন ব্যবস্থা। এর সুবিধা-অসুবিধা থাকবেই। ধীরে ধীরে এর পূর্ণতা পাবে। তাছাড়া সাংবিধানিক কোর্ট এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হতে পারে না। এজন্য এটি চালু করা অত্যন্ত জরুরি ছিল।
প্রথম ভার্চুয়াল কোর্টে রিট আবেদনকারি আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম লিটন বলেন, সব কিছু বন্ধ থাকার পরও ভার্চুয়াল কোর্ট থাকায় হালদায় ডলফিন হত্যা বন্ধে আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি। এটি ভার্চুয়াল কোর্ট থাকার কারণেই সম্ভব হয়েছে। আদালতে না গিয়ে বাসায় বসে শুনানি করে আদালতের আদেশ প্রাপ্তির অনুভূতি আসলেই অন্য রকম। ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি করে খুবই ভালো লেগেছে।
করোনার কারনে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ ছিল দেশের সব আদালত। অবশেষে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গত ১১ মে থেকে শুরু হয় ভার্চুয়াল আদালত। প্রতিদিন হাইকোর্টসহ দেশের বিভিন্ন ভার্চুয়াল আদালত থেকে শত শত মানুষের জামিন হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ মে ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ তৈরি করতে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা। পরে সেটি অধ্যাদেশ জারি করতে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর আইনমন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করে। এরপর সুপ্রিমকোর্ট ভার্চুয়াল আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু করেন।
এফএইচ/এনএফ/এমএস