আন্তর্জাতিক

‘বেঁচে থাকব ঠিক করে নিয়েছিলাম বলেই বেঁচে আছি’

সেই কবে সমুদ্রপারের উপন্যাসে হেমিংওয়ে বলেছিলেন, ‘মানুষ হেরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়নি।’ ঘোর বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়ার দুঃসাহস মানবজাতিই দেখিয়েছে বারবার। আজন্মকাল যাদের আমরা বাতিলের দলে রেখে দিয়েছি, সেই বৃদ্ধ মানুষগুলোই যেন আজ অদম্য জীবনীশক্তিকে হাতিয়ার করে নতুন করে বাঁচতে শেখাচ্ছে আমাদের এই করোনার কালবেলায়।

Advertisement

যমের দুয়ারে কাঁটা বিছিয়ে আসা তেমনই একজনের সঙ্গে সম্প্রতি আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন নিউ জার্সির গভর্নর ফিলিপ মারফি। যেখানে মহামারীর সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চলে বৃদ্ধদের দুর্বল হয়ে আসা শরীরের ওপর, সেখানে ১০৮ বছরের সিলভিয়া গোল্ডশোলের বেঁচে ফেরা যেন রূপকথার।

১০ হাজার লাশ কাঁধে নিয়ে ধুঁকতে থাকা নিউ জার্সিতে এই জীবনের গল্পটাই বাস্তব হয়ে উঠুক এমনটাই চায় সবাই। মারফির ভাষায়, এক দূরন্ত জীবন, প্রাণশক্তিতে ভরপুর, দূরন্ত মনোবল, আমাদের বাকি সকলের কাছে এক দুর্দান্ত উদাহরণ। তবে মহামারীকে তুড়ি মেরে জীবনে ফেরার অভিজ্ঞতা সিলভিয়ার জীবনে এই প্রথম নয়। সম্ভবত আমেরিকার সর্বাধিক বয়সের করোনা বিজয়ী দেখেছেন স্প্যানিশ ফ্লু, দুটি বিশ্বযুদ্ধ, গ্রেট ডিপ্রেশন এমন সব ভয়ানক আতঙ্কের দিনগুলো।

স্পেনের ১১৩ বছরের বৃদ্ধা হয়ত বিশ্বের নিরীখে সর্বপ্রথম। কিন্তু সিলভিয়ার এই আরোগ্যসংবাদ এখন নিউ জার্সির হাঁড়ির খবর। 'বেঁচে থাকব ঠিক করে নিয়েছিলাম বলেই বেঁচে আছি' এমনটাই বলছেন সিলভিয়া সেরে ওঠার সিক্রেট হিসেবে। শুধু তাই নয় স্বয়ং গভর্নর মারফির ফোন গিয়েছে তার কাছে।

Advertisement

মজা করে মারফি বলেছেন, নিজের নির্বাচনী প্রচারের নেতৃত্ব সিলভিয়ার হাতে তুলে দিতে চান তিনি। বিন্দুমাত্র না ঘাবড়ে মজা করেছেন বৃদ্ধাও। রাজি হয়েছেন অক্লেশে। হঠাৎ পাওয়া এই খ্যাতি সিলভিয়ার বিশ্রামের বেজায় ঘাটতি ঘটালেও ক্লান্ত নন তিনি। এপ্রিলে সংক্রমণ হওয়ার পর দীর্ঘদিন আইসোলেশনে ছিলেন।

সিলভিয়া মনে করেন, ভালবাসাই একমাত্র আকাঙ্ক্ষিত হতে পারে রুক্ষ সময়ে। প্রসঙ্গত নিউ মেক্সিকোর ১০৮ বছরের আর একজন বৃদ্ধও সম্প্রতি সেরে উঠেছেন করোনার সংক্রমণ থেকে; যিনি সিলভিয়ার চেয়ে বয়সে কয়েক মাসের ছোট।

সময়ের নিরীখে ধূসর হয়ে আসা এই মানুষগুলোই যেন আশার আকাশী রংয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে হতাশার দলে ভিড়ে যাওয়া আমাদের প্রজন্মকে। জার্সি শোর খুলে যাচ্ছে। খুলেছে পার্ক। লকডাউন উঠছে ধীরে ধীরে। সংক্রমণ নয়, আরও একবার ফুসফুসে আমরা ভরে নিচ্ছি উদ্দীপনা, অফুরান প্রাণবায়ু। আনন্দবাজার।

এসআইএস/এমএস

Advertisement