করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) মহামারির এই সময়ে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশনা দিলেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর আওতায় এলেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসতে নারাজ। এ অবস্থায় ক্লাস, পরীক্ষা অনলাইনের আওতায় আনতে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি।।
Advertisement
ইউজিসি থেকে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনার পরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় দূরশিক্ষণে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর আওতায় আসলেও পাবিলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা বাস্তবায়ন করছে না। এমন পরিস্থিতিতে একটি নীতিমালা জারি করা হলে সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই অনলাইনের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে। এ জন্য শনিবার (১৬ মে) দেশের সব পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য বরাবর মেইল দিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
মেইলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ভূমিকা ও কার্যকারিতা নিয়ে জরিপের অংশ হিসেবে প্রশ্ন করা হয়েছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এখনও ওই প্রশ্নপত্র পূরণ করে পাঠায়নি সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, বিভাগীয় প্রধান এবং ফ্যাকাল্টি সদস্যদের তা পূরণ করে আগামী ২০ মের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ রোববার (১৭ মে) জাগো নিউজকে বলেন, সব নীতিনির্ধারককে নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও অনেকে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে টালবাহানা শুরু করেছেন। অনেকে ছুটির দিনে বাড়তি ক্লাস করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। অথচ মূল সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে যাচ্ছেন। দূরশিক্ষণ কার্যক্রমকে একটি নীতিমালায় রূপ দেয়া হলে তা সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই প্রযোজ্য হবে।
Advertisement
তিনি বলেন, এটি হলে জরুরি প্রয়োজনে নিয়মের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে। কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমকে এ সংক্রান্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় গত ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের ক্লাসগুলো সংসদ বাংলাদেশ টিভিতে নিয়মিতভাবে দেখানো হচ্ছে। বিভিন্ন স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে সে বিষয়ে গত ৭ মে একটি নির্দেশনা জারি করে ইউজিসি।
তবে মহামারির কারণে বন্ধের মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ফলে সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়।
Advertisement
এ পরিস্থিতিতে অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমকে আহ্বায়ক করে ১৬ মে আট সদস্যের কমিটি করে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব দেয় ইউজিসি।
কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন ও অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরকে এই কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামানকে কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদ্যমান শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে এই কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে সুপারিশ আকারে জমা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
দেশে বর্তমানে ৪৬টি সরকারি এবং ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি।
এমএইচএম/জেডএ/এমকেএইচ