জাতীয়

সর্বোচ্চ শনাক্তের নতুন রেকর্ড, মৃত্যু আরও ১৪ জনের

দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ৩২৮ জন মারা গেলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ২৭৩ জন, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২২ হাজার ২৬৮ জনে।

Advertisement

রোববার (১৭ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

তিনি নতুন যুক্ত হওয়া একটিসহ মোট ৪২টি ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও আট হাজার ৫৭৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় আট হাজার ১১৪টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ ৭৫ হাজার ৪০৮টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও এক হাজার ২৭৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ২৬৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১৪ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩২৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২৫৬ জন। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন চার হাজার ৩৭৩ জন।

নতুন করে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ ও একজন নারী। ১৩ জন হাসপাতালে এবং একজন বাসায় মারা গেছেন। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের নয়জন এবং চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচজন রয়েছেন। ঢাকা বিভাগের মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালে পাঁচজন, কেরানীগঞ্জ, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও শরীয়তপুরে একজন করে মারা গেছেন। আর চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রামে চারজন এবং কুমিল্লায় একজন মারা গেছেন। বয়সের দিক থেকে একজন ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী, একজন ত্রিশোর্ধ্ব, দুজন চল্লিশোর্ধ্ব, তিনজন পঞ্চাশোর্ধ্ব, তিনজন ষাটোর্ধ্ব, তিনজন সত্তরোর্ধ্ব এবং একজন ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সী।

Advertisement

গত শনিবারের (১৬ মে) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ জন মারা গেছেন। ছয় হাজার ৭৮২টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯৩০ জনের দেহে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু কমলেও বেড়েছে শনাক্তের সংখ্যা। শুধু বাড়েইনি, এটি ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তেরও রেকর্ড। এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ২০২, যা জানানো হয়েছিল গত শুক্রবারের (১৫ মে) বুলেটিন

রোববারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ২৭৬ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন তিন হাজার ২৪৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭৪ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন এক হাজার ৬০৫ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় আইসোলেশন শয্যা বেড়েছে ২০০। সারাদেশে এখন আইসোলেশন শয্যার সংখ্যা নয় হাজার ১৩৪টি। তন্মধ্যে রাজধানী ঢাকায় তিন হাজার ১০০টি এবং ঢাকার বাইরে ছয় হাজার ৩৪টি। এসব হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে ৩৩৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০২টি। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০টি আইসিইউ শয্যাও বেড়েছে। আইসিইউ ও ডায়ালাইসিস ইউনিট আরও বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন হাজার ৬৩৪ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার ৫৪৮জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৩৫৮ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন এক লাখ ৯১ হাজার ১৩১ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৪৯ হাজার ৭১৭ জন।

Advertisement

দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬১৭টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ১৬৫ জনকে।

ডা. নাসিমা করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানান বুলেটিনে।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে চলেছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত সোয়া ৪৭ লাখ। মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে ১৮ লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। তারপর দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও।

পিডি/এমইউ/এইচএ/জেআইএম/এমএস