দেশজুড়ে

গরম পানি আর চা পানে করোনা থেকে সুস্থ

ঢাকার আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করতেন মাগুরা সদর উপজেলার মৃগিডাঙ্গা গ্রামের জীবন মন্ডল (২৬)। গত ১৭ এপ্রিল সেখান থেকে মাগুরায় আসেন তিনি। গত ২২ এপ্রিল মাগুরার প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এর পরদিন জেলায় দ্বিতীয় করোনা রোগী শনাক্ত হওয়া শ্রীপুর উপজেলার জোৎ শ্রীপুর গ্রামের অনুপ টিকাদারও জীবন মন্ডলের সঙ্গে একই গাড়িতে আশুলিয়া থেকে মাগুরায় এসেছিলেন।

Advertisement

আক্রান্ত তৃতীয় ব্যক্তি শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের বিপ্লব বিশ্বাসও গার্মেন্টস শ্রমিক। তিনি ২০ এপ্রিল আসেন নরসিংদী থেকে। গত সোমবার (১১ মে) এই তিনজনকেই আনুষ্ঠানিকভাবে করোনামুক্ত ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

করোনা জয়ী তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই এখন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। এমনকি করোনা শনাক্ত হওয়ার আগে ও পরে তারা জ্বর, সর্দি, কাশি বা শারীরিকভাবে অসুস্থ হননি।

মৃগিডাঙ্গা গ্রামের জীবন মন্ডল জানান, গত ১৭ এপ্রিল পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে তিনি একটি মাইক্রোবাসে আশুলিয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত আসেন। সেখান থেকে ফেরি পার হয়ে ইজিবাইকে করে ভেঙে ভেঙে বাড়িতে আসেন। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা পরীক্ষা করলে করোনা শনাক্ত হয়।

Advertisement

তিনি বলেন, করোনা হলেও কিছুই টের পাইনি। যেহেতু আমার কোনো অসুখ হয়নি তাই কোনো ওষুধও খাইনি। খাওয়ার ভেতর শুধু গরম পানি আর চা খাইছি।

একই ধরণের কথা বলেছেন অনুপ টিকাদার ও বিপ্লব বিশ্বাস। তবে শারীরিকভাবে কিছু টের না পেলেও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন এই দুইজন।

জারিয়া গ্রামের বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, আশপাশের লোকজন বহু আজেবাজে কথা বলেছে। কেউ কেউ মারতে পর্যন্ত চাইছে।

করোনা থেকে সুস্থ হওয়া তিনজনই জানান, পরিবারের অন্য সদস্যদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে নিজেরাই আইসোলেশনে থেকেছেন ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছেন। এই সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেছে বলেও জানান তারা।

Advertisement

মাগুরার সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, সুস্থ হওয়া তিন করোনা রোগীকে নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রেখে কিছু ওষুধ সেবনের পাশপাশি নিয়মিত গরম পানি ও চা পানের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। নিয়ম মানায় সুস্থ হয়েছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, মাগুরায় আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই কোনো উপসর্গ নেই। দুই একজনের মৃদু উপসর্গ রয়েছে। তাই এখন পর্যন্ত কাউকেই হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করা হয়নি। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শসহ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৭ মে) সকাল পর্যন্ত মাগুরায় মোট ১৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুজন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের চারজন, পুলিশ সদস্য চারজন ও দুইজন ইউপি চেয়ারম্যান রয়েছেন।

আরাফাত হোসেন/আরএআর/পিআর