সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল ও মার্কেট খোলার নির্দেশনা থাকলেও তা না মেনেই যশোরের বেনাপোল-শার্শায় পুরোদমে চলছে ঈদের কেনাকাটা। সীমিত পরিসরে কেনাকাটার সুযোগে সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই কোথাও। দেড় মাস পর সবকিছু খুলে দেয়ায় সড়ক থেকে শুরু করে ছোট-বড় মার্কেট ও শপিংমলে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়।
Advertisement
বেনাপোল, নাভারণ, শার্শা ও বাগআচড়ার সব দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মার্কেট খুলে দেয়ার পরপরই পুরোনো চেহারায় ফিরেছে বেনাপোল-শার্শা। করোনার ঝুঁকি আমলে নিচ্ছেন না কেউ।
করোনার প্রভাবে দীর্ঘদিন ফাঁকা থাকা রাস্তাগুলো ফিরে পেয়েছে প্রাণ। সড়কের মোড়ে মোড়ে দেখা গেছে যানজট। বন্ধ দোকানপাট ও মার্কেটগুলো খুলে যাওয়ায় ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা সরকারি বিধিনিষেধ মেনে ব্যবসা পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তব চিত্র উল্টো।
বেনাপোলের লালমিয়া সুপার মার্কেট, নূর শপিং কমপ্লেক্স, রহমান চেম্বার, শাহজাহান মার্কেট, ডাবলু মার্কেট, হাজি মোহাম্মদ উল্লাহ মার্কেট, হাইস্কুল মার্কেট, হিরা সুপার মার্কেট, নাভারণের নিউ মার্কেট, তালেব প্লাজা, সোনালী মার্কেট, বাগআচড়ার নিউ মার্কেট, আঁখি টাওয়ার, সুফিয়া প্লাজা ও বাবু মার্কেটসহ বেশিরভাগ মার্কেটে উপচেপড়া ভিড়ে চলছে ঈদের কেনাকাটা। শপিংমলের সামনে জীবাণুনাশক টানেল বুথ বসানোর কথা থাকলেও সেটা করা হয়নি। নেই হাত ধোয়ার কোনো সাবান পানি। পরিবার থেকে শিশুদের নিয়ে বাজারে আসতে নিষেধ করা হলেও তা মানছেন না ক্রেতারা। একের অধিক লোকজন একসঙ্গে হুমড়ি খেয়ে মার্কেটে প্রবেশ করছেন।
Advertisement
নাভারণ এলাকায় দেখা যায়, প্রখর রোদের মধ্যে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দূর পুটখালি থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন আয়শা আক্তার। নাভারণ নিউ মার্কেটের দোকানগুলো ঘুরে দেখছেন তিনি।
আয়শা আক্তার বলেন, ইচ্ছা করেই বাচ্চাদের সঙ্গে করে এনেছি। তাদের পছন্দের পোশাক কেনার জন্য। প্রতি বছর রোজার শুরুতে কেনাকাটা করি। তবে সব ধরনের কাপড়ের দাম গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি। করোনার ঝুঁকি জেনেই কেনাকাটা মার্কেটে এসেছি।
ঝিকরগাছার রাজার ডুমুরিয়া গ্রামের শেফালি আক্তার বলেন, শুনছি আবার মার্কেট বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তাড়াহুড়ো করে এসেছি। মাস্ক আনতে মনে ছিল না। একদিনে আর কী হবে?।
বেনাপোলের দিঘিরপাড়ের কলেজছাত্রী আফিয়া সুলতানা বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াচ্ছি। কিন্তু যখন পোশাক দেখছি তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আমি তখন যাব কোথায়?।
Advertisement
বেনাপোলের লালমিয়া সুপার মার্কেটের ‘আর ফ্যাশন কর্নারের’ মালিক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ঈদবাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। ভিড় এড়াতে মার্কেটে আসা মানুষকে দূরে থাকতে বলেছি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক পরিধান ছাড়া অন্যসব নিয়মের বালাই নেই। দোকানের সামনে নেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে ডিসট্যান্স মার্কিং। বিক্রেতারা ব্যস্ত বিক্রি নিয়ে। ক্রেতারা কোথা থেকে আসছেন, নগর নাকি অন্য উপজেলার তার খোঁজ রাখছে না কেউ। আইডিকার্ড বা পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে বাজারে আসতে বলা হলেও তা দেখার জন্য মার্কেটগুলোতে নেই কোনো ব্যবস্থা। পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছে কোথাও ঠিকভাবে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
তবে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের নির্দেশনা মেনে চলতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পুলক কুমার মন্ডল বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শপিংমল সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হয়েছে। আমরা যতক্ষণ থাকছি ততক্ষণ সবাই আইন মানছেন। চলে আসলেই যেই-সেই।
জামাল হোসেন/এএম/জেআইএম