জাতীয়

বাবার নয়, মা‌য়ের কব‌রে চিরনিদ্রায় ‘বাতিঘর’ আ‌নিসুজ্জামান

আজিমপুর পুরোনো কবরস্থানের প্রধান ফটক থেকে কয়েক কদম এগিয়ে একজন গোরখোদকের কাছে ‘স্যারের কবরটা কোন দিকে?’ জানতে চাইতেই বললেন, ‘কোন স্যার? গতকাল যারে সম্মানের সাথে দাফন করা অইল হেই স্যার।’

Advertisement

‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব পেয়ে এগিয়ে নিলেন সামনের দিকে, ‘আহেন আমার লগে।’ ফটক থেকে সামান্য কিছু পথ যেতেই হাতের ডান পাশে একটু এগোতেই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে চিনিয়ে দেন জাতির বাতিঘর খ্যাত বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের কবরটি।

চারপাশে পিলার দিয়ে ছাদ ঢালাই করা এবং লোহার গ্রিলে পরিবেষ্টিত জমিতে পাশাপাশি দুটি কবর। অনেক পুরোনো বলে পিলারের আস্তর খসে পড়ছে। গ্রিলগুলোতে মরিচা পড়ে জং ধরেছে। একটি কবর পশ্চিমে, অন্যটি পূর্ব দিকে। পশ্চিম দিকের কবরটিই জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের। রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মৃত্যুবরণের পর গতকাল (১৫ মে) তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় এখানে।

মৃত্যুর পর তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানা যায়। সেজন্য সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুবই সীমিত পরিসরে পরিবারের হাতেগোনা কয়েকজন সদস্য ও সরকার-প্রশাসনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ ব্যক্তিত্বকে দাফন করা হয়।

Advertisement

প্রতিবেদক যখন দেখছিলেন কবরটি, তখন পশ্চিম দিকের অস্তমিত সূর্যের কিরণ এসে পড়ছে এর ওপর। কবরের শিয়রে শ্রদ্ধাঞ্জলি লেখা একটি ফুলের তোড়া রাখা।

আজিমপুর পুরোনো কবরস্থানের সহকারী মোহরার নুরুল হুদা জানান, গতকাল সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টায় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের লাশ দাফনের জন্য কবরস্থানে আনা হয়। এ সময় তার ছেলেসহ হাতেগোনা কয়েকজন স্বজন এবং সরকার ও প্রশাসনের ৩০-৪০ জন কর্মকর্তা আসেন। আঞ্জুমানে আল মারকাজুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে লাশ এখানে আনা হয় এবং জানাজা শেষে ওই সংস্থারই লোকজন লাশটি কবরে নামিয়ে যথাযথ নিয়মে দাফন সম্পন্ন করে।

আজিমপুর কবরস্থানে দেয়া তথ্য অনুসারে, এটিএম মোয়াজ্জম হোসেনের ছেলে আনিসুজ্জামানের জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর ২ মাস ২৬ দিন।

জানা গেছে, পৈতৃকভাবে কেনা দুটি কবরে তার বাবা ও মাকে দাফন করা হয়। তাকে দাফন করা হয় মায়ের কবরেই। যদিও আনিসুজ্জামানকে তার বাবার কবরে দাফন করা হয়েছে বলে গতকাল সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়।

Advertisement

সহকারী মোহরার নুরুল হুদা বিষয়টি স্পষ্ট করে জাগো নিউজকে বলেন, আসলে বাবার কবরে নয়, মায়ের কবরে স্যারকে দাফন করা হয়েছে।

এমইউ/এইচএ/জেআইএম