করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক দুই সভাপতি।
Advertisement
বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ ই মাহবুব ও অধ্যাপক মাহমুদ হাসানের পক্ষে গণমাধ্যমে পঠানো এক বিবৃতিতে আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ করাসহ বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার অবকাঠামোতে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভৌগোলিক সম্প্রসারণ করা হয়েছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অনন্য।
জনস্বাস্থ্যের সূচকসমূহ যেমন- শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, শিশুদের টীকা প্রদান, নাগরিকদের গড় আয়ু বৃদ্ধি, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, কালাজ্বর ইত্যাদি রোগ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে। কিন্তু চিকিৎসাসেবার দুর্বল মান, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার অপ্রতুলতা, চিকিৎসার উচ্চব্যয়- এসব কারণে জনমনে অসন্তুষ্টি রয়েছে এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ জনগণ পাচ্ছে না।
Advertisement
এতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মাথাপিছু ব্যয় ও মাথাপিছু ‘জিডিপি বরাদ্দ’ সর্বনিম্ন। বিগত দশকের জিডিপিতে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় ও আনুপাতিক ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। বাস্তবে সময়ের সাথে সাথে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বাড়ছে; বিশেষত বৈশ্বিক মহামারির কারণে এটি এখন অনেক বাড়ানো দরকার। এ বছরও বাজেটে স্বাস্থ্যসেবায় মাথাপিছু ব্যয় ও মাথাপিছু জিডিপি বরাদ্দ সর্বনিম্ন। বিগত দশকেও জিডিপিতে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের আনুপাতিক বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য ছিল না।
সময়ের সাথে সাথে স্বাস্থ্যসেবা খাতে নাগরিকদের নিজস্ব ব্যয়ও অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত চলমান মহামারির কারণে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতের বরাদ্দ অনেক বাড়ানো দরকার। এ বছর বাজেটে স্বাস্থ্যব্যয় বরাদ্দ অন্তত গত বছরের দ্বিগুণ রাখা প্রয়োজন। অন্যদিকে শুধু ব্যয় বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়- অব্যবস্থা, অপচয় ও দুর্নীতি দূর করে অর্থের সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সরকারি কাঠামোর বাইরে নজরদারির বিশেষ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মহামারি নিরোধ, সংক্রামকব্যাধি নিয়ন্ত্রণ- এসবের জন্য আধুনিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ করতে হবে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের জন্য এখনও সরকারি স্বাস্থ্যসেবাই প্রধান ভরসাস্থল; এর পরিধি ও মান উন্নয়ন করা দরকার।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল ও সরঞ্জাম বাড়াতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানো ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার অবকাঠামোর আমূল পরিবর্তন করে উন্নত দেশগুলোর আদলে গড়ে তোলা দরকার। চিকিৎসাশিক্ষার নিম্নমান উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, শিক্ষাসামগ্রী ও অবকাঠামো বাড়াতে হবে এবং নিরপেক্ষ নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসক ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী যেমন সেবিকা, প্রযুক্তিবিদদের সংখ্যা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন আবিস্কৃত প্রযুক্তি ও কলাকৌশলে দক্ষতা অর্জনের জন্য চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত উন্নত দেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আগামী বাজেটে এসব সমস্যার জরুরি সমাধান নিশ্চিত রাখার দাবি জানাচ্ছি।
এমইউএইচ/বিএ/এমকেএইচ
Advertisement