হঠাৎ করেই বেশ অস্থির ব্রয়লার মুরগির দর। হুটহাট রাজধানীর বাজারে এর দাম বাড়া-কমার ঘটনা ঘটছে। শেষ ১০ দিনে খুচরাপর্যায়ে তিন দফা বাড়ে আর কমে। তবে ফার্মে এর দর বেড়েছে দু’দফা, কমার ঘটনা ঘটেনি।
Advertisement
মুরগি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৮ মে হঠাৎ করে এক লাফে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বাড়ে। চারদিন পর ১২ মে হুট করে দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে। তবে এটিও বেশি সময় স্থির হয়নি। দুদিনের ব্যবধানে ১৫ মে কেজিতে আবারও ৩০ টাকা বেড়ে যায় ব্রয়লার মুরগির দাম।
হুটহাট দামের এ উত্থান-পতনের মধ্যে গত এক সপ্তাহে খুচরাপর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা পর্যন্ত। মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ৬০ টাকা। অপরদিকে ফার্মে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৬০ টাকা। এর মাধ্যমে ফার্মে দ্বিগুণ হয়েছে ব্রয়লার মুরগির দর।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরাপর্যায়ে মুরগির দাম নির্ভর করে পাইকারি বাজারের ওপর। যে কারণে প্রতিদিনই মুরগির দামের পার্থক্য হতে পারে। যেদিন বেশি দামে মুরগি কেনা পড়ে, সেদিন বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। আবার কম দামে কিনতে পারলে, কম দামে বিক্রি হয়।
Advertisement
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের শুরুতে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমে যায়। এরপর রোজার শুরুতে চাহিদা বাড়ায় ব্রয়লারের দাম কিছুটা বাড়ে। ওই দাম সপ্তাহ-দুই স্থির থাকার পর গত সপ্তাহে হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এরপর চাহিদা কমে যাওয়ায় চারদিনের মাথায় আবার বড় অঙ্কের দাম কমে। কিন্তু এখন বিক্রি না বাড়লেও হুট করে দাম আরও বেড়ে গেছে।
এদিকে ফার্মেও ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছেন উৎপাদকরা। তবে তাদের বক্তব্য, ফার্মে বয়লার মুরগির যে দাম তার তুলনায় খুচরা বাজারে দাম অনেক বেশি। খুচরা ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামাফিক দাম নির্ধারণ করে মুরগি বিক্রি করছেন।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তারা জানান, করোনাভাইরাসের শুরুতে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ব্যাপক কমে যায়। এতে ফার্ম-মালিকরা লোকসানে কম দামে মুরগি বিক্রি করেন। যে কারণে তারা নতুন বাচ্চা উৎপাদনে যাননি। আগের যে বাচ্চা ছিল এখন সেই বাচ্চা বড় করে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কমেছে। অপরদিকে ‘লকডাউন’ কিছুটা শিথিল হয়েছে। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া অনেকে আবার ফিরে এসেছেন। মানুষ বাজারে গিয়ে কেনাকাটা বাড়িয়েছেন। ফলে চাহিদাও বেড়েছে। এ কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়, যা গত বুধবার ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। অবশ্য তার আগে অর্থাৎ শুক্রবার (৮ মে) ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। রোজার শুরুতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা এবং করোনার শুরুর দিকে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হয় ব্রয়লার মুরগি।
Advertisement
ব্রয়লারের দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আলম বলেন, আমরা পাইকারি বাজারের দামের ওপর নির্ভর করে মুরগি বিক্রি করি। যেদিন বেশি দামে কেনা পড়ে, সেদিন বেশি দামে বিক্রি করি। আবার যেদিন কম দামে কেনা পড়ে, সেদিন কম দামে বিক্রি করি। দুদিন ধরে পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির অনেক দাম। আগের চেয়ে পাইকারিতে বেড়েছে কেজিতে ৪০ টাকার ওপরে।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে হুট করেই ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যায়। এরপর দাম কিছুটা কমে। ফলে আমরাও কম দামে বিক্রি করি। কিন্তু এখন মুরগির দাম আবার বেড়েছে। পরিস্থিতি যা তাতে মনে হচ্ছে, ঈদের আগে ব্রয়লারের দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ গার্মেন্ট শ্রমিকসহ নানা পেশার মানুষ গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। স্বাভাবিকভাবে ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বাড়বে। চহিদা বাড়লে দামও বেড়ে যাবে।
মালিবাগ হাজিপাড়ায় ১৭০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ী মনির। বলেন, কম দামে ব্রয়লার খাওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন দফায় দফায় ব্রয়লারের দাম বাড়ছে। কিছুদিন আগে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করা ব্রয়লার এখন ১৭০ টাকায় বিক্রি করছি। ঈদও কাছাকাছি চলে এসেছে। সুতরাং এখন বিক্রি না হলেও ঈদের আগে ঠিকই ব্রয়লার মুরগির টান ধরবে। তখন আরও দাম বাড়বে, কমবে না।
হঠাৎ ব্রয়লার মুরগির দাম এভাবে বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনজুর মোরশেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম ব্যাপক হারে কমে যায়। ফার্ম থেকে লোকসানে মুরগি বিক্রি করতে হয়েছে। ফার্মে ব্রয়লারের কেজি ৬০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। গতকাল থেকে ফার্মে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এর আগে ৯০ টাকা ছিল। একদিকে চাহিদা বেড়েছে, অন্যদিকে সরবরাহ বেড়েছে, এ কারণে দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, লোকসানে ব্রয়লার বিক্রির কারণে ফার্ম-মালিকরা নতুন করে বাচ্চা তোলেনি। আগে যে বাচ্চা ছিল তাই এখন বিক্রি হচ্ছে। এদিকে সরকার লকডাউন শিথিল করেছে। ফলে মানুষ বাজারে যাচ্ছে। কেনাকাটাও বেড়েছে। এছাড়া সামনে ঈদ। এ কারণেও ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেড়েছে।
ফার্মের দামের হিসাবে ব্রয়লার মুরগি খুচরাপর্যায়ে কত টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া উচিত— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুচরা বাজারের দামের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা কী দামে বিক্রি করছে তা আমার জানা নেই। তারা তো ইচ্ছামাফিক দাম বাড়ায়। পাইকাররাও সুবিধার লোক নয়। তারা প্রচুর লাভ করে। মানুষ এখন কেনাকাটা করছে, সেই সুযোগ নিয়ে তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হিসাবে ফার্মের তুলনায় খুচরা বাজারে মুরগির দাম ১০ শতাংশ বেশি হতে পারে। সে হিসাবে ফার্মের বর্তমান দামের সঙ্গে তুলনা করলে ব্রয়লার মুরগির কেজি দেড়শ টাকার নিচে থাকা উচিত। সেখানে ১৭০ টাকা, মোটেও স্বাভাবিক নয়।
এমএএস/এমএআর/জেআইএম