বিশেষ প্রতিবেদন

বিশ্ববাজারে আমাদের কৃষিপণ্য যুক্ত করার সময় এসেছে

কৃষির বিবর্তন ঘটেছে বহু আগেই। বাংলাদেশের পণ্য যাচ্ছে বাইরেও। করোনার মহামারিময় এই পরিস্থিতিতে এই বিবর্তন যেন আরও দ্রুত ঘটছে। এমন অবস্থায় আমাদের আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন ছিল। গার্মেন্ট শিল্প যদি বিশ্ববাজার হারায় সেখানে কৃষি হতে পারে বিকল্প ব্যবস্থা।

Advertisement

রফতানি আয় জোরদারে আমাদের কৃষিজাত পণ্য বিশ্ববাজারে যুক্ত করার সময় এসেছে। এই সাধারণ উপলব্দি কাজে লাগাতে না পারলে অন্য দেশ সে জায়গা দখল করে নেবে— বলছিলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ ও গণনীতি বিশ্লেষক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি'র ডিস্টিংগুইশ ফেলো ও প্রথম নির্বাহী পরিচালক। ২০০৭ সালে জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং ইউএন কার্যালয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

করোনাকালীন পরিস্থিতিতে কৃষির চ্যালেঞ্জ ও করণীয় প্রসঙ্গে জাগো নিউজের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ড. দেবপ্রিয়। বলেন, গত দুই বছর ধরে কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি কৃষকের দুর্বল অবস্থানের ওপর আরেকটি বড় আঘাত। প্রথমত, এমন পরিস্থিতিতে কৃষি উপকরণ পেতে কৃষককে বেগ পেতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কৃষি শ্রমিকের অভাব। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকরা এবার তেমন শ্রমবিক্রি করতে পারল না।

আমাদের কৃষির জন্য আরও একটি সমস্যা হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে ফসল সংগ্রহ নিয়ে নানা অনিয়ম। অন্য বছরের ন্যায় এবারও সরকার বোরো ধান সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু ইতিহাস বলে, কোনোদিনই সরকার কৃষকের পণ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ করতে পারেনি। এবারও যে অনিয়ম হবে না, তা বলা যাবে না। সংগ্রহ অভিযান, দালাল, ফড়িয়া, মিলের মালিকরা কুক্ষিগত করে রাখেন। সামনে আমনের মৌসুম। আর কৃষির জন্য এগুলোই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, কৃষির আধুনিক উপকরণ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। ঋণের সুদ মওকুফ করতে না পারলেও ঋণ ও সুদ আদায় স্থগিত করতে হবে। সরকার ত্রাণ হিসেবে চাল বেছে নিয়েছে। চালের বাইরে আরও কৃষিপণ্য আছে। ত্রাণ হিসেবে এগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে কৃষক তার পণ্য বিক্রির সুযোগ পেল, অন্যদিকে পুষ্টির সমতাও মিলল। উত্তরবঙ্গে প্রচুর শাকসবজি হয়েছে। সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় এগুলো শহরে এনে বিক্রির ব্যবস্থা করে দিতে পারে। চাইলে সেনাবাহিনীকেও কাজে লাগাতে পারে।

এই বিশ্লেষক বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বাজার ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। নতুন কাঠামো দাঁড়িয়ে যেতে পারে। আমাদের সেই কাঠামোতে যুক্ত হতে হবে। কৃষির উৎপাদন বাড়াতে হবে। প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণে অধিক মনোযোগী হতে হবে।

‘সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, প্রকৃত কৃষককে সুবিধার আওতায় আনতে হবে। প্রকৃত কৃষক সুবিধা না পেলে, খাদ্য নিরাপত্তা ভেঙে পড়বে। দুর্যোগ সময়কে কাজে লাগিয়ে আমাদের কৃষির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এগুলো শুধু বাজেটের বিষয় নয়। দীর্ঘমেয়াদে কৃষি উন্নয়নের রূপান্তর ঘটিয়ে বিশ্ববাজারে জোরালোভাবে প্রবেশ করতে হবে। পরিশেষে কৃষককে সামাজিক সম্মান দিতে হবে।’

প্রাণঘাতী এ করোনা সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে তিন লাখ দুই হাজার ৩৭৬ জনের প্রাণ। আক্রান্ত ৪৪ লাখের অধিক। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৬৫ জন। মারা গেছেন মোট ২৯৮ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিন হাজার ৮৮২ জন।

Advertisement

এএসএস/এমএআর/পিআর