ছোট পর্দার জনপ্রিয় নির্মাতা সাগর জাহান। তিনি নাটক নির্মাণের পাশাপাশি গল্প রচনা ও চিত্রনাট্য করেন। তার আরেকটা পরিচয় হচ্ছে তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে প্রায় ৩৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
Advertisement
বড় হয়ে ক্যারিয়ার গড়েছেন টিভি নাটকে, নির্মাতা হিসেবে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে তিনি নিজ গৃহে অবস্থান করছেন পরিবারের সঙ্গে। গৃহবন্দী সময় ও সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। লিখেছেন অরণ্য শোয়েব
জাগো নিউজ : সময় কাটছে কি করে?সাগর জাহান : পুরো লকডাউন জুড়েই বাসায় আছি। মাঝে বাবাকে নিয়ে হসপিটালে গেলাম একদিন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। ব্যস্ততায় খুব তো একটা সুযোগ হয় না। সেটা পুষিয়ে নিচ্ছি। সিনেমা দেখি এবং চুপচাপ লেখালেখি করছি।
জাগো নিউজ : আপনার বাবা অসুস্থ ছিলেন। তিনি এখন কেমন আছেন?
Advertisement
সাগর জাহান : গত ছয়মাস আমি তাকে নিয়ে কলকাতা ও বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে ছুটেছি। এখন পর্যন্ত সৃষ্টিকর্তার রহমতে বাবা ভালো আছেন। আমার সবচেয়ে ভয় ছিল বাবাকে নিয়ে। সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেছি সবসময়।
জাগোনিউজ : দেখতে দেখতে রোজা শেষ হয়ে আসছে। এবারের ঈদে নাটক নিয়ে কী প্রস্তুতি আপনার?সাগর জাহান : এবারের ঈদ তো একটু ভিন্ন যাচ্ছে। কেউ কাজ করার সুযোগ পাইনি। হাতে যার যা আছে তাই চালানোর চেষ্টা চলবে। সেখানে এবার আমার একটি নাটকই যাচ্ছে।
জাগো নিউজ : সর্বশেষ ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই?সাগর জাহান : পহেলা বৈশাখের কাজ করেছিলাম।আর টুকটাক ব্যক্তিগত কিছু কাজ নিয়ে ছুটাছুটি ছিল।
জাগো নিউজ : করোনায় গৃহবন্দী হয়ে উপলব্ধি কি?সাগর জাহান : অনেক রকম উপলব্ধি এসেছে। প্রচুর চিন্তা করার সুযোগ এসেছে। কিছু বিচ্ছিন্ন চিন্তা ভাবনা আসছে মিডিয়া নিয়ে মাথায়। আমাদের মিডিয়া কোথায় আছে আসলে? আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রিকে যদি ইন্ডিয়ার সাথে তুলনা করি তাহলে কিন্তু আমরা অনেক অসহায়। আমাদের নিজস্ব কোনো কিছু নেই যে কোনো দুর্যোগ এলে তা মোকাবিলা করবো। এখানে অর্থনৈতিক সংকট মৃত্যুর ভয়ের চেয়েও বেশি ভয়াবহ।
Advertisement
করোনার পর সারাবিশ্বেই ক্রাইসিস আসবে। এই ক্রাইসিসে কিন্তু আমাদের তেমন কোনো শক্তি নেই। যেমন আন্তঃ সংগঠন অথবা ডিরেক্টর গিল্ডস, রাইটার গিল্ডস, আর্টিস্ট ইকুইটি কেউই কিন্তু শক্তিশালী না অর্থনৈতিকভাবে। অথচ ইন্ডিয়াতে দেখুন তারা কত স্ট্রং। তাদের গিল্ডস ইউনিটি কত স্ট্রং,তারা কত টাকা খরচ করেছেন তাদের কর্মীদের জন্য। সেই অনুপাতে আমরা নিজেরা চেষ্টা করছি ফান্ড তৈরী করে যারা ভালো নেই তাদের আমরা সাহায্য করছি।অতচ আমাদের কিন্তু স্ট্রং কিছু নেই। এসব ব্যাপারগুলোই ভাবায় অনেক আমাকে।
অনেকেই বলছে যে বর্তমান পরিস্থিতিতে সুযোগ আছে যদি আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে একটা শক্ত অবস্থানে দাঁড় করানো যায়। তবে দারুণ কিছু হবে। ভালো কিছুর জন্য একটা পরিবর্তন লাগে তো। শিল্প বিপ্লব বলে একটা কথা আছে না।? আমাদের একটা শিল্প বিপ্লবের মতো হোক। করোনার শিক্ষা নিয়ে আন্তঃ সংগঠনগুলো স্ট্রং করি।চ্যানেলের সাথে যে দূরত্ব সেটি ঠিক হোক এবং সরকার টিভি মিডিয়াকে শিল্প বলে ঘোষণা করুক। শেষ কথা হচ্ছে আমাদের নিজেদের স্ট্রং হতে হবে। আর সেটা ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।
জাগো নিউজ : করোনার কারণে নাটকপাড়ায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আপনার পরামর্শ কী?সাগর জাহান : এই কথাটি সংক্ষিপ্ত আকারে বলা যায় না। অনেক কিছুই বলার এবং করার আছে। আমরা অনেকেই অনেক কাজ করি। এখন আমাদের যেহেতু একটা ক্রাইসিস গেছে কাজের তাই কাজের গতিটা বাড়াতে হবে। ভালো পরিকল্পনা করে এই ক্ষতির চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।চ্যানেলগুলো যদি প্ল্যান করে ও আমরা যদি প্ল্যান করি এবং প্রপার ওয়েতে প্ল্যান ওয়েজ কাজ করি সেটা ভালো হবে।
তার মানে এই না যে আমরা আগে প্ল্যান ছাড়া কাজ করেছি। এখন প্ল্যানগুলোতে একটা সমন্বয়ের দরকার হবে। একজন প্রযোজক তখনি টাকা দেবেন যখন তিনি টাকা ফেরত পাবেন। নাটক বানানো থেকে চ্যানেল ও প্রযোজকের টাকা পাওয়া পর্যন্ত এই যে পুরো রাস্তাটা যদি আরো একটু ঠিক করা যায় তাহলে হয়তো ক্রাইসিসটা কাটানো যাবে।
আর চিত্র যদি আগের মতই থাকে তাহলে কি হবে জানি না।নাটকে অনেক সমস্যাই আছে। একটা অন্তত ঠিক হোক।আমরা যেন প্রপার কাজটা করতে পারি সবকিছু ঠিক রেখে। আর সবাই যেন সবার মূল্যটা পায় সেই নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
জাগো নিউজ : করোনা কেটে গেলে প্রথম কাজটি কি করবেন?সাগর জাহান : আবার কাজেই নামবো। আমার কাজটি কিভাবে করা যায় সেটা পরিকল্পনা করবো। আমি কাজ এবং কাজই করব। আর ভাবার কিছুই নেই।
জাগো নিউজ : এবারে ঘরবন্দী রমজান কাটাচ্ছি আমরা। অভিজ্ঞতা কেমন?সাগর জাহান : আমি একটু ধর্মভীরু মানুষ। আল্লাহ এবার সুযোগ করে দিয়েছেন বেশি বেশি ইবাদাত করার। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। দুপুরবেলা কোরআন পড়ি।আর লেখালেখি করি। কারণ এটা তো মজ্জার ভেতরে। আর নতুন কনসেপ্ট নিয়ে ভাবছি।
জাগো নিউজ : আপনার একটি ফিল্ম করার কথা ছিল। সেটার কি খবর?সাগর জাহান : আসলে ফিল্মের জন্যই রেডি হচ্ছিলাম।আমি এবার দুটো ফিল্ম নিয়েই কাজ করতে যাচ্ছিলাম। একটা ফিল্ম তো আমার লেখা। আরেকটির গল্প দেবেন ইন্ডিয়ার 'পরিণীতা' ছবির গল্পকার। কিন্তু এখন তো সব বন্ধ হয়ে গেলো। দেখা যাক সামনে সব ঠিকঠাক হলে সিনেমার কাজে নামবো।
জাগো নিউজ : বিশেষ দিবসে আপনার নাটক বেশি দেখা যায়। বলা চলে বিশেষ দিবসগুলো ছাড়া আপনি নাটক করেন না। এর কী বিশেষ কারণ আছে?সাগর জাহান : আমার যে গুরু অরণ্য আনোয়ার উনি একটা কথা বলতেন যে 'তোমার যদি অনেক অভাব না থাকে তাহলে সিঙ্গেল এবং স্পেশাল কাজগুলোই শুধু করো। চেষ্টা করবা ভালো কিছু করার। অল্প পরিসরে হলেও। আমি আসলে তাই তার কথা মাথায় রেখে কাজ করি।
তাই আমি ভক্তদের খারাপ কিছু দিতে চাই না। কম কাজ হলেও ভালো কাজ দিতে চাই।চাইলে তো প্রতিদিনই কাজ করতে পারি। কিন্তু আমার মাথায় থাকে দর্শকদের কথা। তাদের জন্য আমার কাজ করা। আমি গর্ব করে বলতে পারি আমার টাকার লোভ নেই।
আমি দর্শকের জন্য কাজ করছি। তাদের ভালো জিনিসটি দিতে চাই। আমি দর্শকদের পরিচালক হতে চাই। আমার ইচ্ছে ছিল সাধারণ দর্শকদের নাট্যকার পরিচালক হবার।
জাগো নিউজ : শেষ দুটি প্রশ্নের উত্তর চাই?
১/ আপনাকে একদিনের জন্য নায়ক করলে কোন নায়িকার সাথে স্ক্রিন শেয়ার করতে চাইবেন ?
উত্তর : আমি কিন্তু বাংলা সিনেমায় শিশুশিল্পী ছিলাম।আমি ৩৪টি সিনেমায় কাজ করেছি। চিত্রনায়িকা ববিতা আন্টির ভক্ত আমি। তার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার ইচ্ছে ছিল আমার।
২ / বাংলাদেশে আপনার পছন্দের অভিনেত্রী ও অভিনেতা কে?
উত্তর/ প্রশ্নটা আসলে ভয়ের।আমার অনেকেই পছন্দের অভিনেতা ও অভিনেত্রী আছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো লাগে অপি করিমকে।এবং শুধু সিনেমার ক্ষেত্রে ভালো লাগে প্রায়ত চিত্রনায়ক অভিনেতা আনোয়ার হোসেনকে। সকল ক্ষেত্রে নাটক সিনেমার জন্য ভালো লাগে হুমায়ন ফরীদিকে।
এলএ/জেআইএম