দেশজুড়ে

করোনা দুর্যোগে মানবিকতা ছড়াচ্ছেন জীবন

কোভিড-১৯ নামের অদৃশ্য ভাইরাসের থাবায় গোটা বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবকিছু লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। আর এতে করে কর্মহীন হয়ে মানবেতর দিন কাটছে খেটেখাওয়া মানুষের। হতদরিদ্রদের পাশাপাশি চরম কষ্টে দিনানিপাত করছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষরা।

Advertisement

তবে সরকারের সঙ্গে বৈশ্বিক এ দুর্যোগে মানবিকতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যক্তি পর্যায়ের অনেকে। তাদেরই একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. রাশেদুল কাউসার ভূইয়া জীবন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই হতদরিদ্র ও কর্মহীনদের জন্য নিজে খাবার নিয়ে গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন তিনি। দুর্যোগের এ সময়ে খাবার পেয়ে মানুষের চোখে-মুখে যে আনন্দের ছাপ দেখতে পান সেটাকেই নিজের আত্মার খোরাক মনে করেন জীবন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পরপরই নিজ সংসদীয় আসনের হতদরিদ্র ও কর্মহীনদের সাহায্যার্থে কাজ শুরু করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন আইনমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আনিসুল হক। খাদ্য সহায়তা বিতরণের জন্য গঠন করা হয় ওয়ার্ড ও গ্রামভিত্তিক কমিটি। এরপর কমিটির সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ত্রাণ সহায়তা বিতরণে মাঠে নামেন আইনমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ও কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল কায়সার ভূইয়া জীবন। সরকারি খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আইনমন্ত্রী ও জীবনের ব্যক্তিগত অর্থায়নে এখনও চলছে খাদ্য সহায়তা প্রদান।

গত দুই মাসে কসবা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেল ও পেঁয়াজসহ নানা খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে জীবন নিজে এসব খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন হতদরিদ্র ও কর্মহীন মানুষদের ঘরে।

Advertisement

এছাড়াও জনসম্মুখে খাদ্য সহায়তা নিতে না পারা মধ্যবিত্তদের কাছ থেকে ফোনকল কিংবা ক্ষুদেবার্তা পেয়ে বিশেষভাবে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে সহায়তা। এখন পর্যন্ত প্রায় তিন কোটি টাকার খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী ও জীবন ব্যক্তিগতভাবেই অর্থের যোগান দিয়েছেন।

কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. রাশেদুল কাউসার ভূইয়া জীবন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কর্ম হারিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মানুষ পরিবার নিয়ে কসবায় এসেছেন। এসব পরিবারগুলো খাবারের কষ্ট করলেও লজ্জায় মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেন না। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এসব মানুষদের খুঁজে বের করে গোপনে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। আইনমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আমরা দলীয় নেতাকর্মীরা সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছি। গত ১৯ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত আমি নিজে গ্রামে গ্রামে ঘুরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের এখানে কাউকে খাবারের জন্য কষ্ট করতে দেব না।

তিনি আরও বলেন, একেকটি পরিবারকে তিন-চারবার করে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। আমি নিজে ট্রাকে করে খাবার নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিতরণ করেছি। এছাড়া চক্ষুলজ্জায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ত্রাণ সহায়তা নিতে পারে না। আমি তাদের কাছ থেকে ফোনকল কিংবা ক্ষুতে বার্তা পেয়ে বিশেষভাবে তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেই। খাবার পেয়ে মানুষগুলোর চোখে-মুখে যে আনন্দ দেখেছি এটাই আমার আত্মার সবচেয়ে বড় খোরাক। মানুষের মুখে হাসি দেখে আমিও আত্মতৃপ্ত হয়েছি। কারণ এই দুর্যোগে মানুষের পাশে যদি না থাকি তাহলে নিজের বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে যাব।

আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/জেআইএম

Advertisement