ডা. সায়মা সাদিয়া শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের লেকচারার। বাবা মো. শহিদুল্লাহ, মা শারমিন আকতার। বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
Advertisement
সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
ছোটবেলা কেমন কেটেছে?ডা. সায়মা সাদিয়া: ছেলেবেলা যে খুব দুরন্তপনায় কেটেছে তেমনটি নয়। বাবার সরকারি চাকরির সূত্রে ঘনঘন বদলি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় যেমন- যশোর, কুমিল্লা, ফরিদপুর আমার ছেলেবেলা কেটেছে। এতো জায়গা বদল করার কারণে আমার খেলার সাথীও হয়ে ওঠেনি। দাদু বাড়ি কুষ্টিয়া জেলা শহরে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেখানে যাওয়া হতো। আর সেটাই ছিল সবচেয়ে আনন্দের জায়গা।
পড়াশোনায় কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?ডা. সায়মা সাদিয়া: ওই যে বললাম, বাবা ঘনঘন বদলি হতেন। তার সাথে আমাদের বাসাও পরিবর্তন হতো। ফলে এক স্কুলে বেশিদিন পড়াশোনা করা হতো না। নতুন স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা বুঝে ওঠার আগেই আবার বদলি। ফলে প্রাথমিক স্কুলের পড়াশোনা বেশি ভালোভাবে করা হয়নি। যার ফলে এসএসসিতে আমার এ প্লাস পাওয়া হয়নি। বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি সম্পন্ন করে যখন সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হলাম; তখন মাথায় জেদ চাপলো এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে এবং মেডিকেল কলেজে পড়তেই হবে। মানুষ চাইলে পারে না এমন কিছু নেই। যথারীতি আমার কঠোর পরিশ্রমের সুফল পেলাম এইচএসসিতে এ প্লাস পেয়ে। এরপর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ। পরে তো সেখান থেকেই এমবিবিএস সম্পন্ন করলাম।
Advertisement
বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?ডা. সায়মা সাদিয়া: আমি স্কুলে পড়ার সময় আমার ফুফা লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছিলেন। তার কাছ থেকে বিসিএস সম্পর্কে জানা। এরপর যখন মেডিকেল কলেজে পড়ি; তখন ইচ্ছে হলো মেডিকেল কলেজের টিচার হবো। আর সেটা হতে হলে আমার বিসিএস দিতে হবে। তখন থেকেই বিসিএসের প্রতি আগ্রহী হই।
বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—ডা. সায়মা সাদিয়া: আমি যখন ইন্টার্নশিপ করছি; তখন ৩৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দিলো পিএসসি। ফরম ফিলআপ করলাম তাতে। জীবনের প্রথম বিসিএস আর এর প্রতি আগে থেকে আগ্রহ থাকার কারণে ফরম ফিলআপ করার পর থেকেই পড়াশোনা শুরু করলাম। ইন্টার্নশিপ করার মধ্যেই আমার বিয়ে হলো। ফলে হাসপাতালে ডিউটি, নতুন শ্বশুরবাড়ি- সবকিছু মিলে পড়াশোনা করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমার স্বামী তখন আমার পাশে দাঁড়াল। সে তখন ৩২তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি রিটেন পাস করেছে। আবার ৩৩তম বিসিএসের জন্য পড়া শুরু করেছে। ফলে দু’জন আবার পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পেরেছিলাম। এভাবেই একেকটা ধাপ অতিক্রম করে সর্বশেষ ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম।
কততম বিসিএসে কোন ক্যাডারে আছেন?ডা. সায়মা সাদিয়া: আমি ৩৩তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে আছি। ইচ্ছে ছিল মেডিকেল কলেজের টিচার হবো। তাই একটাই চয়েজ ছিল স্বাস্থ্য ক্যাডার। আর এখন আমার কলেজেই মানে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে লেকচারার হিসেবে আছি।
কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?ডা. সায়মা সাদিয়া: আমার অনুপ্রেরণার কথা বলতে হলে আমার বাবার কথা আগে বলবো। কেননা তিনি সেই ছেলেবেলা থেকেই আমার কোনো আবদার কখনোই অপূরণীয় রাখেননি। শুধু আমাকে বলতেন, আমি যেন ভালো কিছু করি। নিজে সরকারি চাকুরে হওয়ায় আমাকেও তা-ই হতে উৎসাহ দিতেন। আমার মা বাবার মতো আমাকে যেমন উৎসাহ দিয়েছেন; তেমনি পড়াশোনা করার সুযোগও তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমার স্বামী, আমার শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই আমাকে শুধু উৎসাহই দেননি; আমাকে পড়াশোনায় নানাভাবে সহযোগিতাও করেছেন।
Advertisement
একজন চিকিৎসক হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?ডা. সায়মা সাদিয়া: আমি এবার গাইনোকোলজি অ্যান্ড অবসটেট্রিক্স বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছি। সবার দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ডিগ্রি সম্পন্ন করে এ দেশের মা-বোনদের ধাত্রী সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। আর যদি মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা করার সুযোগ পাই, তা অবশ্যই করবো।
সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগে আপনার ভূমিকা কী?ডা. সায়মা সাদিয়া: আমি মেডিকেল কলেজে প্রভাষক হিসেবে আছি। করোনা মহামারীতে চিকিৎসক সংকট আর মেডিকেল কলেজ বন্ধ থাকায় সরকার আমাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। আমি সরকারের আদেশে এখন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করছি। আশা করছি, আমরা এ মহামারী থেকে শিগগিরই মুক্তি পাবো ইনশাআল্লাহ।
এসইউ/এমএস