ফিচার

কাঁচির ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে চলে ওদের সংসার

আনন্দ-কষ্ট আর অভাব অনটনের মাঝেই ধরে আছেন বাপ দাদার পেশা। ওরা সকলেই নরসুন্দর (নাপিত)। মানুষের চুল, দাড়ি, গোঁফ অল্প টাকায় কাটিয়ে দিনে যে টাকা উপার্জন করে সেটুকু দিয়ে কোনো মতো সংসার চালান। সরেজমিনে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দর্না হাটখোলা হাটে গিয়ে দেখা যায়, মাটিতে বসে অনেকে চুল কাটিয়ে নিচ্ছেন। কথা হয় হাতীবান্ধা উপজেলার নওদাবাস ইউনিয়নের পশ্চিম নওদাবাস গ্রামের সুরেন শিলের (৭০) সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর ধরে এ পেশায় আছি। টাকা পয়সা না থাকায় বিভিন্ন হাটে গিয়ে মাটিতে বসে মানুষের চুল কাটি। সেলুনের চেয়ে দাম কম হওয়ায় অনেকে এখানে চুল, দাড়ি, গোঁফ কাটাতে আসেন। আগের মত আর কাজ পাই না। প্রতিহাটে একশত থেকে দুইশত টাকা আয় হয় তা দিয়া ওষুধ কিনে খাই।  স্ত্রীর কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেন, হ্যামার বউয়ের নাম যমুনা রানী (৪০)। বিয়া করছিনু দেশ স্বাধীনের আগোত। ভারতের মাথাভাঙা রানীরহাটে। যমুনা দুই ছেলে জন্ম দেয়ার দশ বছর পর সন্তানদের রেখে বাবার বাড়ি ভারতে চলে যায়। আর ফেরেনি। আজ বিশ বছর ধরে আমি একা। মানুষের চুল, দাড়ি, গোঁফ কাটিয়ে সময় পার করছি। তিনি আরো বলেন, দুই ছেলে শৌলান শিল (৩০), সুবাস শিল (২৮) এবং তাদের স্ত্রীদের নিয়ে আমার সংসার। বড় ছেলে শৌলান শিলকে নিয়ে বিভিন্ন হাটে গিয়ে মানুষের চুল কাটি। আর ছোট ছেলে হাতীবান্ধা মেডিকেল মোড়ে সেলুনের দোকান দিয়েছে। এভাবে কষ্টে সংসার চলছে।পুলিন চন্দ্র শিল (৩৮) উপজেলার টংভাঙ্গা গ্রামের পূর্ব বেজগ্রামের বাসিন্দা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, অভাবে পড়ে কোনো কাজ না পেয়ে আজ ত্রিশ বছর ধরে নরসুন্দরের (নাপিত) কাজ করি। এক ছেলে, এক মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে আমার সংসার। উপজেলার বিভিন্ন হাটে গিয়ে মাটিতে পিঁড়ি বসিয়ে মানুষের চুল কাটি। দিনে একশত থেকে দুইশত টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতই ছেলে ও মেয়ের পড়াশুনার খরচ জোগায়। বাড়ির ভিটেটুকু ছাড়া আর কিছু নেই। এভাবেই দিন পার করছি।উপজেলার নরসুন্দর হেমন্ত শিলের (৪৫) নয় সদস্যের পরিবার। পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। পরিবারটি চলে কাঁচির ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দের উপর। কাঁচির শব্দ না হলে সেই দিন তাদের ঘরে চুলা জ্বলে না। অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয় তাদের। আজগার আলী জানান, সেলুনে বসে সেভ করলে বিশ টাকা লাগে তাই মাটির পিঁড়িতে বসে সেভ করছি দশ টাকাতেই। সেলুনে বসার সাধ্য আমাদের নাই তাই মাটিতে বসে সেভ করি।সিন্দুর্না হাটের ইজারাদার আব্দুল হক জাগো নিউজকে জানান, এই হাটে ৮ থেকে ১০ জন গরীব নরসুন্দর আছে। তাদের কাজ থেকে কোনো খাজনা নেয়া হয় না বলে তিনি জানান।রবিউল হাসান/এসএস/এমএস

Advertisement