মরিচ চাষ করে ভাগ্য বদলে গেছে ঠাকুরগাঁও জেলার অনেক কৃষকের। মসলা জাতীয় অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে অল্প খরচে মরিচ চাষ করে কৃষক বেশি মুনাফা পাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা বেশ খুশি। চলতি মৌসুমে মরিচের বাম্পার ফলন হওয়ায় আরো বেশি মরিচ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এ অঞ্চলের কৃষক। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় ঠাকুরগাঁওয়ের মরিচ বাজারজাত করে বিপুল অঙ্কের অর্থ উপার্জনে আশাবাদী কৃষকরা। মরিচের উত্তারাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাট ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভাউলার হাট। সপ্তাহে দুদিন এই হাটে মরিচ ক্রয় করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মরিচ রফতানি করা হয়। মরিচ ব্যবসায়ী আকবর আলী জাগো নিউজকে জানান, এ জেলার মরিচ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এ মরিচের গুণগত মান খুবই ভালো। কৃষকরা দামও ভালো পাচ্ছেন। মরিচ আবাদ করে এই এলাকার অনেক কৃষকের ভাগ্য বদল হয়েছে।ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ৮০% থেকে ৯০% পলি ও উর্বর দোআঁশ হওয়ায় মসলাজাতীয় যাবতীয় ফসল খুব ভালো জন্মে। ফলে অল্প খরচে মসলাজাতীয় ফসলগুলো ফলানো সম্ভব। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় উন্নতজাতের বীজ ও সারসহ রোগবালাইনাশক ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ। জেলার প্রায় সব এলাকায় কমবেশি মসলাজাতীয় ফসল চাষ হলেও সদর উপজেলার রায়পুর, নারগুন, জামালপুর এলাকায় মরিচসহ যাবতীয় তরিতরকারি এবং সকল প্রকার মসলাজাতীয় ফসল খুব ভালো জন্মে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সকল চাষী আবাদ করে লাভবান হন বলে জানিয়েছেন আবাদিগণ। চাষিরা মরিচ চাষযোগ্য জমি পতিত রেখে সেখানে বছরের ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে গোবর সার নানা প্রকার জৈব সারসহ টিএসপি ও পটাশ সার প্রয়োগ করে উক্ত জমিতে বীজ রোপণ করেন। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ উন্মুক্ত আলো বাতাসের জন্য পরিকল্পনামাফিক বেড তৈরি করে রাখেন। মরিচ চাষি আশরাফুল আলম ও সাদেকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, কয়েক বছর আগে যে জমিতে অন্যান্য ফসল আবাদ করে ১০ হাজার টাকাও আয় করা যেত না, সে জমিতে বর্তমানে মরিচসহ অন্যান্য মসলাজাতীয় ফসল চাষ করে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে। তুলনামূলক পরিশ্রমও অনেক কম। চাষিরা আরো জানান, এই এলাকার মানুষের আর অভাব নেই। মরিচ আবাদ করে বেশিরভাগ কৃষকের ভাগ্য বদল হয়ে গেছে। মনসুর আলী জাগো নিউজকে জানান, মরিচ বীজ রোপণের ৪৫ থেকে ৫৫ দিনের মধ্যে মরিচ তোলা যায়। প্রতি একর মরিচ আবাদে খরচ হয় ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে মোট খরচ বাদে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। এতে ঝুঁকি কম। চাষি আমজাদ আলী জাগো নিউজকে জানান, কৃষি বিভাগ থেকে যথাসময়ে চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষি উপকরণ নিশ্চিত করা হলে কৃষকগণ আরো অধিক লাভবান হতে পারবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী খাঁন জাগো নিউজকে জানান, জেলায় এবার ৮শ ৩২ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। এখানকার কৃষকরা কাঁচা মরিচের চেয়ে পাকা মরিচ তুলে শুকিয়ে বাজারজাত করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই এলাকার মরিচ যায়। এ অঞ্চলটি উঁচু বেলে-দোঁআশ মাটি হওয়ায় মরিচ চাষ খুব ভালো হয় এবং কৃষকরা লাভবান হন। কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ দিয়ে আগামীতে আরও ভালো ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদী।রবিউল এহসান রিপন/এমজেড/এমএস
Advertisement