৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান এবং শিক্ষাবৃত্তির টাকা দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন শ্রমিক, ঠেলাগাড়ি ও ভ্যানচালক, নরসুন্দর এবং শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, মন দিয়ে লেখাপড়া করবে, যে টাকা দিলাম, সেই টাকা পড়াশোনার কাজে লাগাবে।
তিনি বলেন, ছাত্র হিসেবে শুধু পড়াশোনা নয়, অনেক কাজ করতে হবে। এবার ছাত্রলীগের কর্মীরা ধান কেটে কৃষককে সহযোগিতা করেছে। ভবিষ্যতে যে কোনো কাজে ছাত্রদের এগিয়ে আসতে হবে। কোনো কাজই ছোট নয়, এটা মনে রাখতে হবে। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
হতদরিদ্রদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'করোনাভাইরাসের এই বিপর্যয়ের সময় যারা কর্ম করে খেতেন, তারা এখন কোনো কাজ করতে পারছেন না। এ জন্য তাদের নামে ২,৫০০ টাকা মোবাইলে পাঠালাম। এই টাকা দিয়ে বাজার করে ছেলেমেয়ে নিয়ে খাবেন।' প্রধানমন্ত্রী তাদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
Advertisement
অনুষ্ঠানটি উদ্বোধনের পর সংযোগ দেয়া হয় শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনির কাছে। দীপু মনি তার বক্তব্য শিক্ষাখাতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আপনি কাজ করছেন বলেই দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। আপনার কারণেই আপনার পদক্ষেপেই শিক্ষার আজ উন্নতি হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।
তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছুটির এই সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। বিটিভিতে এই ক্লাস নেয়া হচ্ছে। যেটা সোরাদেশেই দেখা যায়। এখন অনেকে মোবাইলেও যুক্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, যে সমস্ত স্কুলে ল্যাপটপ নেই আমরা সেসকল স্কুলে ল্যাপটপ দেয়ার ব্যবস্থা করব।
এরপরে সংযোগ দেয়া হয় বরগুনার জেলা প্রশাসককে। জেলা প্রশাসক বলেন, এ জেলার ৫৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী উপবৃত্তির পেল। প্রধানমন্ত্রী যে টাকা পাঠিয়েছেন সেই ম্যাসেজটি তিনি পড়ে শোনান। এই ম্যাসেজে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
Advertisement
বরগুনার একজন উপকারভোগী শ্রমিক শানু খন্দকার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কোনো কাজ কর্ম নেই। এই সময়ে আপনার দেয়া ২,৫০০ টাকা পেয়ে খুব খুশি হয়েছি। আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুক।
এরপরে শিরিন আক্তার নামে এক ছাত্রী বলেন, আপনার দেয়া টাকাটা পেয়েছি। আমার লেখাপড়ার ক্ষেত্রে এই টাকা কাজে লাগবে। আল্লাহ আপনাকে হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখুন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভালো করে মন দিয়ে পড়াশোনা করো।
এরপরে সংযোগ দেয়া হয় শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক আবু তাহেরকে। শরীয়তপুরের ভ্যানচালক আফজাল হোসেন কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে। তিনি বলেন, আমাকে যে টাকা দিয়েছেন, এই টাকা পেয়ে আমি খুবই খুশি। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন, এই টাকা দিয়ে কি করবেন? উত্তরে ভ্যান চালক বলেন, বাজার করে ছেলেমেয়ে নিয়ে খাবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজার করে ঈদের সময় বাচ্চাদের নিয়ে খাবেন।
এরপরে সংযোগ দেয়া হয় মোতালেব নামে এক ছাত্রকে। মোতালেব বলেন, আমি অনেক খুশি আপনার ফান্ড থেকে টাকা পেয়ে। এখান থেকে আপনি যে টাকা দিয়েছেন, সে টাকা আমার কাজে লাগবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন দিয়ে লেখাপড়া করো। মোতালেব বলেন, আমার ইচ্ছা আপনার সঙ্গে দেখা করার। উত্তরের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখা তো হলোই ডিজিটালের মাধ্যমে।
এরপর সংযোগ দেয়া হয় সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদকে। প্রধানমন্ত্রী একজন ঠেলাগাড়ির চালকের সঙ্গে কথা বলতে চান। সেখানে ঠেলাগাড়ি চালক সীতেশ চন্দ্র দে কথা বলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নমস্কার জানান এবং বলেন, আমার সংসারের তিন মেয়ে, আমরা দুজন মিলে পাঁচজন। আপনার দেয়া এই টাকা আমি পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে সংসার চালাবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
এরপর সংযোগ দেয়া হয় মোসাদ্দেক-উর-রহমান নামে এক ছাত্রের কাছে। মোসাদ্দেক প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনার দেয়া ৪,৯৯০ টাকা (বৃত্তির) পেয়েছি। এই টাকা আমার পড়াশোনায় খুব উপকার হবে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্র হিসেবে শুধু পড়াশোনা করে চলবে না। অনেক কাজ করতে হবে। এবার তো হাওরের ধান আমরা কেটে দিলাম। ছাত্রলীগকেও দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তারা ধান কেটে দিয়েছে। বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক দিয়ে সহযোগিতা করেছি। ছাত্রদের প্রস্তুত থাকতে হবে, যেকোনো সময় যেকোনো কাজ করার জন্য। কোনো কাজই ছোট নয়। মনে রাখতে হবে, এই ধান থেকে চাল হয় আর সেই চালের ভাত খেয়ে আমরা জীবন ধারণ করি।
এরপর সংযোগ দেয়া হয় লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফরকে। এই জেলার নরসুন্দর মো. আব্দুল মালেক টাকা পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, এই সময়ে কোনো কাজকর্ম নেই। এ টাকাটা আমার খুব উপকারে আসবে। আমি খুবই খুশি। আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন।
জাকিয়া সুলতানা নামে এক ছাত্রী বলেন, আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত এবং উৎসাহিত। আপনি আমাকে যে টাকা বৃত্তি দিয়েছেন, সেই টাকা আমার কৃষক বাবার জন্য খুব উপকারে আসবে। প্রধানমন্ত্রী তাকে ভালো করে পড়াশোনা করার জন্য উপদেশ দেন। তিনি বলেন, লালমনিরহাটে আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি।
এফএইচএস/জেডএ/জেআইএম