কৃষকরা সফলভাবে বোরো ধান ঘরে তোলার পাশাপাশি ধান বিক্রি করে ভাল দাম পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সচিবালয় থেকে ধানের দাম ও কৃষির সমসাময়িক বিষয়ে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী এ কথা জানান। হাওরে শতভাগ এবং সারাদেশে ৪৮ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন বোরো আমাদের প্রধান ফসল। দ্বিতীয় হলো আমন ও তৃতীয় আউশ। আমনে আমরা এক কোটি ৫০ লাখ টন বা এর কমবেশি উৎপাদন পেয়ে থাকি। আউশে ৩০ লাখ টন বা এর বেশি উৎপাদন পেয়ে থাকি। তবে মোট উৎপাদনের ৬০ ভাগ বোরো থেকে আসে। বোরোর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তখন আমাদের ধারণা ছিল না, দেশ এখানে করোনায় আক্রান্ত হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশও স্থবির রয়েছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। হাওরে শতভাগ এবং সারাদেশে ৪৮ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য থেকে জানা গেছে, কৃষকরা সফলভাবে ধান ঘরে তোলার পাশাপাশি ধান বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘তবে অঞ্চলভেদে ধানের বাজার দর কমবেশি রয়েছে। এছাড়া ভেজা ও শুকনো ধান এবং মোটা ও চিকন ধানের দামেও পার্থক্য রয়েছে বলে জানা গেছে।’
অঞ্চলভেদে ধানের দাম প্রতি মণ ৬০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এবার ধানের যে দাম আছে মোটামুটি যুক্তিসঙ্গত। আমরা সব সময় চাই ধান-চালের দাম এমন একটা অবস্থায় থাকবে, যাতে কৃষকও খুশি থাকবে, সাথে সাথে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তারাও একটা যুক্তিসঙ্গত দামের ভিত্তিতে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি মনে করি আমরা এই বছর এমন একটা অবস্থার মধ্যে আছি। কৃষকও দামের দিক দিয়ে মোটামুটি খুশি আছে। এবং ধান-চালের দামও মোটামুটি যুক্তিসঙ্গত। সরকারি ধান-চাল কেনা পুরোদমে শুরু হলে দাম আরও বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন কৃষিমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সারাদেশের সমতল ভূমিতে ধানকাটা চলছে। আবহাওয়াও মোটামুটি অনুকূলে। ধান কাটাও বেশ এগিয়ে চলছে। হাওরের ধান মেশিন সমতলে আসছে। শ্রমিকরাও সমতল ভূমিতে ফিরে এসেছে। সার্বিকভাবে ধানকাটা এগিয়ে চলছে।’
Advertisement
যে অঞ্চলে ধানের দাম যত
কৃষিমন্ত্রী জানান, হাওর অঞ্চলের সিলেট জেলায় বর্তমানে ভেজা ধান প্রতি মণ ৭০০-৭৫০ টাকা, শুকনো ধান ৮০০-৮৫০ টাকা, মৌলভীবাজার জেলায় ভেজা ধান ৬৫০-৭৫০ টাকা, শুকনো ধান ৭৫০-৮০০ টাকা, হবিগঞ্জ জেলায় ভেজা ধান ৬৫০-৭০০ টাকা, শুকনো ধান ৭৫০-৮০০ টাকা, সুনামগঞ্জ জেলায় ভেজা ধান ৬৫০-৭৫০ টাকা, শুকনো ধান ৭৫০-৮০০ টাকা এবং নেত্রকোনা জেলায় ভেজা মোটা ধান ৬৫০-৬৮০ টাকা ও চিকন ধান ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কুমিল্লা অঞ্চলে ৭৭ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লা জেলায় মোটা ধান ৮০০-৮৫০ টাকা, চিকন ধান ৯০০ টাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ভেজা ধান ৬০০-৭০০ টাকা, শুকনো ধান ৮০০ টাকা এবং চাঁদপুর জেলায় মোটা ধান ৮০০-৮৫০ টাকা ও চিকন ধান ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খুলনা অঞ্চলে শতকরা ৭৩ ভাগ ধান কর্তন শেষ হয়েছে। খুলনা জেলায় মোটা ধান ৭৬০-৭৭০ টাকা, চিকন ধান ৮৮০- ৯০০ টাকা, বাগেরহাট জেলায় মোটা ধান ৭০০-৭৫০ টাকা, চিকন ধান ৮৫০- ৯০০ টাকা এবং সাতক্ষীরা জেলায় মোটা ধান ৮০০-৮২০ টাকা ও চিকন ধান ৯০০- ৯২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।’
শেরপুর জেলায় মোটা ধান ৬৫০-৭০০ টাকা, চিকন ধান ৭০০-৭৫০ টাকা, ময়মনসিংহ জেলায় মোটা ধান ৭৫০-৮০০ টাকা, চিকন ধান ৮৫০-৯০০ টাকা এবং জামালপুর জেলায় মোটা ধান ৬৫০-৭৫০ টাকা ও চিকন ধান ৮৫০- ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
যশোর অঞ্চলে শতকরা ৬২ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরা জেলায় মোটা ধান ৮৫০-৯০০ টাকা, চিকন ধান ৯০০-১০৫০ টাকা এবং কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলায় মোটা ধান ৬৫০-৭৫০ টাকা ও চিকন ধান ৮৫০- ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, বরিশাল অঞ্চলের পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও বরগুনা জেলায় ৮২০-৮৫০ টাকা এবং দিনাজপুর জেলায় ভেজা ধান ৬৭৫-৭০০ টাকা ও শুকনো ধান ৭৭৫-৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে রাজশাহী জেলায় ভেজা ধান ৮০০-৮৫০ টাকা, নওগাঁ জেলায় মোটা ধান ৬০০-৬৫০ টাকা এবং চিকন ধান ৮৫০-৯০০ টাকা, রংপুর জেলায় ভেজা ধান ৬৮০-৭০০ টাকা এবং শুকনো ধান ৮১০-৮২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরএমএম/এমএফ/এমএসএইচ/জেআইএম/এমকেএইচ