যশোরের চৌগাছার করোনা রোগী জান্নাতি আক্তার একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। খুলনা বিভাগে তিনিই প্রথম নারী, যিনি করোনা আক্রান্ত অবস্থায় সন্তান জন্ম দিলেন।
Advertisement
বুধবার দুপুরে শহরের বেসরকারি জেনেসিস হাসপাতালে ডা. নিলুফা ইসলাম এ্যামেলি তার সিজার করেন। মা ও সন্তান দুজনই সুস্থ আছেন। তবে অপারেশনে থাকা চিকিৎসকসহ ছয়জনকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে যেতে হয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জান্নাতি চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের বানুড়হুদা গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী। গত ২৫ এপ্রিল করোনা শনাক্তের পর নিজ বাড়িতেই তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৯ মে জান্নাতির (২৮) শরীর থেকে চার বার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। তার প্রথম রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। এর পরের দুবার নেগেটিভ রেজাল্ট এলেও শেষবার আবার পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
Advertisement
ডা. এ্যামেলি বলেন, আমরা তো সবসময়ই সিজার করি। কিন্তু প্রসূতি করোনা পজিটিভ হওয়ায় একটু ভয় লেগেছে। একটু টেনশন নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। রিস্ক ছিল। সতর্ক থাকতে হয়েছে। প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। তবুও করতে তো হবেই। এটাতো আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। সব প্রস্তুতি ও প্রটেকশন নিয়েই সিজার করেছি।
সূত্র জানায়, গত ৯ মে বিকেলে ওই নারীকে করোনামুক্তির ছাড়পত্র ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে ‘করোনামুক্ত’ ঘোষণা করেছিলেন যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহিন। সেদিনই ডেলিভারি তারিখ থাকায় সন্ধ্যায় জান্নাতিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার লাকি। এরপর হাসপাতালের চিকিৎসকরা আবারও তার করোনা উপসর্গ আছে বলে সন্দেহ পোষণ করেন। সোমবার তার শরীরের নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় আবারও তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
এরপর যশোর জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত বিশেষ প্রসূতি টিমের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ব্যবস্থায় সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বুধবার শহরের জেনেসিস প্রাইভেট হাসপাতালে তার সিজার সম্পন্ন হয়।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল জান্নাতি চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হন। তার করোনা উপসর্গ থাকায় ২৩ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করে যবিপ্রবিতে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। নমুনা নেয়ার পরই জান্নাতি হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে ২৪ এপ্রিলের পরীক্ষায় তার ফল পজিটিভ হয়। ২৫ এপ্রিল সকালে রিপোর্ট এসে পৌঁছালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে ওই নারীর বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়। সেখানে তার স্বামী ও আট বছর বয়সী মেয়ের নমুনা নেওয়া হয় এবং ওই বাড়িটি লকডাউন করা হয়।
Advertisement
পরীক্ষায় তার স্বামী ও সন্তানের নমুনা নেগেটিভ ফল দেয়। ২৮ এপ্রিল ওই নারীর সংস্পর্শে আসা চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিন নার্সের নমুনা জেনোম সেন্টারে করা পরীক্ষায় পজিটিভ হয়। জান্নাতির ডেলিভারি ডেট ৯ মে হওয়ায় ৪ মে ফের তার নমুনা নিয়ে যবিপ্রবি পরীক্ষাগারে পাঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এইদিনের পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। ৫ মে আবার তার নমুনা নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৮ মে পাঠানো পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ হয়। এরপর ৯ মে তাকে করোনামুক্তির ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরপর দুবার তার করোনা পরীক্ষা নেগেটিভ আসায় তাকে করোনামুক্তির ছাড়পত্র দিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর পরীক্ষায় আবারো করোনা পজিটিভ হন তিনি। পজিটিভ অবস্থাতেই বুধবার তার সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন হয়।
জান্নাতির স্বামী আলমগীর হোসেন বলেন, আমি সিজার করা ডাক্তারসহ সকল ডাক্তারদের কাছে কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে চৌগাছা হাসপাতালের বড় ম্যাডাম (স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার) সব সময় আমাদের খোঁজ নিয়েছেন। সাহস দিয়েছেন। এমনকি ওষুধের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। বাচ্চা ও মা উভয়েই সুস্থ আছেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার দিলীপ কুমার রায় বলেন, যশোরে বেসরকারি হাসপাতাল কুইন্স, জেনেসিস ও ইবনে সিনাকে করোনা মোকাবেলায় সরকারিভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। জান্নাতির সিজার হওয়ার কথা ছিল ইবনে সিনা হাসপাতালে। কিছু জটিলতার কারণে সেখানে তা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছে ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, জান্নাতিকে যে টিম সিজার করেছে, সেই টিমের প্রত্যেককে ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। যদি এর মধ্যে অন্য কোনা প্রসূতির সিজার করা লাগে, তাহলে ওই ডাক্তারই তার টিম নিয়ে সিজার করবেন।
মিলন রহমান/এফএ/পিআর