আইসক্রিমের কাঠি তৈরির ক্ষুদ্র একটি কারখানা গড়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন উদ্যোক্তা মীর শওকত আলী (৫০)। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন এলাকার ২ শতাধিক বেকার নারী ও পুরুষের। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আইসক্রিমের কাঠি তৈরির কারখানাটি নতুন উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন দেখায়। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার দুধসর গ্রামে গড়ে উঠা আইসক্রিমের কাঠি তৈরির কারখানাকে কেন্দ্র করে কাঠ ব্যবসায়ী, সমিল শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক ও কারখানা শ্রমিক সব মিলিয়ে প্রায় ২শ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। উদ্যোক্তা মীর শওকত জাগো নিউজকে জানান, ২০০১ সালে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে তিনি ভারতে যান। এর এক পর্যায়ে বারাসাত ও হুগলিতে কাঠ দিয়ে আইসক্রিমের কাঠি তৈরির কারখানায় কাঠি তৈরির কাজটি দেখে তার ভালো লাগে। পরে তিনি কারখানার মালিকের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারেন ব্যবসাটি যথেষ্ঠ লাভজনক। ভারত থেকে ফিরে এসে ২০০৩ সালে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে নিজ বাড়িতে তিনি গড়ে তোলেন মীর ট্রেডিং নামের কাঠি বানানোর কারখানা। সে সময় তিনটি কাটিং ও একটি ফিলিং মেশিন নিয়ে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে কারখানায় আটটি কাটিং দুইটি ফিলিং মেশিনে কাজ হয়। নির্দিষ্ট মাপের কাঠের খণ্ড প্রথমে ফিলিং মেশিনে দিয়ে পাতলা কাঠের পাতে পরিণত করা হয়। পরে এই পাত, কাটিং মেশিনে দিয়ে ছোট ছোট কাঠিতে পরিণত করা হয়। এরপর একটি ড্রামে ঢুকিয়ে কাঠিগুলোকে পলিশ করে রোদে শুকানো হয়। এ কারখানাতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ লাখ কাঠি তৈরি করা হয়।শওকত আলী আরো জানান, আইসক্রিমের কাঠি তৈরি করতে কাঁচামাল হিসেবে কদম, আমড়া, ছাতিম জাতীয় নরম কাঠ ব্যবহার করা হয়। তিনি কাঠি তৈরিতে ভাটাম বা ভেটুল গাছের কাঠ (স্থানীয় নাম) ব্যবহার করেন। কাঠি তৈরির কারখানাটি মেশিন নির্ভর হলেও কাটিং, গ্রেডিং, বান্ডেল ও প্যাকেটজাত করতে বেশ সংখ্যক লোকের প্রয়োজন হয়। স্থানীয় বেকার পুরুষ ও নারীরা তার কারখানায় সানন্দে কাজ করেন। শ্রমিকদের পাঁচ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দেয়া হয়। শওকত জানান, নারীরা ঘরে বসে কাঠি গ্রেডিং, বান্ডিল বাঁধা ও প্যাকেটজাতকরনের কাজ করেন। প্রতি বান্ডিলে এক হাজার কাঠি থাকে। এক বান্ডিল কাঠি তৈরিতে ৩২ টাকা খরচ হয় এবং তা বিক্রি করা হয় ৩৫ টাকায়। কারখানায় উৎপাদিত কাঠি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। কারখানা শ্রমিক খায়রুল, ইমন, সাগর ও বাবু জাগো নিউজকে জানান, মীর ট্রেডিং এ তারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন। মালিক মীর শওকত তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দেন। দুই ঈদে বোনাস দেন। ঈদে ছুটির দিনগুলোর বেতনও তিনি দেন। সফল উদ্যোক্তা মীর শওকত জাগো নিউজকে জানান, কারখানার মেশিন ও অন্যান্য উপকরণের মূল্য খুব বেশি নয়, তাই মেধা ও শ্রম দিতে পারলে অল্প পুঁজিতে এ শিল্পে যথেষ্ঠ লাভ পাওয়া সম্ভব।এমজেড/এমএস
Advertisement