রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে একজন মানুষের দেহে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
Advertisement
আমাদের শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যখন একই রকমের রোগ দ্বারা আমরা আক্রান্ত হই তখন আমাদের শরীরের সেলগুলো শত্রুকে খুব সহজেই চিনে ফেলে। ফলে তারা এর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর যারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের অনেকের শরীরেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। কিন্তু অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার মানেই এই নয় যে, ভবিষ্যতে ওই ব্যক্তি আর আক্রান্ত হবে না বা তার অ্যান্টিবডি তাকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে।
যদিও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই এটা শোনা যাচ্ছিল যে, যারা এই সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডি ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে পারে এবং পুনরায় সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
Advertisement
তবে এটাই সত্যি যে, এখনই এটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তাই এখনই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া ঠিক হবে না। সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও বেশ কিছুদিন সবার থেকে কিছুটা দূরেই থাকতে হবে এবং কিছু বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে।
বিশেষ করে সুস্থ হলেও এখনই বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের বাড়ি বা অফিসে কাজে ফিরে যাওয়া যাবে না। আরও অন্তত কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, কোভিড-১৯’র ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি পজিটিভ আসাটা বর্তমান সময়ে খুব একটা কাজে আসবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু অজানাই রয়ে গেছে। বিশেষ করে এই ভাইরাসের প্রকৃতি এবং অ্যান্টিবডি টেস্ট কতটা নিখুঁত সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
Advertisement
তাদের মতে, এটা এখন পরিষ্কার যে, আমাদের যেখানে থাকা দরকার আমরা এখন সেখানে নেই। এটাই কঠিন বাস্তবতা। সে কারণে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর লোকজন যেভাবে জীবন-যাপন করে অন্যদেরও সেভাবেই চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে।
প্রথমদিকে এ ধারণা প্রচার করা হয়েছিল যে, রক্ত পরীক্ষায় যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি ধরা পড়বে তাদের এই ভাইরাসে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। ফলে যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি ধরা পড়বে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবেন।
কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, এখনই এটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
অ্যান্টিবডির পরীক্ষা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে অনেক পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে খুব কমই ছিল সঠিক।
অ্যান্টিবডি কতদিন পর্যন্ত শরীরে টিকে থাকতে পারে, সে বিষয়েও নিশ্চিত নন গবেষকরা। তবে তারা বলছেন, কোনো ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সাত দিনের মধ্যে এই অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা সম্ভব।
কিন্তু অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার পরই কারও মনে করা উচিত নয় যে, সে এখন থেকে সুরক্ষিত। যদি সে এটা ভেবে হাসপাতাল, নার্সিং হোম এবং বিভিন্ন জায়গা ঘরে বেড়ায় তবে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যাবে।
এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার মানেই কি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী হবে কিনা?
তবে এখন পর্যন্ত সার্স-কোভ-২ এর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনসন বলছে, এ ধরনের অ্যান্টিবডি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। এর মানে আমরা এখনই বলতে পারছি না যে, অ্যান্টিবডিগুলো মানুষকে ভাইরাস প্রতিরোধী করে তোলে।
এদিকে এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে। গত এপ্রিলের শেষ দিকে এক বিবৃতিতে সংস্থাটির তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পর যারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাদের শরীরের অ্যান্টিবডি দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হওয়া থেকে রক্ষা করবে এমন কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে এমন কিছু মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, ভাইরাসের ক্ষেত্রে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই নিম্ন স্তরে রয়েছে।
টিটিএন/এমকেএইচ