আগেই জানা, অসুস্থ হবার আগে থেকেই নিজ এলাকা বাসাবোর কমিশনার গলিতে করোনায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে বিসিবির ডেভেলপমেন্ট কোচ আশিকুর রহমান মজুমদার।
Advertisement
ধারণা করা হচ্ছে, তখনই কারও কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছেন আশিক। তিনি নিজেও ঠিক করে বলতে পারছেন না কবে কখন, কোত্থেকে তার মাঝে করোনা সংক্রমিত হয়েছে। শুধু বলেছেন, ‘আমাদের গলিতে মানুষ অনেক অসহায় অবস্থায় ছিল। তাদের মুখে হাসি ফোঁটাতেই আমি পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।’
কবে, কীভাবে তার মাঝে অসহায় ও দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা জন্ম নিল? কবে থেকে ঠিক করলেন, যা হয় হবে, নিজের করোনা হলেও আমি এসব অসহায় মানুষদের মুখে হাসি ফোঁটাবো, তাদের পাশে থাকব, সাহায্য সহযোগিতা করব?
এ প্রশ্নের জবাবে আশিক জানান, ‘আমার বাসা বাসাবো কমিশনার গলিতে। কিছুদিন আগে দেখি রাস্তায় একজন মহিলা ২ কেজি চাল নিয়ে কান্নাকাটি করছেন। আমি তার কাছে গিয়ে জানতে চাই, কী সমস্যা হয়েছে? কাঁদছেন কেন?’
Advertisement
‘মহিলা জানান, আমার স্বামী লকডাউনে অন্যত্র আটকা পড়েছেন। ছেলে অসুস্থ, আমি পান বিক্রি করি। সারা দিনে হাতে মোটে ৪০ টাকা। কীভাবে কী করি? আমি তো আর পারছি না সংসারের বোঝা বইতে।’
‘বিশ্বাস করেন, ঐ মহিলার কথা শোনার পর আমার মনে একটা অন্যরকম চেতনার জন্ম নিল। বারবার মনে হতে লাগল, আমি তো কাপুরুষের মত কাজ করছি। নিজে আরামে আছি। তখন স্বামী বিবেকানন্দর কথা মনে পড়ল, ‘উঠো জাগো আর ঘুমিও না। জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’ এরপর শুরু হলো আমার কাজ। যাক আল্লাহ হয়তো কপালে এটাই রেখেছেন।’
জীবনটাই এমন! আজ তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে মোহাম্মদ আশরাফুলের বন্ধু হিসেবে। কিন্তু ভাগ্য সহায় থাকলে আশিকও হতে পারতেন নামী ক্রিকেটার। তার সুনাম-সুখ্যাতিও ছড়িয়ে পড়তে পারত চারদিকে। সে সম্ভাবনা কিন্তু ছিল। এসেছিলেন অমিত সম্ভাবনায়।
লম্বা ছয় ফুট, চওড়া কাঁধ। হাই আর্ম অ্যাকশন। বলে খুব জোর না থাকলেও সুইং করাতে পারতেন। আউট সুইংটা বেশ ভালই করতেন। ঢাকা মোহামেডানের হয়ে দুই মৌসুম বেশ ভাল বোলিং করে নজরও কাড়েন।
Advertisement
২০০২ সালে নিউজিল্যান্ডে আশরাফুলের সঙ্গে যুুব বিশ্বকাপ খেলেছেন। ঐ আসরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন লম্বা ছিপছিপে গড়নের পেস বোলার আশিকুর রহমান মজুমদার। কিন্তু পিঠের ইনজুরির কারণে ক্যারিয়ার লম্বা হয়নি।
খেলা ছেড়ে নাম লেখান কোচিংয়ে। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন অন্তত ৫-৬ বছর। মাঝে প্রায় দুই বছর বাংলাদেশ নারী দলের সহকারী কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন আশিক।
করোনায় আক্রান্ত আশিকের আকুতি, ‘সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমাকে সুস্থ করে দেন। আমি সৃষ্টিকর্তার দয়ায় বাঁচতে চাই। যেন মানুষের জন্য কাজ করতে পারি।’
এআরবি/এসএএস/জেআইএম