দেশজুড়ে

ভেঙেছে সাধুর হাট, ফিরছেন যে যার ঘরে

ঘোষণা অনুযায়ী বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৫তম তিরোধান দিবসের পাঁচদিনের অনুষ্ঠানের আরো দুদিন সোম ও মঙ্গলবার চললেও সাধুদের হাট ভেঙে গেছে রোববার। সাধুরা ফিরছেন যে যার আপন ঘরে। সকালে আখড়া ঘুরে দেখা গেছে, দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাউলরা নিজ নিজ আস্তানা ছেড়ে বিছানাপত্র গুছিয়ে রওনা হয়েছেন অনেকেই। তবে যাওয়ার আগে আঁখড়া বাড়ির পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। গুরুকে বারবার প্রণাম ও নানা রকম ভক্তি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। গুরু ভক্তি আর সিদ্ধ মন নিয়ে বিদায় নেয়ার সময় অনেক বাউল তাদের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। আবার দেখা হবে সাঁইজির উদাসী ডাকের টানে। গুরুনহির শাহ জানান, সাঁইয়ের জীবদ্দশায় শুধুমাত্র তার ভক্ত আর শিষ্যদের নিয়ে মূলত আড়াই দিনের উৎসব করতেন। সে নিয়ম মেনেই বাউলরা ভাটায় আসে উজানে ফিরে যায় যে যার আপন নিবাসে। প্রকৃত ভেকধারী বাউলরা সরকারি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে খোঁজ-খবরও রাখেন না। তাদেরকে মঞ্চে ডাকলেও তারা আসন ছেড়ে উঠেন না। রোববার ভোরে সূর্য উঠার আগেই অহিংস মানবতা প্রতিষ্ঠায় আপন মোকামে গুরুর চরণ ছুয়ে দীক্ষা নিয়ে ভক্তি নিবেদন করে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন অনেক বাউল।লালন আঁখড়ার আশপাশে ও একাডেমির নিচে যারা আসন গাড়েন তারা সাঁইকে ভক্তি আর আরাধনায় নিমগ্ন থেকে কখনো স্থান ত্যাগ করেন না। বিছানাপত্র হাতে নিয়ে কথা বলেন যশোরের বাউল গুর আফতাব শাহ। প্রায় একযুগ বাড়িতে ফেরেন না তিনি। সংসার ধর্ম টানে না তাকে। বাড়ির কোনো খবর রাখেন না। সারা বছর পথেই কেটে যায় এ ফকিরের। তবে মাঝে মধ্যে আসেন সাঁইজির ধামে। মনের তৃষ্ণা মেটাতে। পরিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে ফিনের ভবের বাজারে। তবে অনেক বাউল, সাধু আঁখড়া ছাড়লেও অনেকে গুরু বাড়িতে থেকে যাবেন আরও কদিন। সমাজ-ইতিহাসের ধারায় বিচার করলে বলা যায়, গ্রামবাংলার মানবতাবাদী মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন লালন ফকির। সামাজিক ভেদনীতি, শ্রেনী-বৈষম্য, বর্ণ, শোষণ, জাতপাতের কলহ, সামস্ত-নিগ্রহ ও সাম্প্রদায়িক বিরোধের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। লালনের নাম আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে উচ্চারিত হয়। একজন গ্রাম্য নিরক্ষর সাধকের এ অর্জন ও প্রতিষ্ঠা স্বভাবতই বিস্ময় জাগায় মনে। মানুষের প্রতি মানুষের শোষণ-বঞ্চনা-অবিচারের চির অবসান কামনা করে সমাজমনষ্ক সাধক লালন শ্রেণিহীন শোষনমুক্ত এক মানবসমাজের স্বপ্ন দেখেছেন।রোববার রাতে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও লালন একাডেমির সহ-সভাপতি মুজিব-উল-ফেরদৌসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.শাহিনুর রহমান, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বদরুদ্দোজা, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদ মো. কবির, কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সফিকুর রহমান খান, জিপি অ্যাড.আ স ম আখতারুজ্জামান মাসুম, পাবলিক প্রসিকিউটর পিপি অ্যাড.অনুপ কুমার নন্দী, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি গাজী মাহবুব রহমান প্রমুখ। আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লালন গবেষক আবু ইসহাক হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লালন অ্যাকাডেমির নির্বাহী সদস্য বাউল আব্দুল কুদ্দুস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন অ্যাকাডেমির নির্বাহী সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু। এমজেড/আরআইপি

Advertisement