বিশেষ প্রতিবেদন

শহরের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে দক্ষিণ সিটির যাত্রী ছাউনি

ব্যস্ত এই মহানগরীর পদে পদে যেন দুর্ভোগের হাতছানি। কোথাও এতটুকু স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ার উপায় নেই। চলাচলে ভোগান্তি, গণপরিবহনে ভোগান্তি, গাড়ির জন্য কোথাও অপেক্ষা করবেন— সেই জায়গাটুকুও নেই, থাকলেও তা রয়েছে অন্য কারও দখলে।

Advertisement

এমন পরিস্থিতিতে নগরবাসীর একটু স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল নিশ্চিতে মানসম্পন্ন ও দৃষ্টিনন্দন অর্ধশতাধিক যাত্রী ছাউনি ও বাস স্টপেজ নির্মাণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরই মধ্যে ৪০টি যাত্রী ছাউনির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক মেগা প্রকল্পের আওতায় এগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুটি প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ৪০টি যাত্রী ছাউনির নির্মাণ শেষে চালু হয়েছে। যেগুলো অত্যন্ত যাত্রীবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন। প্রতিটি যাত্রী ছাউনির সামনে বাস স্টপেজ রয়েছে। ফলে এখন নির্ধারিত স্থান থেকেই যাত্রীরা বাসে ওঠা-নামা করতে পারছেন। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা যেমন কমে যাচ্ছে তেমনি রোদ কিংবা বৃষ্টিতে কাউকে দুর্ভোগেও পড়তে হচ্ছে না। উন্নত দেশগুলোর মতো এখানে রয়েছে টিকিট কাটার ব্যবস্থা। যদিও বাসমালিকরা এখনও টিকিট কাউন্টারগুলো চালু করতে পারেননি।

Advertisement

এছাড়া কেইস প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ সিটিতে আরও ১০টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোও দেখতে খুব সুন্দর। যাত্রীরা বসেও স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করছেন। বিশেষ করে রোদ বা বর্ষায় ছাউনিগুলো যাত্রীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করছে।

নিজস্ব অর্থায়নে দক্ষিণ সিটি এলাকায় নির্মিত যাত্রী ছাউনিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জনপথ, বাসাবো, মৌচাক, ইত্তেফাক, গুলিস্তান মসজিদ, গুলিস্তান স্টেডিয়াম কর্নার, মতিঝিল (জীবন বীমা), যাত্রাবাড়ী, বলদা গার্ডেন সংলগ্ন, রায়েরবাগ (উত্তর), রায়েরবাগ (দক্ষিণ), যাত্রাবাড়ী-ডেমরা রোড, বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির, শাহজাহানপুর, শনির আখড়া, শাহবাগ, নটর ডেম কলেজের সামনে আল-হেলালের পূর্ব পাশে, নটর ডেম কলেজের সামনের পশ্চিম পাশে, শাহজাহানপুর রেলওয়ে হাসপাতাল, আজিমপুর চৌরাস্তার উত্তর পাশে, আজিমপুর এতিমখানার সামনে, আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে, জিপিও-এর পশ্চিমে (মুক্তাঙ্গন), টিএন্ডটি (গোলাপ শাহ মাজার সিগন্যাল ক্রস করে দক্ষিণে), ভিক্টোরিয়া পার্ক, ভিক্টোরিয়া পার্কের মোড়ে, মতিঝিল জনতা ব্যাংক, টিকাটুলী ও চানখারপুলে।

এছাড়া কেইস প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ১০টি যাত্রী ছাউনির অবস্থান হলো- পল্টনের আজাদ প্রোডাক্ট ভবনের সামনে, মালিবাগ বাজারের পূর্ব পাশের রোড সাইডে, খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি, খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ির উল্টোপাশ, মালিবাগ রেলগেট, পান্থকুঞ্জ পার্ক, শাপলা চত্বরের পশ্চিম পাশে, বাংলামোটরের রূপায়ন টাওয়ারের সামনে, শাহবাগের ঢাকা ক্লাবের সামনে ও টিটি পাড়ার অতীশ দীপঙ্কর রোডে।

যাত্রী ছাউনির বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহম্মাদ সাঈদ খোকন বলেন, দুটি প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত বেশকিছু যাত্রী ছাউনি নির্মাণ শেষে চালু হয়েছে। যেগুলো অত্যন্ত যাত্রীবান্ধব ও দৃষ্টিনন্দন। প্রতিটি যাত্রী ছাউনির সামনে বাস স্টপেজ রয়েছে। যেখানে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে পারছেন।

Advertisement

‘নিরলস প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও সুষ্ঠু কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে নিতে কাজ করেছি। ঢাকাকে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করেছি সার্বিকভাবে। আশা করব, এসব কাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’

শুধু যাত্রী ছাউনি নয়, এর পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের কথা চিন্তা করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ৫৫টি স্বচ্ছ ট্রাফিক পুলিশ বক্সও নির্মাণ করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বাইরে থেকে এসব বক্সের ভেতরের কর্মকাণ্ড সহজেই দেখা যায়। এছাড়া পুলিশ বক্সগুলোর নির্মাণের ফলে সড়কে পথচারীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়েছে।

ট্রাফিক পুলিশ বক্সগুলোর অবস্থান- গোলাপবাগ ক্রসিং, মালিবাগ মোড় ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ, শান্তিনগর ক্রসিং, নাইটিঙ্গেল মোড়, ভিক্টোরিয়া পার্ক, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং, বানিয়া নগর ক্রসিং, পুরাতন পল্টন, বাবু বাজার ব্রিজ, বঙ্গভবনের সামনে, দৈনিক বাংলা ক্রসিং, আজিমপুর চৌরাস্তা, রাজধানী মার্কেট, বাংলাদেশ ব্যাংক, বঙ্গবাজার ফায়ার সার্ভিস, ফুলবাড়িয়া, ঢাকেশ্বরী ক্রসিং, টিটি পাড়া, সদরঘাট, খিলগাঁও রেলগেট, বেইলি রোড ক্রসিং, রায় সাহেব বাজার, বকশি বাজার ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, শাহজাহানপুর ক্রসিং পুলিশ বক্স, রাজারবাগ (পুলিশ লাইন-১), তাঁতি বাজার, সেকশন বেড়িবাঁধ ক্রসিং, গুলিস্তান (বঙ্গবন্ধু স্কয়ার), মগবাজার ক্রসিং, মৌচাক ক্রসিং, মালিবাগ রেলগেট ক্রসিং, ইত্তেফাক মোড়, গোলাপশাহ মাজার, বঙ্গবাজার, শিক্ষা চত্বর, কদম চত্বর, মৎস্য ভবন, জিরো পয়েন্ট, কাকরাইল মসজিদ, মিন্টো রোড, রূপসী বাংলা হোটেল ক্রসিং, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড বাটা সিগন্যাল, ল্যাব এইডের দক্ষিণ পাশ, নিউ মার্কেট, ফকিরাপুল ক্রসিং, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, জনপথ ক্রসিং, যাত্রাবাড়ী ক্রসিং, কুতুবখালী (শনির আখড়া), ধানমন্ডি, ধনমন্ডি কেএফসি সংলগ্ন ও জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড ট্রাফিক পুলিশ বক্স।

দক্ষিণ সিটি সূত্রে জানা গেছে, যানজট নিরসনে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ২০ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রোড মিডিয়ান নির্মাণ এবং ফুটপাতে ১৭ দশমিক ৮ কিলোমিটার গার্ড রেইল স্থাপন, ১০ কিলোমিটার রাস্তায় রোড মার্কিং, ১২২টি জেব্রা ক্রসিং ও ২২০টি ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা হয়েছে। ৭ কিলোমিটার রোড মিডিয়ানের সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। ২১৯ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার প্রতিবন্ধীবান্ধব ফুটপাত নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে।

অন্যদিকে নগরীর ৮টি স্থানে ৫৬০টি অনস্ট্রিট পার্কিং চালু করা হয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ৬টি কোম্পানির আওতায় ২২টি রুটে গণপরিবহন চালানোর জন্য বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ধানমন্ডি-নিউ মার্কেট-আজিমপুর, এয়ারপোর্ট-মতিঝিলসহ কয়েকটি রুটে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ৪০টি ট্রাফিক সিগন্যাল সচল করে এগুলোতে সোলার প্যানেল, কাউন্ট-ডাউন টাইমার ও অটো ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হয়েছে।

এএস/এমএআর/এমএস