অর্থনীতি

তামাকে সুনির্দিষ্ট করারোপে ৪-৯ হাজার কোটি বেশি রাজস্ব আয় সম্ভব

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি পোষাতে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ জরুরি। সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪ হাজার ১০০ কোটি থেকে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বেশি রাজস্ব আয় সম্ভব। যার হার বিড়ি ও সিগারেট থেকে প্রাপ্ত বর্তমান রাজস্বের চেয়ে অন্তত ১৪ শতাংশ বেশি। এছাড়া এতে প্রায় ২০ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ত্যাগে উৎসাহিত হবেন।

Advertisement

রোববার (১০ মে) সকালে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এ দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী। বক্তব্য রাখেন নীলফামারী-৩ আসনের এমপি রানা মোহাম্মদ সোহেল, বগুড়া-৩ আসনের এমপি মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, সংরক্ষিত আসনের এমপি অধ্যাপক মাসুদা এম. রশীদ চৌধুরী ও নাজমা আকতার।

সংসদ সদস্যরা একটি সময়োপযোগী তামাক-কর ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দ্রিষ্ট কর আরোপের পক্ষে নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

Advertisement

এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক এবং সঞ্চালনা করেন দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।

এ সময় বক্তারা বলেন, ত্রুটিপূর্ণ কর ব্যবস্থার কারণে প্রতিবছর তামাক কোম্পানির ক্রমবর্ধমান মুনাফা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এনবিআর প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থে তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের কথা বলা হয়েছে। ফলে সিগারেটেও সুনির্দিষ্ট করারোপে কোনো অসঙ্গতি বা জটিলতা নেই।

বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম তামাক ব্যবসাবান্ধব দেশ। এ পরিস্থিতি বজায় থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাক মুক্ত করার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, সে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। ফলে আসন্ন বাজেটেই সব ধরনের তামাক পণ্যে বহু স্তরভিত্তিক কর পদ্ধতি বাদ দিয়ে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। এতে সরকার যেমন বাড়তি রাজস্ব পাবে, তেমনি তরুণদেরও তামাক পণ্য থেকে দূরে রাখা যাবে। পাশাপাশি একটি গ্রহণযোগ্য কর ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য একটি যুগোপযোগী তামাক-কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

তামাক কোম্পানি প্রতিবছর বিপুল টাকা কর প্রদান করছে বলে যা দেখানো হয়, তা আসলে ভ্যাট ও সম্পূরক কর বাবদ আদায় করা টাকা। এই টাকা পরিশোধ করে জনগণ, তামাক কোম্পানি নয়। তামাক কোম্পানি আয়কর বাবদ যা পরিশোধ করে তা কর বাবদ মোট আদায়কৃত করের ৩ শতাংশ মাত্র। বিগত অর্থ বছরে তামাক কোম্পানির কাছ থেকে কর বাবদ আদায় করা হয় মোট ২২ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। যার মধ্যে আয়কর মাত্র ৮১৬ কোটি টাকা, যা তামাক কোম্পানি পরিশোধ করেছে। বাকি ২১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা জনগণ পরিশাধ করেছে বলেও দাবি করেন বক্তারা।

Advertisement

ধোঁয়াবিহীন তামাকের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, জর্দা, গুল, সাদাপাতা উৎপাদনকারী অধিকাংশ কোম্পানির তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে নেই। ফলে তারা কর আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) সম্মিলিতভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব গভার্নেন্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের অধ্যাপক ড. নাসিরুদ্দীন আহমেদ, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব খায়রুল আলম সেখ, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দীন আহমেদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ড. সৈয়দ মাহফুজুল হক এবং যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা । এছাড়াও তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতৃবৃন্দ এ ওয়েবিনারে অংশ নেন।

পিডি/এমএফ/এমকেএইচ