একটা সময় ট্রেড লাইসেন্স-গৃহকর পরিশোধে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হতো নগরবাসীকে। সেই সঙ্গে ছিল নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিও। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। দুর্নীতি ও ভোগান্তি রোধে অনলাইনে ই-ট্রেড লাইসেন্স ফি ও হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। যে কারণে ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়ে কাউকে আর উৎকোচ দিতে হচ্ছে না। আবার ঘরে বসেই নিজের হোল্ডিং রেজিস্ট্রেশন ও ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারছেন। ঝামেলাহীন এই পদ্ধতির কারণে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।
Advertisement
অনলাইন পদ্ধতির সঙ্গে করদাতাদের সংযুক্ত করতে প্রতি বছর পৌরকর মেলারও আয়োজন করে আসছে ডিএসসিসি। উদ্বোধনের পর থেকে গত দুই বছর ধরে এই পদ্ধতিতে ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। ফলে নগরবাসীকে ট্রেড লাইসেন্স ও গৃহকর পরিশোধে ব্যাংক কিংবা নগর ভবনে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না। ঘরে বসেই মোবাইল ফোন বা ব্যাংকিং পদ্ধতির মাধ্যমেই ট্যাক্স বা ফি পরিশোধ করা যাচ্ছে। গ্রাহকের দেয়া মোবাইল ফোন নম্বর বা ই-মেইলে চলে যাচ্ছে লাইসেন্স বা ফি পরিশোধের রশিদ। পাশাপাশি নাগরিকদের জন্ম-মৃত্যু ও ওয়ারিশ সনদও অনলাইন পদ্ধতিতে করা হয়েছে।
জানা গেছে, ডিএসসিসি বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর এসব উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মেয়র সাঈদ খোকন ২০১৭ সালের নভেম্বরে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের এ অনলাইন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। সেই সময় থেকে এই কার্যক্রমের আওতায় যে কেউ ঘরে বসে নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ, নবায়ন ও বাসাবাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারছেন।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডিএসসিসিতে অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন পড়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ৮২টি। এর মধ্যে সঠিক কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর এক লাখ ৪২ হাজার ৩৯১টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে। এ থেকে সিটি করপোরেশনের আয় হয়েছে ৪৮ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৯ টাকা।
Advertisement
অপরদিকে এক লাখ ৪৩ হাজার ৬০১ হোল্ডিং মালিক অনলাইনের মাধ্যমে তাদের ট্যাক্স পরিশোধ করেছেন। এছাড়া আরও বিপুলসংখ্যক হোল্ডিং মালিক ব্যাংকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর নাগরিক সেবায় অনিয়ম রোধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এজন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় সব কাজ ডিজিটালাইজেশন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করেছি। এর আগে দেখা গেছে, হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে এসে নাগরিকদের ব্যাংকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তি পোহাতে হতো। কিন্তু এখন নাগরিকরা স্বাচ্ছন্দ্যে রেভিনিউ অটোমেশন সেবা ও ই-ট্রেড লাইসেন্স সেবা নিতে পারছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ব্যবসায়ী হামিদুর রহমান বলেন, আগে একটি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হত। এই খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির পাশাপাশি ভোগান্তিও ছিল সীমাহীন। কিন্তু এখন অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ এবং ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়টি নগরবাসীদের স্বস্তি এনে দিয়েছে।
অনলাইনে যেভাবে এসব সেবা পাওয়া যাবে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে হলে প্রথমে erevenue.dscc.gov.bd অথবা erevenue.gov.bd লিংকে প্রবেশ করতে হবে। এরপর গ্রাহকের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফরম আসবে। গ্রাহকের মোবাইল নম্বর, ই-মেইলসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এরপরই হোল্ডিং নম্বর সম্পর্কিত ফরম আসবে। সেখানে হোল্ডিংয়ের যাবতীয় তথ্য যুক্ত করার পর কী পরিমাণ হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া আছে সে বিষয়ে তথ্যাদি চলে আসবে। ট্যাক্স পরিশোধ করতে চাইলে পরিশোধ অপশনে গিয়ে গ্রাহক তার ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য যুক্ত করবেন। এরপরই মোবাইলে মেসেজ চলে আসবে কার্ড থেকে তার কত টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ কাটা হয়েছে। এ ছাড়া বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও ফি পরিশোধ করা যাবে।
Advertisement
একইভাবে অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করতে হলে প্রথমেই etradelicence.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে ঢুকলেই একটি নিবন্ধন ফরম পাওয়া যাবে। সেখানে নাম, মোবাইল ফোন নম্বর, ই-মেইল, ব্যবসার ধরণসহ কিছু তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। একটি নিবন্ধন নম্বরও পাওয়া যাবে। সেটা সাবমিট করলে আরেকটি ফরম আসবে। সেখানেও চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর যুক্ত করতে হবে। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র স্ক্যান করে যুক্ত করতে হবে। এরপর তা সাবমিট করলে একটি মেসেজ যাবে গ্রাহক ও সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজস্ব ইন্সপেক্টরের (রাজস্ব পরিদর্শক) মোবাইলে।
রাজস্ব পরিদর্শক কাগজপত্র যাচাই করার পর একটি ফিরতি মেসেজ যাবে সেবাগ্রহীতার মোবাইল ফোন ও ই-মেইলে। ফিরতি মেসেজে ফি’র পরিমাণ ও জমা দেয়ার বিষয়ে অবহিত করা হবে। সেখানে ফি জমা দেয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জানিয়ে দেয়া হবে। এরপর ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংকে গিয়ে ফি পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া বিকাশ, রকেট বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও টাকা পরিশোধ করা যাবে। লাইসেন্স সুপারভাইজার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে সঙ্গে সঙ্গে একটি সফট ই-ট্রেড লাইসেন্স চলে যাবে সেবাগ্রহীতার ই-মেইলে। এছাড়া জন্ম-মৃত্যু এবং ওয়ারিশ সনদও অনলাইন পদ্ধতিতে চালু করা হয়েছে।
ডিএসসিসির হোল্ডিং ট্যাক্স এবং ট্রেড লাইসেন্স প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে জানান, হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে অতীতে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। কেউ সেবা নিতে গেলেই ভোগান্তির শিকার হতেন। যে কারণে মেয়রের নির্দেশে এই সেক্টরটি অনলাইন সেবার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সিস্টেমটাও অনেক সহজ। ঘরে বসেই সব করা যায়। আগে এই লাইসেন্সকে ঘিরে একটি অসাধু চক্র গড়ে উঠেছিল। কিন্তু এখন সেই সুযোগ আর নেই। এছাড়া আগে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধে করদাতাদের অনীহা ছিল। তার ওপর অনিয়ম ও দুর্নীতি তো হতোই। যে কারণে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর অনলাইন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বর্তমানে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হচ্ছে। ঘরে বসেই ট্যাক্স পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। এতে করে নগরবাসীরাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
এএস/এমএফ/এমকেএইচ