‘এমন অভিজ্ঞতা হবে জানলে বাসায় মরে যেতাম তবুও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে যেতাম না।’
Advertisement
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন রোগীদের ক্ষেত্রে ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে এমন অভিজ্ঞতা দৈনিক সময়ের আলোর রিপোর্টার আব্দুল্লাহ আল মামুনের। মামুন কয়েকদিন যাবৎ জ্বর-সর্দি-কাশি আর শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এই অবস্থায় সবাই তাকে করোনা পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। তবে পরীক্ষার ফলাফল আসার আগেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় মামুনের। পরিবার ও সহকর্মীদের পরামর্শে শনিবার (৯ মে) সকালে তিনি ঢামেকে যান। কিন্তু ‘তিক্ত অভিজ্ঞতার’ কারণে রাতেই আবার বাসায় ফিরে যান মামুন।
সহকর্মীদের কাছে ফেসবুক গ্রুপে ঢামেকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মামুন লিখেছেন-‘আসসালামু আলাইকুম। জানি সবাই ভালো আছেন। আমি হাসপাতালে যাওয়ার পর থেকে আপনারা আমার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রেখেছেন এজন্য কৃতজ্ঞ। তবে সত্যি বলতে কি, এমন অভিজ্ঞতা হবে জানলে বাসায় মরে যেতাম তবুও হাসপাতালে যেতাম না। হাসপাতালে যাওয়ার পর ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ ভাইয়ের কাছে পরিচয় দেয়ার পর উনি মোটামুটি ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু ভর্তির সামগ্রিক কাজ শেষ হতে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বেজে যায়।
সাড়ে তিনটা বাজে এ দরজা ও দরজা হয়ে তিনতলায় পাঠালেন। তিনতলায় যাওয়ার পর বলা হল চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ফাইল দেখিয়ে নিয়ে আসতে। পরে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে ফাইল দেখালাম। এর পরে আসলাম আবার নার্সের কাছে। আমি কোন রুমে থাকবো সেটা জিজ্ঞেস করতে। নার্স একটি রুম দেখিয়ে বললেন একটা বেডে গিয়ে থাকতে। কিন্তু সেই রুমটিতে যাওয়ার পর দেখি কোনো বেড ফাঁকা নেই । আমি আবার এসে নার্সকে বিষয়টি জানালাম। নার্স আমাকে বললেন কিছুক্ষণ পর বেড ফাঁকা হবে । অর্থাৎ ওই রুমে ১০ থেকে ১২টি বেড আছে, কিছুক্ষণের মধ্যে দুই-একজন রোগী মারা যাবেন তখন বেড ফাঁকা হবে। নার্সের কথা সত্যি হতে বেশি সময় লাগেনি। আমি আধা ঘণ্টার মত বাইরে এ দরজায় ও দরজায় ওয়েট করতে করতে দুজন মারা যান। তখন নার্স আমাকে বলেন, ওই যে দুজন মারা গেছেন তাদের কোনো একজনের বেডে গিয়ে ওঠেন। সবচাইতে অবাক করার বিষয় হল, একটি বেডে প্রসাব করে রেখেছে এবং সেখানে আজকের মধ্যে কোনো চাদর দেয়া হবে না। আরেকটি বেডের অবস্থাও একই। সেখানেও কোনো চাদর দেয়া হবে না। আমাকে এভাবেই থাকতে হবে। আগামীকাল পরিষ্কার চাদর আসলে আমাকে দেয়া হবে। এমনকি বেডগুলোতে কোনো জীবাণুনাশকও ছেটানো হয়নি। তখন আমি নার্সকে বললাম এই অবস্থায় কিভাবে ওই বেডে থাকবো যেখানে চাদর পর্যন্ত নেই। তখন নার্সরা বললেন, আমাদের কিছু করার নাই। চাদর না আসা পর্যন্ত আপনাকে দেয়া যাবে না। এভাবেই আজকে রাত থাকতে হবে। আমি শেষমেষ বাধ্য হয়ে প্রস্রাবে ভেজা ওই বেডে না থেকে বাসায় ফিরে আসি।
Advertisement
এমন বাস্তবতার মুখোমুখি আর কোনো সাংবাদিক ভাই হয়েছেন কিনা আমি জানিনা। আমরা অন্তত আর কোনো সাংবাদিককে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির জন্য পরামর্শ না দেই। সবার জন্য শুভকামনা। আরও অনেক কিছু লেখার ছিল। সারাদিন শরীরের উপর অনেক ধকল যাওয়ায় আর পারলাম না। ভবিষ্যতে অনেক বিস্তারিত লিখবো।”
মামুনের এ অভিজ্ঞতার বিষয়ে ঢামেকের বার্ন ইউনিটের (অস্থায়ী করোনা ইউনিট) নার্স ইনচার্জ দীপুর সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘এটা তো খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বিষয়টি কারা করেছে কেন করেছে আগামীকাল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ঢামেকের বার্ন ইউনিটের (অস্থায়ী করোনা ইউনিট) নার্স ইনচার্জ দীপুকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
এআর/এইচএ/এমএস
Advertisement