ফিচার

পথে-ঘাটে মায়ের নামে কত প্রতিষ্ঠান!

এক অক্ষরের একটি শব্দ ‘মা’। যেখানে জড়িয়ে আছে আবেগ-ভালোবাসা-ভালো লাগা। এই একটি শব্দের ছোঁয়ায় এসে শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে শব্দরা। কবির রাফখাতা থেকে শুরু করে মোড়ের ভাতের হোটেলের সাইনবোর্ড পর্যন্ত কোথায় নেই শব্দটি? তারই ধারাবাহিকতায় এবার মাকে নিয়ে লিখেছেন রনি রেজা-

Advertisement

একজন কবি-সাহিত্যিক সারাজীবনে যত রচনাই লিখুক, যে বিষয়েই লিখুক, মাকে নিয়ে তার কোনো না কোনো লেখা থাকবেই। গীতিকারও যেন মাকে নিয়ে গান লেখার আগ পর্যন্ত পূর্ণতা পান না। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘যেখানেতে দেখি যাহামা-এর মতন আহাএকটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,মায়ের মতন এতআদর সোহাগ সে তোআর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!’

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাত্র ১৩ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছেন। মায়ের কথা তার স্মৃতিতে খুব বেশি কিছু থাকার কথা নয়। তিনিও মাকে নিয়ে রচনা করেছেন অনেক কবিতা, গান। বিশ্বকবির লেখা যে কবিতাটি শিশুকালেই আমাদের স্মৃতিতে স্থান করে নিয়েছে, সেটি হলো ‘বীরপুরুষ’ কবিতা। সেখানে কবি লিখেছেন,‘মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরেমাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরেতুমি যাচ্ছ পাল্কিতে মা চড়েদরজা দুটো একটু ফাঁক করেআমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ’পরেটগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।’

শুধু কবি-সাহিত্যিক নন, মাকে সম্মানিত করার প্রয়াস সব যুগে, সব শ্রেণির ভেতরই লক্ষণীয়। চলতে-ফিরতে মায়ের নাম সম্বলিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানও কম চোখে পড়ে না। ‘মা হোমিও হল’, ‘মাতৃভান্ডার মিষ্টির দোকান’, ‘মায়ের দোয়া ভাতের হোটেল’, ‘মা বস্ত্রালয়’, ‘মায়ের আশীর্বাদ পরিবহন’- কী নেই মায়ের নামে? এই আজ বিশ্বব্যাপী ‘মা দিবস’ পালিত হচ্ছে। এর পেছনেও রয়েছে সৃষ্টিশীল ইতিহাস।

Advertisement

জানা যায়, ১৮৭০ সালে আমেরিকার জুলিয়া ওয়ার্ড নামের এক গীতিকার মা দিবস পালনের জন্য প্রথম দাবি তোলেন। তিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় একটি দেশাত্মবোধক গান লিখেছিলেন। গানটি সে সময় বেশ জনপ্রিয় হয়। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের সময় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছিল। এক মায়ের সন্তান আরেক মায়ের সন্তানকে হত্যা করছিল। এসব হত্যাযজ্ঞ দেখে জুলিয়া খুব ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি এটা বন্ধ করার জন্য আমেরিকার সব মাকে এক করতে চাচ্ছিলেন। এ কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করতে চাচ্ছিলেন। দিবসটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের কাছে প্রচুর লেখালেখি করেন।

মা দিবস পালনের রীতিকে সাংগঠনিক ভিত্তি দেন আনা জার্ভিস নামের যুক্তরাষ্ট্রের আরেক নারী। তার মা অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলছিলেন। ১৯০৫ সালে মা মারা গেলে মেয়ে আনা জার্ভিস মায়ের স্মৃতি রক্ষায় সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম দিনটি মাতৃ দিবস হিসেবে পালন করেন।

১৯০৭ সালের এক রোববার আনা জার্ভিস স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা।

আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও মাতৃভক্তি গানগুলো প্রেরণা জুগিয়েছিল। এখনো জোগাচ্ছে-‘মাগো ভাবনা কেনআমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে;তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানিতোমার ভয় নেই মা-আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।।’

Advertisement

গানটি শুনলে এখনো শরীরের ভেতর আলাদা গতি কাজ করে। উদ্যম ফিরে পায় বাংলা মায়ের সন্তানেরা। তাই তো মা বিরাজ করেন সবখানে। অন্তরে-বাহিরে, পথে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, যুদ্ধে-শান্তিতে মায়ের পরশ উপলব্ধি করি সব সময়।

লেখক: কবি ও কথাশিল্পী।

এসইউ/এমএস